Monday , May 20 2024
Breaking News
Home / Crime / ইউপি চেয়ারম্যানের উপাধি যখন ‘বালুখেকো’

ইউপি চেয়ারম্যানের উপাধি যখন ‘বালুখেকো’

চাঁদপুরের স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. সেলিম খান( Md. Selim Khan ) গত( Past ) আট বছর ধরে পদ্মা( Padma )-মেঘনার মোহনায় ২৪ ঘণ্টা ধরে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছেন৷ জনস্বার্থে নৌপথ সচল রাখার কথা বলে বাণিজ্যকভাবে বালু উত্তোলন করায় শহর রক্ষা বাঁধসহ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জাতীয় মাছ ইলিশের প্রজনন।

সরেজমিনে দেখা যায়, চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন থেকে মেঘনা নদী( Meghna river ) পেরিয়ে পদ্মা( Padma )র পেটে রাজরাজেশ্বর এলাকার ডুবোচরে ৬৭ টি ড্রেজার অবস্হান করছে। কিছু ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে, আর কিছু বসিয়ে রাখা হয়েছে। বালুবোঝাইয়ের( Sandblasting ) পর বাল্কহেডগুলো নিজ নিজ গন্তব্যে রওনা করছে।

চাঁদপুর জেলার সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জনস্বার্থে নৌপথ সচল করার কথা বলে সরকারি বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বালু তুলছেন সেলিম খান। বর্তমানে ছোট ও বড় প্রতিটি ড্রেজার দিয়ে দিনে ২০ থেকে ৪০ হাজার ঘনফুট বালু ও মাটি তোলা হচ্ছে। প্রতিটি ড্রেজারে ২০ হাজার ঘনফুট তোলা হলে ২০০ ড্রেজারে দিনে বালু উঠছে ৪০ লাখ ঘনফুট। মাসে তোলা হচ্ছে ১২ কোটি আর বছরে ১৪৪ কোটি ঘনফুট বালু।

ড্রেজার ও বালুর ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, পদ্মা( Padma ) ও মেঘনা নদী( Meghna river ) থেকে তোলা বালু বর্তমানে প্রতি ঘনফুট বিক্রি হচ্ছে আড়াই থেকে তিন টাকা। আড়াই টাকা হিসাবে দুই নদী থেকে দিনে এক কোটি টাকার বালু বিক্রি হচ্ছে। এ হিসাবে মাসে বালু বিক্রি হচ্ছে ৩০ কোটি টাকার। বছরে এই টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৬০ কোটিতে। ২০১৫ সাল থেকে এই টাকার একটি কানাকড়িও সরকারের( government ) ঘরে যাচ্ছে না। গত( Past ) আট বছরে কমবেশি ২ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা সেলিম খানের( Selim Khan ) পকেটে ঢুকেছে।

চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষ্য, সেলিম খান উচ্চ আদালতে একটি রিট মামলা দেখিয়ে নদী থেকে আগ্রাসী কায়দায় বালু তুলছেন।

জেলা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি ও চাঁদপুর জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ( Anjana Khan Majlish ) বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের( 'Water Development Board ) প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, যে পদ্ধতিতে বালু তোলা হচ্ছে, তা বিজ্ঞানসম্মত নয়। এতে নদীর বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। দুই পাড় ভেঙে যাচ্ছে।’ এসব বিষয় উল্লেখ করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন( National River Protection Commission ), পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়( Ministry Water Resources ) ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে তিনি চিঠি দেবেন।

সেলিম খান যে পদ্ধতিতে বালু তুলছেন, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অনুসারে তা নিষিদ্ধ। এই আইন বলছে, নদীতীর ভেঙে যেতে পারে এবং মৎস্য ও জলজ প্রাণী বা উদ্ভিদ বিনষ্ট হলে বা হওয়ার আশঙ্কা থাকলে সেখান থেকে বালু ও মাটি তোলা নিষিদ্ধ।

সেলিম খানের( Selim Khan ) পরিচয়

গত( Past ) এক দশকের বেশি সময় ধরে চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর( Lakshmipur ) মডেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম খান। বর্তমানে তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগেরও( Awami League ) সভাপতি। সর্বশেষ গত( Past ) বছরের ফেব্রুয়ারিতে( February ) অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে ৯ জন সদস্যসহ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন তিনি।

ওই ইউনিয়নের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, সেলিমের( Selim ) পারিবারিক অবস্থাও তেমন সচ্ছল ছিল না। ২০০৯ সালে( ) আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে জেলা বিএনপির( BNP ) প্রভাবশালীদের সঙ্গে ওঠাবসা করতেন তিনি। এর আগে জাতীয় পার্টির( national party ) রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন।

জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, ২০০৯ সালে( ) আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির( Dipu Monir ) সঙ্গে সখ্য তৈরি করেন সেলিম খান। এর পর থেকেই ধীরে ধীরে বালু তোলার একচ্ছত্র সম্রাট বনে যান সেলিম। উল্লেখ্য, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি চাঁদপুর–৩( Chandpur-3 ) (সদর–হাইমচর( Sadar-Haimchar )) আসনের সাংসদ।

সম্প্রতি লক্ষ্মীপুর( Lakshmipur ) ইউনিয়নে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের( Chandpur University Science Technology ) জন্য জমি অধিগ্রহণে সেলিম খানের( Selim Khan ) নাম নতুন করে আলোচনায় আসে। অভিযোগ উঠেছে, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তাব করা জায়গার বড় অংশটি নামে-বেনামে কিনে নেন তিনি। এসব জমির দলিল করতে গিয়ে মৌজা দরের চেয়ে ২০ গুণ বেশি মূল্য দেখানো হয়েছে। সরকারের( government ) কাছ থেকে কৌশলে বিপুল টাকা হাতিয়ে নেওয়াই এর কারণ। যাঁদের কাছ থেকে জমি নেওয়া হয়েছে, তাঁরা নামমাত্র টাকা পেয়েছেন বলে অভিযোগ।

বালুর ব্যবসায় নামার পর সেলিম খানের( Selim Khan ) বিপুল সহায়-সম্পত্তি নিয়ে এলাকায় নানা কথা প্রচার আছে। বালুমহালের টাকা দিয়ে সিনেমায় লগ্নি করেছেন তিনি। এরই মধ্যে তাঁর প্রযোজিত একাধিক সিনেমা মুক্তিও পেয়েছে।

২০১৯ সালে( ) দেশব্যাপী ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানকালে সেলিমের( Selim ) নাম আলোচনায় আসে। যুবলীগ( Juba League ) ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী( Ismail Hossain Chowdhury ) ওরফে সম্রাটের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সেলিম কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।

স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার স্বেচ্ছাচারিতা আর ক্ষমতার অপব্যবহারের ফলে সমগ্র এলাকাবাসী বা সেই অঞ্চলে প্রায় সকল সাধারণ মানুষের ভোগান্তি সৃষ্টি হওয়া নতুন কোনো ঘটনা নয়। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে আইনানুগ ব্যবস্হা গ্রহণ করা হবে এটাই প্রত্যাশা থাকলো৷

About Ibrahim Hassan

Check Also

আবারও মুখোমুখি সানভী’স তনি, বেরিয়ে এলো প্রতারণার রহস্য!

অনলাইনে নারীদের পোশাক বিক্রির আলোচিত প্রতিষ্ঠান সানভী’স বাই তনির কাছে লাখানি কালেকশন নামের প্রতিষ্ঠানটি পাকিস্তানি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *