এবার গণফোরাম থেকে বহিস্কার হলেন দলটির প্রতিষ্ঠাতা ড. কামাল হোসেন।এর আগে গত শনিবার দলের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল এবং এই দল ঘোষণার তিন দিনের মাথায় ওই দলের ‘মন্টুপন্থি’ হিসেবে পরিচিত অংশটি দল থেকেই বহিষ্কার করলেন ড. কামাল হোসেন ও সদ্য ঘোষিত সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমানকে।
মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে মন্টুপন্থি অংশের নেতারা ড. কামাল হোসেনের নতুন কমিটি ঘোষণাকে দলের ‘গঠনতন্ত্র পরিপন্থি’ ও ‘অগণতান্ত্রিক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। দলের এ অংশটি বলছে, সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হওয়া সম্ভব নয়।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের পাল্টা এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক। দলের নেতা মোস্তফা মোহসীন মন্টু এবং অধ্যাপক আবু সাইয়ীদ উপস্থিত ছিলেন।
তবে ড. কামাল হোসেনে কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমানের দাবি, গত ১২ই মার্চ জাতীয় প্রেসক্লাবে কাউন্সিল করেই গত শনিবার কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, গত বছরের ৩ ডিসেম্বর গণফোরামের যে কাউন্সিল হয়, তাতে ড. কামাল হোসেনের সায় ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘ড. কামাল হোসেন ও মো. মিজানুর রহমানের গত ১৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষিত কমিটি সম্পূর্ণ গঠনতন্ত্র পরিপন্থী ও অগণতান্ত্রিক।
গত শনিবার ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি ও ডা. মিজানুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে ১০১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। মিজানুর রহমান নতুন কমিটির নাম পড়ে শোনান।
মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে দাবি করে বলা হয়, ‘গত ২৬ এপ্রিল ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিলে ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি ও ড. রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে মাত্র এক বছরের জন্য ১০১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটি গঠিত হয়। কিন্তু উক্ত কাউন্সিল অনুষ্ঠানের পর দীর্ঘ আড়াই বছর দলের কেন্দ্রীয় কমিটি, স্থায়ী কমিটি বা সম্পাদক পরিষদের কোনো সভা ডাকা হয়নি। ফলে দলের মধ্যে নাজুক অবস্থা সৃষ্টি হয়।
‘এমতাবস্থায় গণফোরামের অচলাবস্থা নিরসনে এবং দেশব্যাপী সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে গত বছরের ৩ ডিসেম্বর ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ড. কামাল হোসেনের অনুমতি ও সমর্থন নিয়ে অত্যন্ত সফলভাবে গণফোরামের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে প্রায় ৩০০০ কাউন্সিলর ও ডেলিগেটসের উপস্থিতিতে এবং বাংলাদেশের স্বীকৃত প্রায় ১০টি রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন হয়।
‘ওই অধিবেশনে ১০০০ কাউন্সিলরের সক্রিয় অংশগ্রহণে সর্বসম্মতিক্রমে গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মোহসীন মন্টুকে সভাপতি ও সাবেক নির্বাহী সভাপতি সিনিয়র অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫৭ সদস্য বিশিষ্ট গণফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচিত হয়।
‘কাউন্সিল অধিবেশনের পূর্বে গণফোরামের জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ ড. কামাল হোসেনের সাথে সাক্ষাত করেন। তখন তিনি উক্ত কাউন্সিল অধিবেশনে উপস্থিত থেকে সভাপতিত্ব করার ইচ্ছা পোষণ করেন। কিন্তু তার শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি কাউন্সিল অধিবেশনে উপস্থিত হতে অপরাগতা প্রকাশ করেন এবং সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। তিনি আরও বলেন ওনাকে দলের উপদেষ্টা রাখার জন্য। তবে তিনি লিখিতভাবে কাউন্সিলের সফলতা কামনা করেন এবং কাউন্সিলে উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা ও স্বাগত জানান।’
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘আমরা গভীর উদ্বেগ ও বিস্ময়ের সাথে দেখলাম যে, জাতীয় প্রেসক্লাবে গণফোরামের সঙ্গে দীর্ঘদিন সম্পর্কহীন, দল থেকে পদত্যাগকারী, বিভেদ সৃষ্টিকারী ও নিষ্ক্রিয় কিছু ব্যক্তি নিয়ে গণফোরাম নাম দিয়ে ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি ও মিজানুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়।
‘ড. কামাল হোসেনকে গত বছরের ৩ ডিসেম্বর তারিখে অনুষ্ঠিত কাউন্সিল অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা ও মো. মিজানুর রহমানকে সভাপতি পরিষদের সদস্য নির্বাচিত করা হয়। কিন্তু তারা কেউই গণফোরামের নির্বাচিত কমিটি থেকে পদত্যাগ না করে স্বঘোষিত একটি গঠনতন্ত্র পরিপন্থি ও উপদলীয় কমিটির যথাক্রমে ড. কামাল হোসেন সভাপতি ও মো. মিজানুর রহমান সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। এমনকি ঘোষিত তথাকথিত কমিটি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও প্রতারণা করেছে।
‘এমতাবস্থায় গতকাল ১৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে ড. কামাল হোসেনকে দলের প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে অব্যহতি দেওয়া হলো। মো. মিজানুর রহমানকে সভাপতি পরিষদের সদস্য পদসহ দলের সাধারণ সদস্য পদ থেকেও বহিষ্কার করা হলো।’
সংবাদ সম্মেলনে গণফোরাময় অংশের সভাপতি মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন দলের নিবন্ধন পাওয়ার বিষয়ে ড. কামাল হোসেনদের স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, আপনারা কাউন্সিল করেন। কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি নিয়ে আসেন। আমরা কিন্তু কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি করেছি। কিন্তু উনি (ড. কামাল) প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে কমিটি ঘোষণা দিচ্ছেন, এটা আপনারা দেখেছেন। একটা আহবায়ক কমিটির ঘোষণা দিতে পারতেন। কিন্তু একটা প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে একটা পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা তিনি কীভাবে দিতে পারেন, যাদের সারা বাংলাদেশে কমিটি আছে?’
এ বিষয়ে ড. কামাল হোসেনের ঘোষিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘গত ১২ মার্চ আমরা জাতীয় প্রেসক্লাবে কাউন্সিল করেছিলাম। সেই কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত শনিবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করি। গত ১২ মার্চের কাউন্সিলে ড. কামাল হোসেন সর্বসম্মতিক্রমে সভাপতি ও আমি সাধারণ সম্পাদক হই।’
মন্টুপন্থিদের কমিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন বলেন, ‘আমি তো ওনাদের কাউন্সিলে যাইওনি। স্বাক্ষরও করিনি।’
প্রসঙ্গত,সম্প্রতি দলের কমিটি ঘোষণা করেছিল গণফোরাম। তবে তাদের এই কমিটি ঘোষণার কয়েকদিনের মাথায় দেখা গেল দলের ‘মন্টুপন্থি’ হিসেবে পরিচিত অংশটি দল থেকেই বহিষ্কার করলেন ড. কামাল হোসেনকে এই নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচনা চলছে