আইসিবি ইসলামী ব্যাংক ব্যাপক তারল্য সংকটে পড়েছে। ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় ঘুরেও টাকা পাচ্ছেন না আমানতকারীরা। ইতালি প্রবাসী আফসার উদ্দিন নামের এক গ্রাহক এক মাসে তিনবার কোম্পানির মতিঝিল প্রধান শাখায় এসেও টাকা পাননি। এই গ্রাহক ব্যাঙ্কের এই শাখার ম্যানেজারকেও খুঁজে পাচ্ছেন না।
রোববার (১৯ মে) আইসিবি ইসলামী ব্যাংক মাতঝিল প্রধান শাখা পরিদর্শন করে গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলেন।
ইতালি প্রবাসী আফসার উদ্দিন বলেন, আমি ১৯৮৮ সাল থেকে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকে লেনদেন করছি। এর আগে কুয়েতে থাকতাম, এখন ইতালিতে থাকি। এই ব্যাংকে আমার একাউন্টে প্রায় ৮ লাখ টাকা আছে। গত এক মাসে ৩ বার এসেছি, এখনো টাকা পাইনি।
ব্যাংক থেকে টাকা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, টাকা পাবো এরকমটাই বলা হচ্ছে ব্যাংক থেকে। ব্যাংকে ঝামেলা চলতেছে বলেও কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন আমাকে। আবার প্রধান কার্যালয়েও যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে। আমি যতবার এসেছি কখনো এই শাখার ম্যানেজারকে পাইনি। যখনই আসি তখনই বলা হয়, ম্যানেজার বাইরে চলে গেছে।
আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের মতিঝিল শাখার আরেক গ্রাহক শিবলী মাহমুদ। তিনি বলেন, দুই বছর আগে এই ব্যাংকে তিন লাখ টাকা জমা দিয়েছিলাম। হঠাৎ শুনলাম ব্যাংক গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। তাই গত ১৫ দিন আগে টাকা তুলতে এসেছি। ব্যাংক থেকে বলা হলো কয়েকদিন পর আসতে। তারপর আজ আবার এলাম। তবে ব্যাংকের এই শাখা টাকা দিতে পারছে না, শুধু আশ্বাস দিচ্ছে।
ব্যাপক তারল্য সংকটের কারণে গত ৩১ জানুয়ারি আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জামানত-মুক্ত তারল্য সহায়তা হিসেবে ৫০ কোটি টাকা চেয়েছে। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ব্যাংকটির ৪২৫ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। ফলে দুই সপ্তাহ পর আবেদন খারিজ হয়ে যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অফ-সাইট সুপারভিশন বিভাগ আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের বিরুদ্ধে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নিতে ব্যাংকিং প্রবিধান ও নীতি বিভাগকে অনুরোধ করেছে। কারণ, তারল্য সংকটের কারণে এটি কার্যত বন্ধ রয়েছে।
২০০৮ সালে ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের নাম পরিবর্তন করে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক করা হয়। গত সপ্তাহে ব্যাংকটির মৌলভীবাজার শাখার গ্রাহক মৌলভীবাজার প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট সাংবাদিক ও ছড়াকার কবি আব্দুল হামিদ মাহবুব টাকা তুলতে গেলে তাকে কোনো টাকা দেওয়া হয়নি। ওই শাখায় তার এক লাখ টাকা জমা রয়েছে। গত মঙ্গলবার সকালের দিকে ওই ব্যাংকের নিজ একাউন্ট থেকে ৫৫ হাজার টাকা উত্তোলনের জন্য চেক নিয়ে গেলে তাকে টাকা না দিয়েই ফিরিয়ে দেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। কারণ হিসেবে জানান- ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকা নেই। তিনি ওই চেকের ছবি দিয়ে তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন।
একই অবস্থা ঢাকার পল্টন ও কারওয়ান বাজার শাখারও। দুই শাখায় টাকা তুলতে আসা আমানতকারীদের খালি হাতে ফিরতে হয়েছে।
গত বছর ২০২২ সালের শেষে ব্যাংকে জমা ছিল ১ হাজার ২১২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪৪৪ কোটি টাকা ফ্রোজেন ডিপোজিট।