সম্প্রতি সুলতান ডাইনের কাচ্চি বিরিয়ানিতে কুকুর বিড়ালের মাংস দেয়ার অভিযোগ উঠেছে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই বিষয়টি নিয়ে কথা ওঠার সাথে সাথে তা সারা দেশে টক অব দ্য টাউনে পরিনিত হয়ে যায়। এবং এর পর থেকেই অনেকে নিজেদের নানা অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করছে এই সুলতান ডাইনের কাচ্চি বিরিয়ানি নিয়ে।
সুলতানের ডাইনের থেকে খাসির মাংস কেনার ক্ষেত্রে বড় ধরনের অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। কোম্পানির গুলশান শাখার ব্যবস্থাপক প্রতিদিন ১৫০ কেজি মাংস রান্না করার কথা বললেও কাপ্তান বাজারের মাংস বিক্রেতা জানান, সুলতানস ডাইনে তারা প্রতিদিন ১২৫ কেজি মাংস বিক্রি করেন। ভোক্তা অধিকার কর্মকর্তারা সুলতানের খাবারের মাংস কেনার রশিদ চাইলেও তারা সঠিক হিসাব দেখতে পাননি।
বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত গুলশান-২ এর সামসুদ্দিন ম্যানশনে সুলতানস ডাইন শাখায় এ অভিযান চালানো হয়। সুলতান ডাইন কর্তৃপক্ষ এবং মাংস সরবরাহকারীদের ব্যাখ্যা চাইতে সোমবার (১৩ মার্চ) সকাল ৯টায় ভোক্তা অধিকারের কাওরান বাজার অফিসে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
ক্যাম্পেইনটি পরিচালনা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এর আগে দুপুর ১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত সুলতানস ডাইনে অভিযান চালায় ফুড সেফটি অথরিটি।
সম্প্রতি, সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যাতে সুলতানের ডাইনে বিড়ালের মাংস দিয়ে কাচ্চি বিরিয়ানি রান্নার অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য সুলতানস ডাইনের গুলশান শাখায় অভিযান চালায় খাদ্য নিরাপত্তা ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায় মাংসগুলো পাতলা ছিল। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ঢাকা জেলা কার্যালয়ের প্রধান ও সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল।
ভোক্তার সাথে ফোনালাপে মাংস সরবরাহকারী জানান, সুলতানস ডাইন (৯ মার্চ) বগিতে ১২৫ কেজি খাসির মাংস সরবরাহ করেছে। যদিও সুলতানের ডাইন মাংস প্রক্রিয়াকরণের সময় উপস্থিত ছিল না, ডেলিভারির সময় তাদের একজন প্রতিনিধি ছিল। যাইহোক, ৯ মার্চ সুলতানের ডাইন কর্তৃপক্ষ রান্নার জন্য ১৫০ কেজি খাসি মাংস সরবরাহ করে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল সুলতান ডাইন ম্যানেজার মো. আশরাফ আলমের কাছে জানতে চান যে সরবরাহকারী ১২৫ কেজি সরবরাহ করলেও বাকি ২৫ কেজি মাংস সুলতানের ডাইন কার থেকে সংগ্রহ করা হয়।
সুলতান ডাইন কর্তৃপক্ষ ২৫ কেজি খাসির মাংস পরিমাণ ব্যাখ্যা করতে চাইলে কোনো দলিল বা রশিদ দেখাতে পারেনি। জবাবে সুলতানস ডাইনের ম্যানেজার বলেন, সুলতানস ডাইন বাকি দোকানদারদের কাছ থেকে খাসির মাংস সংগ্রহ করে। রসিদ বা বিল সন্ধ্যায় দোকানদার দিয়ে দেবেন। তারপর কসাইকে তার পাওনা পরিশোধ করা হবে। আর ম্যানেজারের দাবি, সুলতানস ডাইনের খাবারে কোনো ভেজাল নেই।
অভিযান শেষে ভোক্তা সমিতির সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল সাংবাদিকদের জানান, যেহেতু আমরা সুলতান ডাইন কর্তৃপক্ষের বক্তব্যের সাথে মাংস সরবরাহকারীর বক্তব্য ও নথির মিশ্রণ পেয়েছি। আপাতত তারা কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। তাই তাদের আগামী সোমবার ভোক্তা অফিসে এসে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। এরপর কোনো ত্রুটি পাওয়া গেলে সুলতান ডাইনের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গুলশানের সুলতান ডাইনে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষে কার্যালয় প্রধান ও সহকারী পরিচালক ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ, ঢাকা জেলা কার্যালয় অভিজান পরিচালনা করেন। আব্দুল জব্বার মন্ডল, সহকারী পরিচালক মো. হাসানুজ্জামান ও সহকারী পরিচালক ফারহানা ইসলাম অজন্তা।
উল্লেখ্য, এর আগেও রাজধানীর বিভিন্ন হোটেলে খাসির মাংসের পরিবর্তে অন্য কোনো প্রাণীর মাংস রান্নার অভিযোগ উঠেছিল তবে এবার নামকরা সুলতান ডাইনের বিরিয়ানিতে এই মাংস নিয়ে উঠেছে অভিযোগ।