জীবিকার তাগিদে অনেক স্বপ্ন নিয়ে দুবাই পাড়ি জমিয়েছিলেন শাহিন আলম ও তার ছেলে নাইম হোসেন। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস- প্রতারকের ফাঁদে পড়ে শুধু সর্বস্ব হারাতেই হয়নি, নির্মম নির্যাতনের শিকারও হতে হলো তাদের। জানা যায়, দেশটির এক হোটেকে আটকে মারধর ও হত্যার ভয়-ভীতি দেখিয়ে পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ হিসাবে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র।
ভুক্তভোগী শাহিন আলম সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সলপ গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে।
শাহীন আলম উল্লাপাড়া মডেল থানা ও স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে দেওয়া অভিযোগে বলেন, চলতি বছরের শুরুতে উপজেলার দাদপুর গ্রামের নূর ইসলামের ছেলে মো. মুস্তাকিন ও মোকসেদ ফকিরের ছেলে আরফান হোসেন তার আগের পরিচয়ের সূত্র ধরে চাকরির কথা বলেন। মুস্তাকিন ও আরফান দুজনেই দুবাইতে কাজ করেন। তারা দুজনেই গত ফেব্রুয়ারি (২০২২) তাদের বাড়িতে আসেন। ওই সময় শাহিন আলমকে দুবাই এবং তার ছেলে নাইমকে পোল্যান্ডে চাকরি দেবেন বলে উভয়পক্ষের মধ্যে মোট ১১ লাখ টাকার চুক্তি হয়।
চুক্তি মোতাবেক এই দুই ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে শাহিন আলম প্রথম দফায় তাদের গ্রামের বাড়িতে দাদপুরে ছয় লাখ টাকা দেন। বলা হয়, দুজন চাকরি পেলে বাকি পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে। এই চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে শাহীন আলম ও তার ছেলে নাঈম ৩০-০৬-২০২২ তারিখে দুবাই যান। সেখানে প্রতারক চক্রের সাজানো একটি হোটেলে অবস্থান করে। শাহীন ও নাঈমকে ওই হোটেলে জোর করে আটকে রেখে মার’ধর ও নি’র্যা’তন’ করে মুস্তাকিন বাহিনী। ‘নির্যা’ত’ন থেকে বাঁচাতে শাহীন আলমের গ্রামের বাড়ি থেকে মুস্তাকিনের বাবা ও তার পরিবারের সদস্যদের মুক্তিপণ হিসেবে বাকি ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়।
শাহীন আলম বলেন, টাকা পাওয়ার পর মুস্তাকিন ও তার লোকজন তাদের ছেড়ে দেয়। এ অবস্থায় শাহীন ও তার ছেলে দুবাইয়ে কর্মরত কয়েকজন বাংলাদেশির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মানবিক কারণে ওই ব্যক্তিরা ১৯ আগস্ট শাহীন আলম ও নাঈমকে বাংলাদেশে পাঠায়। বাড়ি ফিরে শাহীন মুস্তাকিনের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা, ভাই ও পরিবারের লোকজনকে মুস্তাকিনের কর্মকাণ্ডের কথা জানায় এবং টাকা ফেরত চায়।
শাহিন আলম কয়েকবার দাদপুরের বাড়িতে যান। কিন্তু মুস্তাকিনের বাবা নূর ইসলাম ও তার পরিবারের সদস্যরা টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করে এবং তাদের বাড়িতে টাকা চাইলে মারধরের হুমকি দেয়। শাহিন আলম দুদিন আগে প্রতারক মুস্তাকিন ও আরফান হোসেনসহ তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে উল্লাপাড়া থানায় একটি অভিযোগ দিয়ে প্রতারকদের গৃহীত ১১ লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার আবেদন করেন।
এ ব্যাপারে দুবাইয়ে আসামি মুস্তাকিন ও আরফান হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাদের ফোন নম্বর পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানানো হয়। পরে মুস্তাকিনের বাবা নূর ইসলামের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, তার ছেলে শাহীন আলমের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে কি না তা তিনি জানেন না।
এদিকে এ বিষয়ে উল্লাপাড়া মডেল থানার এসআই আব্দুস সালামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংবাদ মাধ্যমকে এ বিষয়ে এখনো পুরোপুরি ভাবে অবগত নন বলে জানান তিনি। তিনি জানান, অভিযোগে আলোকে মস্তাকিন ও আরফানের বাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি। তবে প্রতারণার মাধ্যমে কারো কাছ থেকে টাকা নিয়েছে কিনা, তা এখনো জানা যায়নি। তবে তদন্ত চলছে বলে জানান তিনি।