সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে মানুষ নিজেদের শখ পূরণে হেলিকপ্টারে করে বিয়ে করতে যাচ্ছেন যা মাঝে মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচনা তৈরী করছে এবার দেখা গেল একমাত্র মেয়ের আবদার রাখতে আড়াই লাখ টাকা খরচ করে হেলিকপ্টার ভাড়া করেছেন বাবা। তিনি মেয়েটিকে হেলিকপ্টারে তুলে নেন। নববধূ তাকে সাজিয়ে একটি হেলিকপ্টারে করে নিয়ে আসেন। চট্টগ্রামে বরখাস্ত হওয়া ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল মেয়েটির আশা পূরণ করেছেন।
তবে মেয়ের বিয়েতে এমন জমকালো আয়োজন নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। প্রশ্ন উঠেছে, একজন চাকরিচ্যুত ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল কীভাবে এত টাকার মালিক হলেন?
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মহিবুল্লাহর মেয়ের নাম নুসরাত জাহান। সে চট্টগ্রাম নগরীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। নগরীর এনায়েত বাজার এলাকার ব্যবসায়ী সেলিম মিয়ার ছেলে ইরফান তাজুয়া অভির সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বর ইরফান নিজে একজন ব্যবসায়ী।
শনিবার দুপুর ১টার দিকে লালখান বাজার জামিয়াতুল উলূম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসা মাঠে একটি লাল রঙের হেলিকপ্টার অবতরণ করে। হেলিকপ্টার নামতে দেখে চারিদিকে ভিড় জমে যায়। পাইলটের পাশের সিটে বসেন কনে নুসরাত জাহান। পেছনের সিটে বসেন মো. মহিবুল্লাহ ও তার স্ত্রী। হেলিকপ্টারটি কয়েক মিনিট আকাশে উড়ে কাজী দেউরী এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন আউটার স্টেডিয়ামে অবতরণ করে।
কাজী দেউড়ির একটি কমিউনিটি সেন্টারে মহিবুল্লাহর মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে বিকেল ৪টার দিকে কনে নুসরাত ও বর ইরফান আবার হেলিকপ্টারে চড়ে আউটার স্টেডিয়ামে ওঠেন। নবদম্পতি একটি হেলিকপ্টারে আকাশে নিয়ে যান। এরপর হেলিকপ্টারটি আবার আউটার স্টেডিয়ামে অবতরণ করে। পরে একটি প্রাইভেটকারে নুসরাত জাহানকে কাজী দেউড়ির শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহিবুল্লাহর বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায়। বর্তমানে নগরীর খুলশী থানাধীন লালখান বাজার এলাকায় একটি ফ্ল্যাট কিনে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। গত বছর ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল মহিবুল্লাহর বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ ওঠে নবী হোসেন নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। পরে ভুক্তভোগীর দায়ের করা মামলায় তাকে পাহাড়তলী থানায় গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় প্রথমে সাময়িক বরখাস্ত, পরে তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। সে সময় মহিবুল্লাহ সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের পশ্চিম জোনে কনস্টেবল পদে কর্মরত ছিলেন।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মহিবুল্লাহ চাকরিকালে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ছিলেন। বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। অনেকেই তাকে হেলিকপ্টার ভাড়া করে কিশোরগঞ্জের বাসায় যেতে দেখেছেন। তিনি এসে বিমানে ঢাকায় যান। এগুলি ছাড়াও, তিনি বর্তমানে আরএফ হোল্ডিংস লিমিটেড নামে একটি ডেভেলপার কোম্পানির পরিচালক এবং আরও কয়েকটি ব্যবসার মালিক। গতকাল তার সঙ্গে কথা হলে তিনি নিজেকে এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক দাবি করেন।
জানতে চাইলে। মহিবুল্লাহ বলেন, মেয়ের বিয়েতে হেলিকপ্টার ভাড়া বাবদ আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। অনেক কষ্টে মেয়ের শখ পূরণ করেছি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহিবুল্লাহর বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায়। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানাধীন লালখান বাজার এলাকায় একটি ফ্ল্যাট কিনে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। স্থানীয় লোকজন তাকে শাপলা নামেই চেনে। ফ্ল্যাটের বিক্রেতা মো. জাহাঙ্গীর বলেন, আড়াই বছর আগে তিনি আমার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকায় ফ্ল্যাটটি কিনেছিলেন।
এদিকে রোববার সন্ধ্যায় মহিবুল্লাহ এই প্রতিবেদককে ফোন করে বলেন, পুলিশে চাকরিকালে আমার জিপিএফ তহবিল থেকে জমা হওয়া টাকা তুলে মেয়ের বিয়েতে ১১ লাখ টাকা খরচ করেছি। যদি আমার নামে পরিচিত অ-আয় সম্পদ থাকে, তবে তা তদন্ত করার জন্য একটি পৃথক সংস্থা রয়েছে।”
উল্লেখ্য, জিপিএফ মানে জেনারেল প্রভিডেন্ট ফান্ড। বাংলায় একে বলে জেনারেল প্রভিডেন্ট ফান্ড। মাসিক বেতনের একটি নির্দিষ্ট অংশ সরকারি চাকরিতে যারা রাজস্ব খাত থেকে বেতন পান তাদের বেতন থেকে কাটা হয়। পরিষেবা শেষে, জমাকৃত মোট পরিমাণ তার উপর নির্দিষ্ট সুদের হার সহ পরিশোধ করা হয়।
এদিকে দুর্নীতির অভিযোগ আনা সেই পুলিশ কর্মকর্তা মহিবুল্লার বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-কমিশনার (সদর দফতর) মোঃ আব্দুল ওয়ারিশ বলেন, “কনস্টেবল মহিবুল্লাকে প্রথমে পাহাড়তলী থানার মামলায় বরখাস্ত করা হয়। পরে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তাকে বরখাস্ত করা হয়। বিভাগীয় তদন্ত।