বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন বেশকিছু দিন ধরেই বেশ আলোচনা হচ্ছিলো রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে। রাষ্ট্রপতি পদ থেকে মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার কারনে অবসরে যাচ্ছেন আব্দুল হামিদ তার জায়গায় কে আস্তে চলেছে তা নিয়ে অনেকের মাঝে কৌতুহূল বিদ্যমান ছিল। তবে এবার দেখা গেল নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।
রাষ্ট্রপতি পদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ধাক্কা’ আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের জন্য ‘সন্ত্রাস’ হিসেবে দেখা দিয়েছে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত অনেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য।
সবার চিন্তা থেকে বেরিয়ে এসে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে ড. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেওয়া সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য সবচেয়ে বড় ‘শক’। রাষ্ট্রপতির সাবেক আর্থিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনসহ অর্ধ ডজন নেতার নাম আলোচনায় থাকলেও সভাপতি পদে দলীয় মনোনয়ন সবই হিসাব-নিকাশের বাইরে।
রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে ৭ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠকে সংসদীয় দল সভাপতি মনোনয়নের একক ক্ষমতা দলীয় নেতাকে দেয়। পঁচাত্তরের পাত্র বদলানোর পর জেল-জুলুম-নির্যাতনের শিকার ৭ দিন পর আলোচনার বাইরে থাকা ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা; সাবেক জেলা জজ ও দুদক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের প্রতি ত্যাগ, আনুগত্য ও যোগ্যতার দিক থেকে এই মনোনয়ন নিয়ে দলের ভেতরে কোনো প্রশ্ন ছিল না।
ওইদিন আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে দলের নেত্রী শেখ হাসিনা সব সংসদ সদস্যকে সতর্ক করে বলেন, আগামী নির্বাচনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ফাঁকা মাঠে গোল করার সুযোগ নেই। এর আগে গত ১২ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, এলাকাভিত্তিক জরিপ চলছে। যারা জনপ্রিয় নয় তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না। এর আগে 2014 ও 2018 সালের নির্বাচনে এমন সতর্কতা সত্ত্বেও অনেক এমপি দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতির ধাক্কা খেয়ে অনেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য ‘আতঙ্কিত’ হয়ে পড়েছেন।
বর্তমান সরকারের অনেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য ইতিমধ্যে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় বিতর্কিত হয়ে পড়েছেন। দলের মধ্যে উপদল গঠন করে এলাকা সামলাচ্ছেন কয়েকজন সংসদ সদস্য। তিনি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে শেখ হাসিনার ঘোষিত প্রার্থীর বিরোধিতা করেন। তিনি নিজেই বিদ্রোহী প্রার্থী দিয়েছেন। কারও বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট প্রমাণ রয়েছে। এসব মন্ত্রী-এমপিদের বড় তালিকা নিয়ে কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের একজন নেতা ও মন্ত্রিসভার সদস্য এই প্রতিবেদককে বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মনোনয়নের মতো আগামী নির্বাচনেও মনোনয়নের ক্ষেত্রে চমক থাকতে পারে। বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ এবং স্থানীয়ভাবে ভালো ভাবমূর্তি সম্পন্ন প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। আগামী নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী কারো মুখের দিকে না তাকিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে মনে করেন তিনি।
উল্লেখ্য, দেশের সংবিধান অনুসারে একজন ব্যাক্তি দুইবারের পর আর রাষ্ট্রপতি পদে বহাল থাকতে পারে না যার কারণেই অবসরে যেতে হচ্ছে সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদকে। এবং সেই সাথে দেশের ২২ তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পাচ্ছেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।