এবার কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার সাথে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কাতারের রাজধানী দোহায় স্বল্পোন্নত দেশসমূহের (এলডিসি৫) পঞ্চম জাতিসংঘ সম্মেলনের ফাঁকে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার সঙ্গে কথা বলেন।তিনি মূলত বাংলাদেশে অবস্থারত রোহিঙ্গাদের নিয়ে কথা বলেন।
দেশটির বার্তা সংস্থা বাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আল-জাজিরার সাংবাদিক নিক ক্লার্ক। সাক্ষাৎকারের একটি সংক্ষিপ্ত অংশ ইতিমধ্যেই সম্প্রচার করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ পর্বটি আল-জাজিরাতে প্রচার হবে ১১ মার্চ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১০টায়।
সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি এবং সেখানে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎসহ বেশ কিছু বিষয়ে কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী সাক্ষাৎকারে বলেন, মানবিক কারণে মিয়ানমারে নিপীড়ন, হত্যা ও ধর্ষণের শিকার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে। ঢাকা ইস্যু সমাধানে আলোচনায় নিয়োজিত থাকলেও মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের প্রত্যাবাসনে ইতিবাচক নয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং সেখানকার শরণার্থী বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সংকট থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে। যুদ্ধ (ইউক্রেনে) পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে। পুরো মনোযোগ এখন যুদ্ধ এবং ইউক্রেন থেকে আসা শরণার্থীদের দিকে।
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ড এবং পরিস্থিতির উন্নতির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারে যখন রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন শুরু হয়েছিল, তখন রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন, হত্যার ঘটনায় আমরা দুঃখ পেয়েছি। তারপর আমরা সীমান্ত খুলে দিয়েছি, তাদের আসতে দিয়েছি।এছাড়া মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের সবাইকে আশ্রয় ও চিকিৎসা দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, এ ছাড়া আমরা মিয়ানমারের সঙ্গেও কথা শুরু করেছি। আমরা তাদের বলি, আপনারা তাদের (রোহিঙ্গা) ফিরিয়ে নিন। দুর্ভাগ্যক্রমে তারা ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে না। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের ওপর চাপ দিচ্ছে। কিন্তু এটা সত্যিই খুব কঠিন। আমরা তাদের জন্য আলাদা আবাসনের ব্যবস্থা করেছি। ভাসানচর একটি ভালো জায়গা, থাকার জন্য ভালো জায়গা… আমরা ভালো থাকার ব্যবস্থা করেছি। এবং সেখানে শিশুদের জন্য চমৎকার সুযোগ-সুবিধা।’
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জীবনযাত্রার পরিস্থিতি এবং আগুনে ১২ হাজারের বেশি রোহিঙ্গার আশ্রয় হারানো প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসলে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। তারা (রোহিঙ্গারা) একে অপরের সাথে যুদ্ধ করছে। তারা মাদক, অস্ত্র ও মানব পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তারা নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে লিপ্ত।’
সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি ৪ মার্চ কাতারে পৌঁছেন। সফর শেষে আজ বিকেলে প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় ফিরেছেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে কিছু বছর আগে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা এসেছিল এবং তারা বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। তবে তাদের সরকারকে এই সকল রোহিঙ্গদের ফিরিয়ে নিতে বলা হলেও তারা কোনো ইতিবাচক সারা দেয়নি।