কানাডায় অনেক বাংলাদেশিরা সেখানে বাড়ি কিনে সেখানে সেকেন্ড হোম বানিয়েছেন তবে এখন থেকে বন্ধ হচ্ছে এই বাড়ি কেনার সুযোগ।আগামী দুই বছর বাংলাদেশিসহ কোন বিদেশী এখানে জায়গা-জমি কিনতে পারবে না এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কানাডা সরকার। এই প্রসঙ্গ নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন প্রবাসী লেখক মঞ্জুরে খোদা টরিক। নিচে তার স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হল –
কানাডা সরকার এ বছর জানুয়ারীর প্রথম দিন থেকে দু’বছর বিদেশীদের জন্য কানাডায় বাড়ী-ঘর কেনায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তারমানে আগামী দুই বছর বাংলাদেশিসহ কোন বিদেশী এখানে জায়গা-জমি কিনতে পারবে না। কানাডা সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারন হচ্ছে, গত কয়েক বছরে কানাডায় বাসা-বাড়ীর দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার মনে করছে, বিদেশ থেকে ধনী ব্যক্তিরা টাকা নিয়ে এসে এখানে বাসাবাড়ী সম্পদ করছে, আর সে কারণেই এগুলোর দাম বাড়ছে। বাড়ীর শুধু দাম বাড়ছেই না, সাথে সাথে বাসা ভাড়াও অত্যাধিক হারে বাড়ছে।
সরকারের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার আগে থেকেই- মানে গতবছর থেকেই কানাডায় বাসা-বাড়ীর দাম না বেড়ে বরং কমেছে এবং কমতির দিকে। এই অবস্থা কতদিন থাকবে সেটা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা দ্বিধাগ্রস্থ হলেও এ অবস্থা যে আপাত ফল দিতে শুরু করেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
কানাডা সরকারকে বাংলাদেশসহ বিদেশ থেকে অবৈধ অর্থ আসা বন্ধ করতে হবে। আমরা বৈধ অর্থ ও বৈধ বিনিয়োগের বিরোধী নয় বরং পক্ষে কিন্তু তা কোন দেশের স্বার্থের ক্ষতি করে নয়। তবে অবৈধ পাচারকৃত অর্থ আসা বন্ধ করতে সরকারকে দীর্ঘমেয়াদী আইনী কাঠামো তৈরী ও আরোপ করতে হবে। যাতে করে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
বাংলাদেশ সরকার ও নীতি নির্ধারকদের প্রতি আহ্বান/অনুরোধ বিদেশে যারা তাদের বৈধ অর্থ-সম্পদ নিয়ে যেতে চান, বিনিয়োগ করতে চান সে ক্ষেত্রে বাস্তব সম্মত আইন তৈরী করে তাদের সহযোগিতা করবেন। মানুষ যখন তার/তাদের বৈধ সম্পদ (ব্যক্তি/ব্যক্তিবর্গের অর্জিত ও উত্তরাধিকাসূত্রে প্রাপ্ত) স্থানান্তর করতে অপারগ হয় তখন সে অবৈধ পথ অবলম্বন করে। প্রবাসী বা বিদেশে বিনিয়োগকারীরা যেন নির্ধারিত পরিমান কর দিয়ে তারা তাদের অর্থ-সম্পদ বিদেশে নিয়ে যেতে পারে সে ব্যবস্থা করতে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। দেশে অবৈধ অর্থ (কালোটাকা), দুর্নীতির অর্থ বৈধ করতে যদি সরকার নানা সুযোগ দিতে পারে’ তাহলে এই বৈধ অর্থের ক্ষেত্রে কেন দেয়া হবে না? এতে সরকার উচ্চহারে কর পেতে পারে এবং দেশের অর্থনীতি আরো সমৃদ্ধ হতে পারে। হুন্ডি বা অবৈধভাবে অর্থ বিদেশে নিয়ে গেলে সরকারের কোন লাভ হয় না বরং সরকারের একটি অংশের অবৈধ উপার্জনের পথ তৈরী হয়।
বর্তমানে একজন ব্যক্তি বছরে ঘোষণা ছাড়া ১০ হাজার এবং অনুমোতি নিয়ে ১২ হাজার ইউ.এস ডলার পর্যন্ত বিদেশে নিতে পারেন। কিন্তু মানুষ চিকিৎসা-ভ্রমনের জন্য পরিবার নিয়ে যখন বিদেশে যায় তখন নিশ্চয় এর অনেক অধিক অর্থ নিয়ে যান। সে অর্থ নিশ্চয়ই বৈধ পথে নিয়ে যান না। তাকে দুর্নীতির আশ্রয় নিতে হয়। সে জন্যই সরকারের প্রচলিত আইন পরিবর্তন ও সংস্কার প্রয়োজন।
আমি তাদের কথা বলছি না, যারা বাংলাদেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করে, ধ্বংস করে বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা/ডলার বিনিয়োগ করেছেন। এক্ষেত্রে আজো আমরা সরকারের কোন বক্তব্য আজো জানি না। এ ধরণের যত সংবাদ আজ অবধি প্রকাশিত হয়েছে সে বিষয়েও আমরা সরকারের কোন বক্তব্য পাইনি।
কানাডা সরকার তার দেশের নাগরিকদের স্বার্থ-সামর্থ ও ক্রয় ক্ষমতার কথা চিন্তা করেই এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বংলাদেশ সরকারকেও দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার কথা ভেবে ও দুর্নীতি-অর্থপাচার রোধে কার্যকর আইন করতে হবে। প্রয়োজনে কানাডা ও বাংলাদেশ উভয় দেশকে স্ব স্ব স্বার্থে এ বিষয়ে কূটনৈতিক, আইনী সম্পর্ক ও বোঝাপড়া গড়ে তুলতে হবে।