রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের মেয়াদ শেষ হয়ে এসেছে যার ফলে নতুন করে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন এর জন্য আলোচনা চলছে।দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি কে হতে যাচ্ছেন তা নিয়ে ‘টপ সিক্রেট’ নীতি অনুসরণ করছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। রাজনীতিবিদ, বিচারক বা আমলা কাকে বেছে নেবেন তা নিয়ে সরকারপ্রধানও দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন। গত মঙ্গলবার সংসদীয় বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের একাধিক সূত্র দাবি করেছে, রাজনীতিবিদদের ওপরই ভরসা রাখতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা।
শীর্ষ গোপন নীতির বিষয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা দেশের রূপান্তরকে বলেন, রাষ্ট্রপতি পদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যখন এই মর্যাদাপূর্ণ চেয়ারের ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ করা হবে, তখন বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠী সমালোচনামূলক হয়ে উঠবে, কারণ ছাড়াই। রাষ্ট্রপতির মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর সমালোচনা তেমন হবে না। যে কেউ রাষ্ট্রপতি হবেন তার বিব্রতকর অবস্থা কমাতে ‘টপ সিক্রেট’ নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারণী নেতা দেশ পানওয়ারকে বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সত্যিই দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাকে ভাবিয়ে তুলেছে। সে তখনও মন বসাতে পারেনি। তাই এ বিষয়ে ঘনিষ্ঠদের কোনো ক্লু দেননি রাষ্ট্রপতি মো.
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় দেশ পানওয়ারকে বলেন, ছয়জনকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন, বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এবং দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাতবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ড. সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার। ফিজার প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। তিনি বলেন, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে আভাস পেয়েছি।
স্বজন আরো বলেন, দেশ ও জনগণের স্বার্থে এবারের রাষ্ট্রপতিকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, দেশি-বিদেশি শক্তির নানা তৎপরতার মধ্য দিয়ে যাবে এ বছর। পরিস্থিতি বিচক্ষণতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। সেই ব্যক্তিকে বেছে নিতে সংসদ নেতা শেখ হাসিনাকে অনেক ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে নিজের আদর্শে অটল ও দলের প্রতি অনুগত একজন রাজনীতিককে রাষ্ট্রপতি হিসেবে বেছে নেওয়ার চেষ্টা করছেন সংসদ নেতা।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, গতকাল সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন নিয়ে ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের মধ্যে আলোচনায় উঠে আসে মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের নাম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য দেশ পানওয়ারকে বলেন, গত মঙ্গলবার সংসদীয় দলের বৈঠকে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের প্রশংসা করেন সংসদ নেতা। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে নানা ষড়যন্ত্র, বিভিন্ন মহল রাষ্ট্রপতিকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা করেছিল। রাষ্ট্রপতি বুদ্ধিমত্তা, সাহস এবং দৃঢ়তার সাথে এটি মোকাবেলা করেছেন।
ওই সভায় দেওয়া বক্তব্যে দলের সভাপতি বলেন, সভাপতি এমন একজন হওয়া উচিত যিনি রাজনৈতিকভাবে রাজনৈতিক সংকট সমাধান করতে পারেন। সংসদ নেতা এমন একজন ব্যক্তিকে নির্বাচিত করতে চান যিনি দলের মধ্যে জনপ্রিয় এবং সাহস ও চেতনা আছে, যিনি অন্য কোনো শক্তির প্ররোচনায় অরাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করতে দেবেন না।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ও মন্ত্রিপরিষদের একজন সদস্য বলেন, শেখ হাসিনা এমন একজন ব্যক্তিকে দেশের সর্বোচ্চ চেয়ারে নিয়োগ দিতে চান যিনি যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজনীতিকে গুরুত্ব দেবেন। এ বিবেচনায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরীকে সভাপতি পদে এগিয়ে রাখছেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, সংসদীয় দলের নেতার বক্তব্যের সারমর্ম হচ্ছে বঙ্গবন্ধুকন্যা একজন রাজনীতিবিদকে রাষ্ট্রপতির চেয়ারে বসাতে চান। মতিয়া চৌধুরী সততা ও বিশ্বস্ততার প্রশ্নে সবসময় আপসহীন থাকবেন।
বামপন্থী রাজনীতির আদর্শ হিসেবে আবির্ভূত মতিয়ার প্রতি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর আস্থা তৈরি হয়েছে অনেক আগেই। যে কোনো পরিস্থিতির মোকাবিলা করার সাহস দেখাবেন। তাছাড়া একজন নারীকে রাষ্ট্রপতি করার ব্যাপারে শেখ হাসিনার আগ্রহও পূরণ হবে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দুই নেতা বলেন, সংসদ সদস্যকে রাষ্ট্রপতি না করার চিন্তা থাকলেও রাজনৈতিক নেতাকে রাষ্ট্রপতি করতে হবে, শেখ হাসিনা এখন বিষয়টি বিবেচনা করছেন।
নতুন রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন তা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে সেই সাথে দেখা যাচ্ছে এই চেয়ারে এমন কাউকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ আশা করছে যিনি রাজনীতিকে গুরুত্ব দেবেন।