প্রতি বছরেই বাজেটে বাড়ছে সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ,মূলত মেধাবীদের সরকারি চাকরিতে আকৃষ্ট করতে এই সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে। ফলে প্রতি বছরই এ খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ছে। সরকারের বেতন-ভাতা খাতে বেশির ভাগ অর্থ ব্যয় হয় উন্নয়ন, অনুন্নয়ন, রাজস্ব ও প্রকল্পসহ।
এই মুহুর্তে, সরকারী কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন স্কেল বা মহার্ঘ ভাতা প্রবর্তনের কোন পরিকল্পনা নেই। তবে তাদের কিছু আর্থিক সুবিধা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ওই গ্রেডে কিছু গ্রেড বিবেচনা করে টিফিন ভাতা ও শিশু শিক্ষা ভাতার পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এর প্রতিফলন ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল বিশেষ করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে বলেছেন, সরকারি কর্মচারীদের নতুন বেতন স্কেল বা মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। তবে করোনা পরবর্তী বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতিতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বে মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। তবে এ বছর সরকারি কর্মচারীদের নতুন বেতন স্কেল বা মহার্ঘ ভাতা দিতে পারছে না সরকার। তাদের কিছু আর্থিক সুবিধা দেওয়ার কথা বিবেচনা করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, নরসিংদী ও ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক সম্মেলনের প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়ে সরকারি কর্মচারীদের চিকিৎসা ভাতা, ১১ থেকে ২০ গ্রেডের কর্মচারীদের টিফিন ভাতা এবং শিশুদের শিক্ষা সহায়তা ভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ২৪ থেকে ২৬ জানুয়ারী। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে আসা এসব প্রস্তাব খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অর্থ বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ লক্ষ্যে অর্থ বিভাগ কাজ করছে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
উল্লেখ্য, ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম জেলা প্রশাসক সম্মেলনে বলেছেন, গ্রেড গা থেকে ২০ গ্রেডের কর্মচারীদের টিফিন ভাতা প্রতিমাসে ২০০ টাকার পরিবর্তে যথাসময়ে নির্ধারণ করতে হবে। সূত্র জানায়, সম্মেলনের প্রথম দিনের দ্বিতীয় কার্য অধিবেশনে নরসিংদীর জেলা প্রশাসক আবু নঈম মোহাম্মদ মারুফ খান সরকারি কর্মচারীদের সন্তানদের প্রদেয় শিক্ষা ভাতা আধুনিকীকরণ, সরকারি কর্মচারীদের চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধি ও প্রস্তুতির প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সরকারী দাবি আইন-১৯১৩ আপডেট করার জন্য একটি ম্যানুয়াল। এ অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন।
এদিকে, গত ১০ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, সরকার ২০১৫ সালে জাতীয় বেতন স্কেল আদেশ জারি করেছে, যা এখনো বলবৎ রয়েছে। অতীতে, সরকারি কর্মচারীরা বেতন স্কেলের আদেশে প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বেতন বৃদ্ধির সুবিধা পেতেন। কিন্তু জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ -এ মূল বেতনের শতাংশে বৃদ্ধির বিধানের কারণে, সরকারি কর্মচারীরা একটি নির্দিষ্ট হারে একটি নির্দিষ্ট হার পর্যন্ত বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট পান। যা সর্বস্তরে সরকারি কর্মচারীদের জীবনমান উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মচারীদের জন্য এই মুহূর্তে নতুন বেতন স্কেল বা মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।
সরকারি চাকুরিজীবীদের বেতন সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার সব সময় দেশের সর্বস্তরের মানুষের কথা চিন্তা করে। সরকারি কর্মকর্তারাও এর বাইরে নন। সুতরাং আমরা আশা করতে পারি যে তিনি অবশ্যই একটি সুখবর দেবেন। জেলা প্রশাসকের সম্মেলনে প্রস্তাবিত বিষয়গুলো সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল খতিয়ে দেখছে। আমরা যথাসময়ে ঘোষণা করব কোনটি ভাল।