বাংলাদেশের চলচ্চিত্রঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা তৈরী করেছেন অভিনেত্রী নাজিফা তুষি বিষয়ে করে হাওয়া সিনেমার পর তার অভিনয়ের প্রশংসা করছেন অনেকেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাজিফা তুষিকে নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন প্রবাসী লেখিকা মিলি সুলতানা। নিচে সেটি তুলে ধরা হল –
বর্তমান সময়ের তুখোড় চলচ্চিত্র নির্মাতা রায়হান রাফিকে আমার কাছে বাংলাদেশের মহেশ ভাট মনে হয়। এত জিনিয়াস তার আইডিয়া যা খুব সীমিত ব্যক্তির মধ্যেই দেখা যায়। একমাত্র রায়হান রাফিই আমাকে বাংলাদেশের মুভি দেখতে ইনস্পায়ার্ড করেছেন। মহেশ ভাট যেমন সাধারণের বাইরে গিয়ে অসাধারণ কিছু দর্শকদের দেখান। ঠিক তেমনি রায়হান রাফিও করেছেন।
আমি যখন ওটিটি প্লাটফর্মে ভারতীয় ডার্ক ফিল্ম দেখতাম আর মনে মনে ভাবতাম, কবে আমাদের দেশে ডার্ক ফিল্ম বানাবে? রায়হান রাফির ঠিক তেমন একটা দুর্দান্ত ডার্ক মুভির সন্ধান পেলাম, “দ্য ডার্ক সাইড অব ঢাকা”! এমন একটা সাংঘাতিক টুইস্টের মুভি এক নিঃশ্বাসেই গপাগপ গিলে ফেললাম। রাতের ঢাকা শহর রাজকুমারীর মত অপরুপ সুন্দর। সবাই একবাক্যে সেটাই বলবেন। কিন্তু রাতের ঢাকার অপরূপ ঝলমলে ঘোমটার নিচে আছে বীভৎস রূপ। আছে মাদক খুন খারাবি চোরাচালান প্রতারণা প্রবঞ্চনা যৌনতার ভয়াবহ অস্তিত্ব।
“দ্য ডার্ক সাইড অব ঢাকা”- স্ক্রিনে আছে পাঁচটি লোমহর্ষক গল্প। প্রত্যেকটি গল্পের দুর্দান্ত চিত্রায়ণ করেছেন রায়হান রাফি। প্রত্যেকটা গল্পে যথারীতি টুইস্টের ধারাবাহিকতা আছে। যা এককথায় অসাধারণ। বিশেষ করে শেষ গল্পে খাইরুল বাশারের বীভৎস টুইস্ট দেখে আমার শরীরের রোমকূপগুলো ভয়ে আতংকে শিরশির করে উঠেছিল। চোখকে বিশ্বাস করাতে পারলাম না, একি দেখছি আমি!! এমন ভয়াবহ টুইস্ট দেখে অদ্ভুত এক আড়ষ্টতা পেয়ে বসেছে আমাকে। যদিও প্রত্যেক গল্পেই টুইস্ট আছে।
আর টুইস্টগুলো একটার সাথে আরেকটার কোনো কানেকশন নেই। এটাই ছিল রায়হান রাফির অসামান্য মেধার চমকপ্রদ প্রতিফলন। প্রথম গল্পে নাজিফা তুষি ও মনোজ প্রামাণিক জুটির কাজ হল পুরুষদের ফাঁদে ফেলে তাদের কাছ থেকে টাকাপয়সা আদায় করা, তাদেরকে ব্ল্যাকমেইল করা। সিনেমা শুরু হয় নাজিফা তুষিকে দিয়ে। আয়নার সামনে সাজগোজ করে একজনকে ফোন করে বাসায় আসতে বলে। ফোনালাপ শুনে বোঝা গেল অনৈতিক সম্পর্কের আহবান। পুরুষটি এলো, নাজিফা তার জন্য কৈমাছ রান্না করলো। ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে আদর করে খাওয়ালো। অন্তরঙ্গ মুহূর্ত শেয়ার করতে যাবে এমন সময় বেডরুমে ঢুকে পড়লেন মনোজ প্রামাণিক। মনে হল নাজিফা তার স্ত্রী। প্রচুর স্ল্যাং উচ্চারণ করেন মনোজ প্রামাণিক, নাজিফা তুষিও। এক পর্যায়ে ধরা পড়লো, তাদের মিলিত ধান্ধাবাজি। ফাঁদে আটকে যাওয়া ব্যক্তিকে কেটে টুকরো টুকরো করলেন নাজিফা। সেটা খুব ডিস্টার্বিং ছিল।
দ্বিতীয় গল্পে আসেন তমা মির্জা। এই লাস্যময়ীর অভিনয় দেখলে অবাক হতে হয়। যেকোনো চরিত্রের সাথে একেবারে মিশে যান। তমা মির্জার প্রত্যেকটা সংলাপ এক্সপ্রেশন অদ্ভুত মোহময়। গ্রামের অসহায় নিপীড়িত মেয়ে হিসেবে থানায় পুলিশের সাথে তার ভীতসন্ত্রস্ত আচরণ দেখে বোঝার উপায় ছিলো না তিনি প্রতারক চক্রের সদস্য। সহায় সম্বলহীন তরুণী থেকে মুহূর্তে তমার ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন চেঞ্জ হয়ে যাবার দৃশ্যটি খুব উপভোগ্য ছিল। সবগুলো গল্পে টানটান উত্তেজনা ধরে রেখেছেন নির্মাতা। একমুহূর্তের জন্য লুজ করেনি উত্তেজনা। স্ল্যাং প্রচুর ব্যবহৃত হয়েছে। বাস্তবে ডার্ক সাইডে এমন স্ল্যাং থাকে বলে অপ্রয়োজনীয় মনে হয়নি কিছু। রায়হান রাফির কাছ থেকে আরও আরও ছবি চাই, সিরিজ চাই।