এবার যশোরের এক শিক্ষিকার বিরুধ্যে উঠেছে এক গুরুতর অভিযোগ জানা গিয়েছে ওই শিক্ষিকা অনুমতি ছাড়াই আমেরিকাতে রয়েছেন এবং রীতিমতো তিনি স্কুল থেকে বেতন তুলছে। গত বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে দুই মাসের মেডিকেল ছুটি নিয়ে তিনি সুদূর আমেরিকায় পাড়ি জমান। সরকারি চাকুরিবিধি অনুযায়ী পাসপোর্ট করতে বিভাগীয় অনুমতি (এনওসি) নেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তিনি তা না করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে পাসপোর্ট ও ভিসা সংগ্রহ করে আমেরিকায় গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
একাধিক সূত্র জানায়, শিক্ষিকা নিশাত মুনাওয়ারা আমেরিকায় অবস্থানের কথা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ সকল শিক্ষক, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও শিক্ষা কর্মকর্তারা জানলেও উপজেলা শিক্ষা অফিস তাকে নিয়মিত বেতন দিয়ে চলেছে। গত ডিসেম্বর মাসের বেতন তার ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে বলে নিশ্চিত উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা। আমেরিকায় অবস্থান করলেও এরই মধ্যে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ওই শিক্ষিকা নিজের ছুটি বর্ধিত করার একটি আবেদন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছেন।
অভিযোগ উঠার পর শিক্ষা কর্মকর্তাদের মৌখিক নির্দেশে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাজিয়া সুলতানা লিখিতভাবে বিষয়টি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার (টিও) কাছে জানিয়েছেন। এরপর ২২ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ওই বিদ্যালয়ে প্রাথমিক তদন্তে গেলে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। নিশাত মুনাওয়ারা ২০২০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি চৌগাছা উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের বড়খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিক হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের সময় দেয়া তথ্যে তিনি নিজেকে বিবাহিত দাবি করে স্বামীর নাম অরনল্ড রাজীব এবং পেশা দেখিয়েছেন সরকারি চাকুরি।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বড়খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক এবং স্থানীয় অভিভাবকরা জানান, নিশাত মুনাওয়ারা বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকেই আপত্তিকর জীবনযাপন করতেন। তিনি বিদ্যালয়ে যোগদানের পর আরেকটি বিয়ে করেন। পরে আমেরিকায় একটি ছেলের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার সম্পর্ক হয়। সেই সূত্র ধরে তিনি আমেরিকায় চলে গেছেন।
শিক্ষকরা জানান, নিশাত উপজেলা শিক্ষা অফিসে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসের ১ তারিখ থেকে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ছুটি নিয়েছেন বলে তারা জানেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি আবারও এক মাসের মেডিকেল ছুটি বর্ধনের জন্য তিনি দরখাস্ত করেছেন বলেও তারা শুনেছেন। শিক্ষকরা আরও জানান, সহকারী শিক্ষকদের ছুটি নিতে প্রধান শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের দায়িত্বে থাকা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার সুপারিশ নেয়ার বিধান থাকলেও ওই শিক্ষিকা সেই সুপারিশ নেননি।
শিক্ষকরা জানান, ওই শিক্ষিকা ছুটি নেয়ার জন্য যে দরখাস্ত করেছেন তাতে অন্য কেউ স্বাক্ষর করে দিয়েছেন এবং তার সাথে যে মেডিকেল সনদ জমা দিয়েছেন তাতেও চিকিৎসকের স্বাক্ষরের তারিখ ঘষামাজা করা আছে।’
তবে যশোর পাসপোর্ট অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিশাত মুনাওয়ারা নামের কোন ব্যক্তি যশোর পাসপোর্ট অফিস থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করেননি।
এ বিষয়ে বড়খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাজিয়া সুলতানা বলেন, তিনি ডিসেম্বরের ১ তারিখ থেকে ২ মাসের মেডিকেল ছুটি নিয়ে আমেরিকায় অবস্থান করছেন। অনুমতি ছাড়াই কীভাবে গেলেন এবং ছুটি বর্ধিত করার আবেদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এসব বিষয় অফিস বলতে পারবে।অফিসে খোঁজ নেন।’
চৌগাছা উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ইউনুছ আলী বলেন, ‘ডিসেম্বর মাসে ওই শিক্ষিকার হিসাবে বেতন পোস্টিং হয়েছে। বেতন তৈরি করে শিক্ষা অফিস, ছুটিও অনুমোদন করেন তারা। নিয়ম অনুযায়ী ছুটি অনুমোদনের পর সে অনুযায়ী বেতন তৈরি করে শিক্ষা অফিস আমাদের কাছে পাঠাবেন। ওই শিক্ষিকা ছুটিতে আছেন কিনা শিক্ষা অফিস আমাদের অবহিত করেনি।’
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিনি আমেরিকায় চলে গেছেন সেটা জানতাম না। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিষয়টি ১৯ ফেব্রুয়ারি দুপুরের পর লিখিতভাবে জানিয়েছেন। তিনি দুই মাসের মেডিকেল ছুটির দরখাস্ত করেছেন, যেটা অফিস নথিতে সংরক্ষিত আছে। ভুল করে তার হিসাবে বেতন চলে যেতে পারে।’
বর্ধিত ছুটির দরখাস্ত পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, হয়তো ওই শিক্ষিকার মা অথবা তার এক নিকট আত্মীয় (উপজেলার একজন কর্মকর্তা) অফিসে দিয়ে গেছেন। শিক্ষা কর্মকর্তা আরও জানান, বিষয়টি যশোরের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে (ডিপিও) জানানো হয়েছে। তার নির্দেশ অনুযায়ী এ বিষয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়ে দেয়া হবে।
তবে নিশাত মুনাওয়ারার মা উপজেলার কাঁদবিলা-ঝাউতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রেহেনা আক্তার জানিয়েছেন, ‘নিশাত আমেরিকায় চলে গেছে। স্বামীর কাছে আছে। স্বামীই তাকে নিয়ে গেছে।’
উল্লেখ্য, এর আগেও দেশে এমন ধরণের ঘটনা ঘটেছে যেখানে দেখা গিয়েছে স্কুল শিক্ষক দেশে না থেকেও বিদেশের মাটিতে বসে বছরের পর বছর বেতন উত্তোলন করছে এবং এনিয়ে কতৃপক্ষের কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই