পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি দুবায়ের সেই জুয়েলারি শপের মালিক আরাভ খান। সম্প্রতি তার দোকানের উদ্বোধন করেন তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। সেই সাথে বিনোদন জগতের মানুষেরাও অনুষ্ঠানে কিংবা দূর থেকে অভিনন্দন জানিয়ে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। এদিকে হত্যা মামলার আসামি আরাভ খান বৃহস্পতিবার ফেসবুক লাইভে এসে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমি দিনমজুরের ছেলে। ঢাকায় এসে অনেক কষ্ট পেয়েছি। একটা হোটেলে কাজ করতাম। অনেক কষ্টে আজ এই অবস্থানে এসেছি। আল্লাহ আমাকে সুস্থ রাখলে খুব শিগগিরই দেশের ৬৪টি জেলায় ৬৪টি মসজিদ নির্মাণ করব।
তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা তুলে ধরে আরাভ খান বলেন, “এটা সত্যি যে আমার বিরুদ্ধে মামলা আছে। কিন্তু আমি কোনো খুনের সঙ্গে জড়িত নই। পুলিশ আমাকে অস্ত্রের মামলায় জেলে দিয়েছে। এটা সত্য। কিন্তু আমি দোষী নই। অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় কয়েকবার জেল খেটেছি।আবার জামিনে বের হয়েছি।আদালত আমাকে সাজা দিলে সেই সাজা মেনে নেব।
তিনি আরও বলেন, অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও সাকিব আল হাসান ভাই আমার স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করেছেন। এর জন্য আমি সাকিব আল হাসান ভাইয়ের কাছে কৃতজ্ঞ।
নিজের ব্যবসা প্রসঙ্গে আরাভ খান বলেন, অনেক কষ্টে এই ব্যবসা গড়ে তুলেছি। এখানে আমার ব্যবসায়িক সহযোগীদের কিছু আছে. তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে। গণমাধ্যমে যে খবর আসছে তা পুরোপুরি সত্য নয় বলে উল্লেখ করেন জনপ্রিয় এই স্বর্ণ ব্যবসায়ী।
এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় দুবাইয়ের হিন্দ প্লাজায় আরভ জুয়েলারি নামের এই সোনার দোকানের উদ্বোধন করেন তিনি। দোকানের মালিক কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ ইউনিয়নের আশুতিয়া গ্রামের আরভ খান বলে জানা গেছে। তবে স্থানীয়রা জানান, তার আসল নাম সোহাগ মোল্লা।
সোহাগ মোল্লা আশুটিয়া গ্রামের দিনমজুর মতিয়ার রহমান মোল্লার ছেলে। মতিয়ার রহমান মোল্লা বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলায় ফেরি করে রুপার হাঁড়ি বিক্রি করতেন। সোহাগ মোল্লা ১৯৮৮ সালে এখানে জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৫ সালে চিতলমারী সদরের একটি স্কুল থেকে সোহাগ মোল্লা এসএসসি পাস করেন। দারিদ্র্যের কারণে তার আর লেখাপড়া হয়নি। চিতলমারী থেকে ভাগ্যের সন্ধানে ২০০৮ সালে ঢাকায় চলে আসেন।
তার বিরুদ্ধে ঢাকায় পুলিশ হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ঢাকার বিভিন্ন থানায় প্রায় ডজনখানেক মামলা রয়েছে। এরপর পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে ভারত হয়ে দুবাই যান আরাভ খান।
এদিকে দুবাইতে আরভ খানের এই সোনার দোকান খোলার খবর জানাজানি হলে এলাকায় আলোচনার ঝড় ওঠে। সবার মুখে একই প্রশ্ন সোহাগ মোল্লা কিভাবে রাতারাতি এত টাকার মালিক হলেন।
সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় সোহাগ মোল্লা ওরফে আরাভ খানের চাচাতো ভাই ফেরদৌস মোল্লার সঙ্গে। সোহাগ মোল্লা ওরফে আরাভ খান অল্প সময়ে এত টাকার মালিক হওয়ায় তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন।
ফেরদৌস জানান, সোহাগ মোল্লা মাঝে মাঝে ফোনে যোগাযোগ করতেন। তিনি বলেন, তিনি বড় ব্যবসা করছেন। তিনি স্থানীয় লোকজনকে টাকা দিয়ে সাহায্য করেন। প্রতিবার পাঁচ-ছয়টি গরু কোরবানি করে এলাকার মানুষকে খাওয়ানো হয়।
ফেরদৌস বলেন, সোহাগ মোল্লা ৪-৫ বার বিয়ে করেছেন। শেষ বিয়ে হয়েছিল ভারতের কলকাতায়। তিনি এখন স্ত্রীর সঙ্গে দুবাইতে থাকেন। কয়েকদিন আগে তার বাবা-মা ও দুই বোন এলাকা ছেড়ে চলে যায়। তারা দুবাই যাচ্ছে বলে জানান।
হিরণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাজহারুল আলম পান্না জানান, সোহাগ মোল্লা ওরফে আরভ খান একই ব্যক্তি। ওর বাড়ি আমার গ্রামে। সে দরিদ্র পরিবারের সন্তান। গত পাঁচ-সাত বছর ধরে তিনি এলাকায় আসেননি। হঠাৎ করে তিনি কিভাবে এত টাকার মালিক হয়ে গেলেন তা আমাদের বোঝার বাইরে।
এদিকে এই ঘটনা নিয়ে শোরগোল পড়ার পর মানুষ সেই আরাভকে নিয়ে নানা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করছে এবং এই প্রসঙ্গে কোটালীপাড়া থানার ওসি মো. জিল্লুর রহমান বলেন, এ পর্যন্ত আমার থানায় সোহাগ মোল্লা ওরফে মোল্লা আপন, ওরফে রবিউল ইসলাম রবি, ওরফে শেখ হৃদি, ওরফে আরভ খানের বিরুদ্ধে ৯টি ওয়ারেন্ট এসেছে। আমি ওয়ারেন্ট তামিল করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমরা তার কোনো হদিস পাইনি।