এবার উচ্চ আয়ের যারা রয়েছেন তাদের জন্য সুখবর দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন থেকে বৈদেশিক বিনিময় সংস্থার মতো সরাসরি ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানো হলেও উচ্চ আয়ের পেশাদার প্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রতি ডলার পাবেন ১০৭ টাকা। একই সঙ্গে আপাতত রেমিট্যান্স সংগ্রহের জন্য ব্যাংকগুলো কোনো চার্জ বা ফি নেবে না।
ডাক্তার, প্রকৌশলী, আইনজীবী, ব্যাংকার, নার্স এবং অন্যান্য উচ্চ-আয়ের পেশাজীবীদের বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে, ব্যাংকগুলি রপ্তানি বিলের সমান হারে অর্থাত্ ৯৯ টাকা ৫০ পয়সা (প্রতি ডলার) পরিশোধ করত।
সোমবার (৩১ অক্টোবর) কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংক চিফ এক্সিকিউটিভস (এবিবি) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ফরেন এক্সচেঞ্জ ব্যাংকের (বাফেডা) মধ্যে বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সোমবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফরের সময় হঠাৎ এ বৈঠক ডাকা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল ও কাজী ছাইদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
ব্যাংকগুলোর পক্ষে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আরএফ হোসেন, বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেডা) চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করিম, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। , সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ব্যাংকাররা জানান, এখন পর্যন্ত উচ্চ আয়ের পেশাজীবীরা প্রবাসী আয় দেশে পাঠালে রপ্তানি আয়ের জন্য নির্ধারিত হারের সমান ডলারের দাম ৯৯ টাকা ৫০ পয়সা। এটি তাদের ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় পাঠাতে নিরুৎসাহিত করে। এ কারণে তাদের জন্য ডলারের দাম বেড়ে হয়েছে ১০৭ টাকা। বর্তমানে প্রবাসী আয়ের জন্য ডলারের দাম সর্বোচ্চ ১০৭ টাকা।
উচ্চ আয়ের পেশাজীবীদের পাঠানো প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে ডলারের দাম বাড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোকে তাদের নিজস্ব উৎস থেকে ডলার সংগ্রহ করে লেটার অব ক্রেডিট বা এলসি খুলতে বলেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, মজুরি উপার্জনকারী হিসেবে সকল প্রবাসীদের একই রেমিট্যান্স হার পাওয়ার কথা। কিন্তু গত সেপ্টেম্বরে যখন মুদ্রার বিনিময় হার বাজারে ছেড়ে দেওয়া হয়, তখন ব্যাংকগুলো চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, ব্যাংকার, নার্সসহ উচ্চ আয়ের পেশাজীবীদের বিনিময় হার কমিয়ে দেয়।
সোমবারের বৈঠকে লেটার অব ক্রেডিট বা এলসি খোলার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে সমস্যায় পড়েছে। এ জন্য ব্যাংকগুলো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার সহায়তা চেয়েছে।
সোমবারের বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, নিজস্ব উৎস থেকে ডলার সংগ্রহ করেই এলসি খুলতে হবে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের বর্তমান বাস্তবতায় সার্বিকভাবে কোনো সহায়তা দেওয়া হবে না।
কয়েকটি ব্যাংকের এমডি জানান, রিজার্ভ থেকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে ডলার সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্যাংকগুলোকে নিজস্ব উদ্যোগে ডলার সংগ্রহ করতে বলেছে এবং পণ্য আমদানির জন্য ওপেন লেটার অব ক্রেডিট (এলসি)।
বৈঠকে উপস্থিত এমডিরা জানান, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি মূল্য পরিশোধের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার সহায়তা চাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের শর্ত বিবেচনা করে এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। পরবর্তীতে ব্যাংকাররা মুদ্রা অদলবদলের মাধ্যমে রিজার্ভ থেকে ডলার তুলে নেওয়ার প্রস্তাব দেয়। ব্যাংকগুলো জানিয়েছে, তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে টাকা জমা দিতে এবং ডলার তুলতে চায়। এতে বাজারে ডলারের সংকট কিছুটা হলেও কমবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এই প্রস্তাব নাকচ করে দেয়।
প্রসঙ্গত, উচ্চ আয়ের যারা আছেন তাদের জন্য ডলারের বেশ ভাল একটি হার নির্ধারণ করেছে ব্যাংক তবে সরকারি ব্যাংকগুলোকে আগের মতোই রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত সার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের জন্য ডলার সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এসব এলসি অধিকাংশ সরকারি ব্যাংকে খোলা হওয়ায় মূলত এসব ব্যাংকই এই সহায়তা পাচ্ছে। এটা চলমান হবে.