Friday, March 24, 2023
বাড়িopinionদালাল মোনাফেক আবদুস সাত্তারকে জিতাতে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ায় ২ প্রার্থীকে গুম করলো সরকারী বাহিনী...

দালাল মোনাফেক আবদুস সাত্তারকে জিতাতে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ায় ২ প্রার্থীকে গুম করলো সরকারী বাহিনী : শামসুল

Ads

উপনির্বাচন নিয়ে দেশে নানা আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে প্রতিবার দেখা যায় এই উপনির্বাচন নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে এই প্রসঙ্গে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন লেখক শামসুল আলম, নিচে সেটি তুলে ধরা হল –

দালাল মোনাফেক আবদুস সাত্তারকে জিতাতে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ায় ২ প্রার্থীকে গুম করলো সরকারী বাহিনী! এই দালালীর উপনির্বাচন নিয়ে আমার কোনো আগ্রহ নেই, তবে প্রার্থী গুম করা নিয়ে কথা আছে।
বাংলাদেশের নির্বাচনে ভোট ডাকাতি করা, প্রার্থী গুম করা আওয়ামীলীগের খান্দানি পেশা। দেশ স্বাধীনের পরে নির্বাচন ব্যবস্থা ধংস করেছিলেন শেখ মুজিব নিজে! আসুন সেকথা শোনা যাক।

স্বাধীনের একটি মাত্র নির্বাচন হয়েছিল ৭ মার্চ ১৯৭৩, যা ছিল কারচুপিময় ও ফলাফল পাল্টানোতে দুষ্ট। ৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত ঐ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি দলের প্রার্থীদের ভয়ভীতি দিয়ে এমনকি গুম করে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় তারা ৮ জন এমপি হয়েছিলেন। ঐ নির্বাচনে শেখ মজিব কি করে এমপি হলেন, তার একটা বর্ণনা পাওয়া যায় মহিউদ্দিন আহমদ লিখিত ‘জাসদের উত্থান পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি’ বইতে– “শেখ মুজিব চারটি আসনে মানোনয়নপত্র জমা দেন। এরমধ্যে একটি ছিল ভোলায়। ওই এলাকায় ডা. আজহারউদ্দিন ছিলেন জাসদের একজন শক্তিশালী প্রার্থী।

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। মনোনয়নপএ জমা দেওয়ার দিন আওয়ামী লীগের কতিপয় লোক ডা. আজহারকে অপহরণ করে। ফলে তাঁর মনোনয়নপত্র জমা পড়েনি। ভোলার ঐ আসনে শেখ মুজিবকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগের আরও ছয়জন প্রার্থী ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন (পৃষ্ঠা ৯৮)। এভাবেই মুজিব এবং তার দলবল ফেল করার হাত থেকে রক্ষা পায়। ঐ নির্বাচনে বিভিন্ন বিরোধীদলের নেতৃস্থানীয় প্রার্থীদের ব্যাপক কারচুপির মাধ্যমে পরাজিত দেখানো হয়। ব্যালট বাক্স হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় এনে ফলাফল বদল করে সরকারি দলের পরাজিত প্রার্থীদের জয়ী ঘোষণা করা হয়।

১১ই মার্চ ১৯৭৩ দৈনিক ইত্তেফাকের এক রিপোর্টে জানা যায়: জনাব অলি আহাদ সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, “ক্ষমতাসীন দল ক্ষমতার অপব্যবহার, জাল ভোট প্রয়োগ এবং সন্ত্রাসমূলক কাজের দ্বারা ও দালাল আইনের ভয় দেখাইয়া নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করিয়াছে।”

১৩ই মার্চ ১৯৭৩ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী) সাধারণ সম্পাদক কাজী জাফর আহমেদ সাংবাদিক সম্মেলনে জানান যে, “অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের নামে দেশব্যাপী একটি শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করিয়া নির্বাচনী প্রহসন করা হইয়াছে।” সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ন্যাপ নেতা রাশেদ খান মেনন সাংবাদিকদের বলেন: “জনগণের ভোটে বাকেরগঞ্জ ৮ ও ৯ আসন হইতে আমি নির্বাচিত হইয়াছি। কিন্তু শাসক দল সুপরিকল্পিত উপায়ে জাল ভোট করিয়া আমাকে পরাজিত ঘোষণা করিয়াছে।”

৯ই মার্চ ন্যাপের সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক পংকজ ভট্টাচার্য্য এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, “কমপক্ষে ৭০টি আসনে ন্যাপ ও অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের সুনিশ্চিত বিজয়কে শাসকদল ক্ষমতার চরম অপব্যবহার, ভুয়া ভোট, পোলিং বুথ দখল, পোলিং এজেন্ট অপহরণ, বিদেশী সাহায্য সংস্থা, জাতিসংঘ, সরকারি গাড়ি ও রেডক্রসের গাড়ির অপব্যবহার প্রভৃতি চরম অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপের মাধ্যমে উক্ত নির্বাচন ক্ষেত্রসমূহে নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে এবং বিরোধী দলের প্রার্থীদের জোর পূর্বক পরাজিত করেছে।”

৯ই মার্চ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের এক সাংবাদিক সম্মেলনে জাসদ সভাপতি মেজর (অবঃ) জলিল বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব যেভাবে নির্বাচনের সময় প্রচলিত কোন ন্যায়নীতির তোয়াক্কা না করে সমস্ত গণতান্ত্রিক রীতিনীতি বিসর্জন দিয়েছে আওয়ামীলীগ। বিরোধী দলের প্রার্থীরা যখন ভোট গননায় এগিয়ে যাচ্ছিলেন তখন অকস্মাৎ বেতার টেলিভিশনে এই সকল কেন্দ্রের ফলাফল প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয় এবং সন্দেহজনকভাবে দীর্ঘ সময় পর নিজেদের পছন্দসই ভোটের সংখ্যা প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।”

৯ই মার্চ প্রেসক্লাবে ভাসানী ন্যাপের তৎকালীন সহ-সভাপতি ডাঃ আলিম আল রাজি বলেন, “ক্ষমতাসীন সরকার এক দলীয় স্বৈরাচার ও একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিগত নির্বাচনে ক্ষমতার প্রকাশ্য অপব্যবহার, সন্ত্রাস সৃষ্টি, শক্তি প্রয়োগ করে ভুয়া ভোটদান, বিপুল অর্থ ব্যয়, বেতার, টেলিভিশন ও সংবাদপত্রসহ সকল প্রচার মাধ্যমের ব্যবহার করে নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে।”

বিরোধী দলগুলো যাতে জনগণের কাছে তাদের বক্তব্য প্রকাশ করতে না পারে সেজন্য ক্ষমতাসীন দল তাদের নিজস্ব রক্ষীবাহিনী, লালবাহিনী, নীলবাহিনীর হাতে বিপুল অস্ত্র দিয়ে গ্রামে গ্রামে পাঠিয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে জনসাধারণকে ভোটদানে বিরতই শুধু করেনি; হয়রানির এক নজীরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তিনি সকল প্রচার মাধ্যম সরকারি দলের দলীয় স্বার্থে যথেচ্ছা ব্যবহারের উল্লেখ করে প্রচার মাধ্যমকে এক ‘ব্যাবিলিয়ন ক্যাপটিভ প্রেস’ বলে অভিহিত করেন। তিনি হুশিঁয়ারীও উচ্চারণ করে বলেন, “বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের ভবিষ্যত অন্ধকার।” নীল নকশার আওতায় সুপরিকল্পিত উপায়ে জনগণের সকল মৌলিক অধিকার ও গণতন্ত্র ছিনিয়ে নেবার উক্ত প্রচেষ্টা পরবর্তী পর্যায়ে ক্রমান্বয়ে সত্য হয়ে উঠে।

একতরফা পাতানো খেলার নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯১টিতে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। চট্টগ্রামের একটি কেন্দ্র থেকে প্রথমে ন্যাপের মোশতাক আহমদ চৌধুরীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হলেও পরে তাকে পরাজিত ঘোষণা করা হয়। সবকয়টি বিরোধী দল এই ঘটনার প্রতিবাদ করে। মোশতাক আহমদ চৌধুরী এই নির্বাচনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একটি রীট আবেদন করেন।

সম্পূর্ণ আইন বিভাগ তখন পুরোপুরিভাবে দলীয় স্বার্থের অনুগত বিধায় মোশতাক চৌধুরীর রীটের পরিপ্রেক্ষিতে কোন সুবিচার পাওয়া সম্ভব হয়নি।১০ই মার্চ এক সাংবাদিক সম্মেলনে জাতীয় লীগের প্রবীণ নেতা জনাব আতাউর রহমান খান নির্বাচন প্রচারাভিযানের সময়, নির্বাচনের দিন ও ফলাফল ঘোষণার পর তার নির্বাচনী এলাকা ধামরাইতে সংগঠিত আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতা কর্মী ও রক্ষীবাহিনীর সার্বিক সন্ত্রাসকে “দুঃস্বপ্নের কালোরাত্রি” বলে আখ্যায়িত করেন।

নির্বাচন সম্পর্কে অলি আহাদ ‘জাতীয় রাজনীতি : ১৯৪৫ থেকে ৭৫’ পুস্তকে লিখেন, “পরিতাপের বিষয় নির্বাচন অবাধও হয নাই, সুষ্ঠু হয় নাই, নির্বাচন পরিচালনায় পর্তুগালের সালাজার, স্পেনের ফ্রঙ্গো আর বাংলাদেশের শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে কোন গুণগত কোন পার্থক্য পরিদৃষ্ট হয় নাই (পৃষ্ঠা ৪৬৩)।

তিনি আরও লিখেন, “১৯৭৩-এর মার্চের এই সাধারণ নির্বাচনে প্রশাসনিক ক্ষমতার মারাত্মক অপব্যবহার, চরম দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ, মিডিয়া ক্যু, দলীয় বাহিনীর যথেচ্ছ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার ও ঢালাও হুমকির সহায়তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৯৩টি আসন দখল করেন। সাধারন নির্বাচনের ফলাফল জঘন্য কারসাজি, কারচুপি আর মিডিয়া ক্যু’র মাধ্যমে উলট-পালট করিয়া তাহাদের অনুকূলে কব্জা করে।

আমি যেখানে ২৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে নিশ্চিত জয়ের পথে তখন বেতার ও টেলিভিশন-এর মাধ্যমে আমাকে ১০ হাজার ভোটে পরাজিত ঘোষণা করা হয়। পরে আমি ঢাকায় ফিলে এলে শেখ মুজিব টেলিফোনে আমাকে বলেন- “কিরে অলি আহাদ, ইলেকসনে পাস করলি না?” ইহা তাহার দ্বারা সাংবিধানিক গণতন্ত্র, নীতি ও আদর্শ তথা ঘোষিত রাষ্ট্রীয় আদর্শসমূহ লংঘনের জ্বলন্ত উদাহরণ।

ইহার ফলে, সাংবিধানিক নিয়মতান্ত্রিক পথে সরকার পরিবর্তনের সম্ভাবনা সম্বন্ধে জনমনে মারাত্মক সন্দেহের উদ্রেক হয়। বস্তুতঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগ নেতা ও কর্মীদের সর্বগ্রাসী উদ্ভট ক্ষমতালোভ ও তজ্জন্য রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার জঘন্য অপব্যবহারের মানসিকতা দেশ ও জাতিকে এক চরম বিপর্যয়েরে মুখে নিক্ষেপ করে। [তথ্যসুএ: অলি আহাদ, জাতীয় রাজনীতি : ১৯৪৫ থেকে ৭৫ ॥ বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি – অক্টোবর, ২০১২ (চতুর্থ সংস্করণ) । পৃ: ৪৬৩-৪]

সবচেয়ে মজার গল্পটা লিখেছেন আওয়ামী কলামিস্ট অজয় দাসগুপ্ত। তিনি লিখেন, ১৯৭৩ সালে দেশের প্রথম সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লাতে খন্দকার মোশতাককে বিপুল ভোটে জিতানো হয়, যেখানে শেখ মুজিবের নির্দেশে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জাসদের রশিদ ইঞ্জিনিয়ারকে হারিয়ে দেয়া হয়।

ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করে ভোটের ফল পাল্টে খোন্দকার মোশতাককে বিজয়ী ঘোষনা করার ২ বছর ৪ মাস ৭ দিন পরে এক শেষ রাতে সপরিবারে নিহত হন বাকশাল সরকারের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান।আওয়ামীলীগ দাবী করে ঐ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন খোন্দকার মোশতাক আহমদ, এবং তিনি রাষ্ট্রপতি হয়ে ইতিহাসের দায়শোধ করেন!

Looks like you have blocked notifications!
Ads
[json_importer]
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

Recent Comments