বাংলাদেশের প্রবাসী আয় এবং রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার কারনে রিজার্ভ এর অর্থ খরচ করতে হচ্ছে এবং রিজার্ভের অর্থ কি খাতে খরচ হয়েছে সে বিষয়ে জানিয়েছন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের রিজার্ভের বিষয় নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন লেখক ফাইয়াজ তায়েব আহমেদ। নিচে সেটি তুলে ধরা হল –
রিজার্ভ বাড়িয়ে দেখানো, খেলাপি ঋণ কমিয়ে দেখানো, জিডিপি স্ফীত দেখানোর হিসাব পদ্ধতি, মূল্যস্ফীতি লুকানো, বাংলাদেশ ব্যাংককে দিয়ে সরকারি বন্ড কিনিয়ে টাকা ছাপানো, ইন্টারেস্ট ক্যাপের ভুল নীতি প্রত্যেকটা খাতে আজকে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে। এই দায় অবশ্যই সরকারের। প্রতিষ্ঠানিক অবক্ষয় ঘটতে দিয়ে সরকার ‘লার্জ স্কেইলে’ ‘মিথ্যা সংখ্যা উৎপাদন’ করে প্রায় সবখানেই পরিসংখ্যানগত জালিয়াতি করিয়ে নিয়েছে। এতে ‘অর্থনীতির পরিসংখ্যান সূচক’ ভাল দেখিয়ে বিস্তর ‘উন্নয়ন উন্নয়ন খেলা’ দেখানো গেছে!
বিবিএসের সঙ্গে বৈঠকে মূল্যস্ফীতি ও জিডিপি গণনার হিসাবপদ্ধতি সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। শুধু তাই নয়, পরিবর্তন করতে হবে রিজার্ভ গণনার হিসাব পদ্ধতিও। খেলাপি ঋণে ক্যালকুলেশান সহ আরও অনেক কিছু। রিজার্ভ থেকে উন্নয়ন প্রকল্পে দেয়া রীতিবিরুদ্ধ ঋণ দেয়া বন্ধ করতে বলেছে। রিজার্ভ দিয়ে করা রপ্তানি উন্নয়নের পাচার সহায়ক তহবিলের আকারও ছোট করতে বলা হয়েছে। ভুল জায়গায় কর অব্যাহতি ও ব্যাংকে আমলা পরিচালক কমাতে বলেছে আইএমএফ। তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতে ভর্তুকি কমাতে বলেছে, আশাকরি বিদ্যুৎ খাতে দেয়া ৯০ হাজার কোটি টাকার ক্যাপাসিটি চার্জের হিসেবেও সরকার গরমিল দেখায়নি সরকার! এটা বুঝি! আমাদের কাছে তথ্য লুকালেও বিদেশিদের কাছে তথ্য লুকানোর সময় ফুরিয়ে গেছে। সর্বশেষ আদম শুমারিতে কয়েক কোটি মানুষ গায়েবের বিষয়টাও হয়ত সামনের দিনে আলোচনার টেবিলে আসবে। জিডিপি বাড়িয়ে, মানুষ কমিয়ে- মাথাপিছু আয়ের মিথ্যা তৈরির প্রকল্পেও ভাটা পড়বে, এবং এইটা জরুরিও!
হ্যাঁ, এই প্রত্যেকটা জালিয়াতির বিষয়ে দেশের কয়েকজন মাত্র অর্থনীতিবিদ লিখেছেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেও দেশের প্রধানতম পত্রিকায় তথ্য বিভ্রাট, তথ্য বিস্ময় ও পরিসংখ্যান জালিয়াতি নিয়ে অনেক লিখেছি। ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও বাংলাদেশ’, ‘বাংলাদেশ: অর্থনীতির ৫০ বছর’ এবং ‘অপ্রতিরোধ্য উন্নয়ন অভাবনীয় কথামালা’ বইতে আমি বাংলাদেশের ডেটা কোয়ালিটি নিয়ে অনেক লিখেছি। কে শুনে কার কথা! আজকে নাকে খত দিয়ে সরকার ‘বিদেশের ঠাকুরদের’ প্রেসক্রিপশন মানতে বাধ্য হচ্ছে। হায়রে ঋণ!
এটা লজ্জার ব্যাপার যে, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিবিএস এর মত বড় বড় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ‘পরিসংখ্যানগত জালিয়াতি’ এবং ‘আন্তর্জাতিক রীতিনীতি বিরুদ্ধ হিসাব পদ্ধতি’ বিষয়ে আইএমএফ এর ভিনদেশী প্রতিনিধি দলের কাছে ধরা পড়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ‘উন্নয়ন সূচক’ আন্তর্জাতিক প্রাঙ্গনে আরেক দফা প্রশ্নের মুখে পড়বে। সরকারের পাশাপাশি বৈধতার সংকটে আমাদের পরিসংখ্যান এবং উন্নয়ন সূচকও। সাথে সাথে দেশে অর্থনীতিবিদদের ‘কোয়ালিটি’ নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার কি নিদারুণ হীনমান্যতা।
আজকে, রাষ্ট্রীয় সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান গুলোকে নাকানি-চুবানি খাইয়ে, দেশের ভাবমূর্তি লেজেগোবরে পরিস্থিতিতে নিয়েও সরকারের ঋণটা দরকার।নাকে ক্ষত দিয়ে হলেও সরকারের ঋণ চাই।
সমস্যা হচ্ছে, ‘উন্নয়ন বাড়িয়ে দেখানোর’ রাজনৈতিক প্রকল্পে সরকারের ইচ্ছাকৃত তৈরি পরিসংখ্যানগত জালিয়াতির দায়ভার পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিবিএস এর মত প্রতিষ্ঠান এবং আমলাদের উপর। সরকারের অর্থ পরিকল্পনা বাণিজ্য শিল্প মন্ত্রীরা কেউ নেই আইএমএফ নেগসিয়েশান ফেইজে। আশা করি প্রতিষ্ঠান গুলো অন্যের আদেশে নিজের হাতে তৈরি গর্ত নিয়ে ভাববে।
একদিকে মন্ত্রীরা পরস্পরবিরোধী নীতি কৌশলের জন্য বিব্রত হয়ে, আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সামনে যাচ্ছে না। সংকটে বুঝতে পারা প্রধানমন্ত্রীও অযোগ্য মন্ত্রীদের উপর আস্থা রাখতে পারছেন না। অন্যদিকে আছে নাকেখত দেয়া নেগোসিয়েশানের শর্ত লীক হয়ে যাবার ভয়। সরকার তো নয়! যেন ভিনদেশি গুপ্তচর ও গোলামের হাট বসেছে মন্ত্রীপাড়ায়!
স্বৈরশাসন সংকটে পড়লে শাসক ‘দেশ পরিচালনা’কে আর এঞ্জয় করেন না।