দেশে জঙ্গিবাদ দমনে ক্যাশ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। দেশের অনেক তরুণ যুবক জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে এবং সেই তাদের পরিবারের অজান্তে। এখন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ৫৫ জন নিখোঁজ; তবে তাদের পরিবারের অনেকেই জানতেন তারা বিদেশে আছেন। তবে নিখোঁজ থাকা বেশ কয়েকজনকে চিহ্নিত করেছে র্যাব।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ‘৫৫ যুবক বাড়ি ছেড়েছে, তাদের মধ্যে ৩৮ জনের নাম ঠিকানা নিশ্চিত করেছে র্যাব। প্রায় সকলেই বিপর্যস্ত যুবক নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দাল শরকিয়া (পূর্ব হিন্দের জামাআতুল আনসার) যোগদান করেছিল।
“তাদের অনেকের পরিবারই জানত যে তাদের ছেলেমেয়ে বিদেশে আছে। তারাও মাসে একবার বা দুইবার যোগাযোগ করে পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে নিয়মিত টাকা পাঠাতো । তাই তারা সন্তানকে সন্দেহ করেনি। আমরা যখন কাজ শুরু করি , তখন তাদের পরিবার জানতে পারবে। আসল ঘটনা।আসলে তাদের কেউই বিদেশে নয়, দেশে নতুন জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেওয়ার জন্য বাড়ি ছেড়ে যায়।
গত বুধবার রাতে র্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১০ যৌথ অভিযান চালিয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠনের দুই সুপারভাইজার ও একজন আর্থিক যোগানদাতাসহ নিখোঁজ তিন যুবককে গ্রেপ্তার করে। এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গত দেড় থেকে দুই বছরে ৫৫ জন নিখোঁজ হওয়ার তথ্য জানায় র্যাব।
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এখন পর্যন্ত ৫৫ জন যুবক নিখোঁজ রয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, তাদের মধ্যে ৩৮ জন পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী চরমপন্থী সংগঠনের সদস্যদের দ্বারা তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আমরা দেশের সব বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাকে এ তথ্য জানিয়েছি এবং সব বাহিনী সমন্বিত অভিযান শুরু করেছে।
জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত ওই যুবকরা কীভাবে দেশে টাকা পাঠালেন, এমন প্রশ্নে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘নতুন যে সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করেছে তারা আগের সব সংগঠনের চেয়ে বেশি সক্ষম বলে তাদের গঠনতন্ত্রে উল্লেখ করেছে। কেউ অসুস্থ বা আহত হলে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দিয়ে পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দেন তারা।
‘এজন্য হিজরতে থাকাকালীন সময়ে অস্বচ্ছল কর্মীর পরিবারকে সংগঠনের পক্ষ থেকেই সহযোগিতা করা হয়। কর্মীরা সংগঠন থেকে টাকা নিয়েই তাদের পরিবারকে পাঠাতো।’
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, সংগঠনটির পেছনে কোনো বিদেশি শক্তি ও আর্থিক যোগানদাতা বা দেশীয় রাজনৈতিক দল কাজ করলে তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, সংগঠনের অর্থ সংগ্রহের প্রাথমিক পর্যায়ে মসজিদ-মাদ্রাসার নামে বিভিন্ন স্থান থেকে অনুদান সংগ্রহ করা। এছাড়া প্রতি মাসে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা অনুদান দিতে পারেন এমন সক্ষম ব্যক্তিদের সংগঠনে যোগদানের টার্গেট নিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ করেন এর নেতারা।
কয়েক মাস পর, দেশের বিভিম জেলা থেকে ৫৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাদের গ্রেপ্তারে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ শুরু করে। র্যাব এ পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবের মুখপাত্র জানান, সংগঠনটির সদস্যরা কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের তরুণ-তরুণীদের টার্গেট করত। পরবর্তীতে মুসলমানদের নিপীড়নের বিভিন্ন ভিডিও দেখিয়ে এবং বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়ে উগ্রবাদে উস্কানি দেওয়া হয়।
জানা গেছে, নিখোঁজ যুবকদের সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতির প্রশিক্ষণের জন্য পটুয়াখালী ও ভোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়। এরপর তাদের পটুয়াখালীর বিভিন্ন মানুষের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন সেফ হাউসে রেখে পটুয়াখালী ও ভোলার বিভিন্ন চর এলাকায় শারীরিক কসরত ও জঙ্গিবাদ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
এ ছাড়া আড়ালে থাকার কৌশল হিসেবে তাদের রাজমিস্ত্রি, চিত্রকর, ইলেকট্রিশিয়ানসহ বিভিন্ন পেশায় কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে হাবিবুল্লাহ কুমিল্লার কুবা মসজিদে ইমামতি করতেন এবং একটি মাদ্রাসায় পড়াতেন। আর নিয়ামত উল্লাহ কুমিল্লার একটি মহিলা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। বিভিন্ন পর্যায়ে বাড়ি ছেড়ে যাওয়া সদস্যদের তিনি আশ্রয় দেন।
উল্লেখ্যঃ দেশের তরুণ সমাজকে জঙ্গিবাদে নিয়ে যেতে নতুন একটি সংগঠন তৈরী হয়েছে এবং সেই সংগঠনে যোগ দিতে অনেক তরুণ বিদেশে যাবার নাম করে তাদের বাড়ি ছেড়েছে। তবে পরিবারকে তারা বুঝতে দেয়নি তারা এই পথে পারি দিয়েছে।