বর্তমানে আর্থিক মন্দার মুখে রয়েছে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ তার মধ্যে বাংলাদেশও বিদ্যমান। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে ডলার সংকট লক্ষ্য করা যাচ্ছে মূলত প্রবাসী রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি প্রক্রিয়া বেশ নাজুক অবস্থায় রয়েছে যার কারনে এই সংকট দেখা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই প্রসঙ্গে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছে লেখক শামসুল আলম। নিচে সেটি তুলে ধরে হল –
সরকারের হাতে ডলার নাই, তাই আমদানী প্রায় বন্ধ। এমনকি জাহাজ থেকে খাদ্যদ্রব্য আনলোড করা যাচ্ছে না। আমদানিকারকরা তাদের পণ্যের মূল্য পরিশোধ করলেও সরকার ডলার না ছাড়ার কারণে আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীরা পণ্যের মূল্য হাতে পাচ্ছে না। সামনের রোজা উপলক্ষে বিদেশ থেকে আনা খাদ্যদ্রব্যও আনলোড করতে পারছে না। চট্টগ্রাম বন্দরে বহু জাহাজ আটকে আছে। কোনো জাহাজ দুই মাসের অধিক ঝুলে আছে বন্দরে কিন্তু মাল খালাস করতে পারছে না। দিতে হচ্ছে হাজার হাজার ডলার জরিমানা।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা এখন প্রায় বেকার। সামনে কি হবে কেউ জানে না। কারও কারও ধারণা, যে সমস্ত জাহাজে ভোজ্য তেল, চিনি সহ অন্যান্য আইটেম আটকে আছে, এগুলো যখন খালাস হবে, তখন ক্ষয়ক্ষতি সহ এসব পণ্যের মূল্য হিসাব করলে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ দামে বিক্রি করতে হবে। আর এখন তার প্রস্তুতি পর্ব চলছে মার্কেটে!
তবে, ভয়াবহ খবর হল দেশে ঔষধের সংকট দেখা দিয়েছে। বিদেশি ওষুধ যেমন দেশে পাওয়া যাচ্ছে না, তেমনি দেশে যেসব ঔষধ তৈরি হয়, সেগুলোর কাঁচামালও বিদেশ থেকে আসছে না। এর কারণও ডলার সংকট। আমার এক নিকটজন ইনসুলিন কিনতে গিয়ে ঢাকার কোথাও পাচ্ছে না, এক জায়গায় যোগাযোগ করার পরে জানা গেল যে ভিআইপিদের জন্য কিছু ব্লক করে রাখা হয়েছে, সাধারণ মানুষ পাবে না। যে দেশে ইনসুলিন পাওয়া যায় না সে দেশের কি অবস্থায় আছে, তা বোধগম্য।
এতদস্বত্ত্বেও, সরকারের কিছু সুবিধাভোগিরা প্রচার করছে যে, হাসিনার কাছে ম্যাজিক আছে- সব ম্যানেজ করে ফেলবে। কিন্তু তারা বোধ হয় জানে না, সরকারের অর্থিক সংকট এতই চরমে যে মার্চ মাস থেকে সরকারী চাকুরেদের বেতন আংশিক বন্ধ হয়ে যেতে পারে এমন ধারণা দিয়েছেন কয়েকজন সচিব।
সরকার মনে করছে ধানাই পানাই করে আইএমএফের লোনের একটা কিস্তি পেলেই সংকট কেটে যাবে। আরে ওখানে কয় টাকা, মাত্র আধা বিলিয়ন ডলার! কিন্তু আমার হিসাব বলে, এই লোন তারা পাবে না। আর্থিক খাতে যে সব সাংঘাতিক বিশৃঙ্খলা রয়েছ, বিশেষ করে দেশের ব্যাংকিং সেক্টর যে লুট হয়ে গেছে সে কথাটি বাংলাদেশের মানুষ যেমন জানে, আইএমএফও জানে। বিভিন্ন প্রাইভেট ব্যাংকের মালিকরা ব্যাংকগুলোকে লুট করে নিয়ে গেছে, আর সরকার তাদেরকে প্রটেকশন দিচ্ছে।
এছাড়াও নোট ছাপিয়ে ব্যাংক চালানো, কৃত্রিম ভাবে ডলারের দাম কমিয়ে রাখা, খেলাপি ঋণকে অস্বাভাবিক পন্থায় নবায়ন করা, রিজার্ভের হিসাব ঠিক না থাকা এসব কারণে ঋণ দিবে না আইএমএফ। শ্রীলংকা আমাদের আগে আইএমএফর দ্বারস্থ হয়েছিল, এবং গত সেপ্টেম্বরে তাদের স্টাফ পর্যায়ের মিটিং হয়ে গেছে, কিন্তু অদ্যাবধি লোন পায়নি। পাকিস্তান, নেপালেও একই দশা হয়েছিল। তাছাড়া এই ঋণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সাপোর্ট পাওয়া জরুরী। এটা আছে কি?
দেশের ব্যাংকগুলিতে সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকার লোন খেলাপী হয়ে বসে আছে। আইএমএফ বলেছিল খেলাপী ঋণ কমাতে। কিন্তু খেলাপী ঋণ কমাতে গিয়ে লোটাস কামালের নির্দেশনায় বাংলাদেশ ব্যাংক ভয়াবহ রকমের চালাকির আশ্রয় নেয়। আগে ঋণ রিশিডিউল করতে হলে পাওনা টাকার অর্ধেকটা পরিশোধ করতে হতো, কিন্তু লোটাস কামালের লুটেরা সিস্টেমে এখন ২% টাকা জমা দিলেই ৯৮ পার্সেন্ট খেলাপী ঋণ রিশিডিউল করে নবায়ন করা যাচ্ছে ১০ বছরের জন্য।
এটা ভয়াবহ রকমের চালাকি, যা আন্তর্জাতিক আইনের লংঘন। এ খবর যেমন দেশের মানুষ জানে, আইএমএফ তো আর ঘুমিয়ে নেই। তাই এই বিশাল খেলাপী ঋণের ভারে জর্জরিত সরকারকে আরও লোন দিবে এটা আশা করা বোকামি। শুধু গ্যাস তেলের দাম দফায় দফায় বাড়ালেই সংস্কার হয় না, মাঝখান থেকে শিল্প কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। অলরেডি ৫ হাজার গার্মেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। তারপরে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সিগন্যাল কি তারা জোগড় করতে পারবে? শ্রীলংকা, নেপাল, পাকিস্তান যখন পট-পরিবর্তন ছাড়া আইএমএফের তহবিল পায়নি, বাংলাদেশকে দিতে যাবে কোন দুঃখে?
আমি আগে একটি লেখা লিখেছি, সরকার যদি আইএমএফ লোন পেয়েও যায় তারপরেও তাদের বাঁচার উপায় নাই কেননা ডলারের দাম ডাবল হবে, ব্যাংক নোট ইচ্ছেমত ছাপতে পারবে না, জিনিসপত্রের দাম দ্বিগুণ তিন গুণ হয়ে যাবে, মানুষের কাছে টাকা থাকবে না, জিনিসপত্রের সাপ্লাইও নাই, ফলে দুর্ভিক্ষ এবং গণঅসন্তোষ অবধারিত।
এ অবস্থায় এই সরকারের টিকে থাকার কোনো উপায় নাই। ভয়াবহ দুর্যোগ আসতেছে।
তিন বছর আগে যে কথাটি লিখেছিলাম যে অন্য কারণে পতন না হলেও কেবল ব্যাংক লুটপাট এবং অর্থনৈতিক ধসের কারণে বিনা ভোটের সরকারের পতন ঘটবে। সেই ঘটনাই ঘটতে যাচ্ছে।