সম্প্রতি ডাচ বাংলা ব্যাংকের লুট হয়ে যাওয়া সোয়া ১১ কোটি টাকার অধিকাংশ টাকাই উদ্ধার করতে পেরেছে পুলিশ।মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত আরও ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। এসময় তাদের কাছ থেকে ৫৮ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। লুট হওয়া সোয়া ১১ কোটি টাকার মধ্যে মোট উদ্ধার হয়েছে ৭ কোটি ১ লাখ ১১ হাজার টাকা। সেই সঙ্গে এ পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) বিকেলে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ তথ্য জানান। হারুন অর রশিদ জানান, উত্তরায় ডাচ ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় আরও ৫৮ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া কড়াইল বস্তি থেকে হৃদিয়া ও নেত্রকোনা থেকে মিলন নামে দুইজনকে এবং এ ঘটনার মূল হোতা আকাশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ ঘটনা বাস্তবায়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। সোহেল রানা এবং আকাশ মূল পরিকল্পনা হ্যাচ করে। যদিও সোহেল রানাকে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। ছিনতাইয়ের ঘটনায় কেউ দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে গাড়ি কিনেছেন, কেউ আবার কাউকে ধার দিয়েছেন। মোট ৭ কোটি ১ লাখ ৫৮ হাজার টাকাসহ ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোহেল রানা একসময় মানি প্ল্যান্টে চালকের কাজ করতেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) ডিএমপির তুরাগ থানাধীন দিয়াবাড়ি এলাকা থেকে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা দেওয়ার সময় মানিপ্লান্ট লিংক লিমিটেডের একটি গাড়ি ছিনতাই হয়। এ ঘটনায় গত ১২ মার্চ প্রায় ২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা উদ্ধার করে ৮ জনকে আটক করে মিরপুর গোয়েন্দা বিভাগ।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ ঘটনা বাস্তবায়নে বিভিন্ন স্তরের বিভিন্ন মহল বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। কেউ পরিকল্পনাকারী, কেউ মোবাইল ও সিম সংগ্রাহক, কেউ কেউ ঘটনার সময় ভাড়াটে হিসেবে কাজ করত। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, মূল পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়নকারী হিসেবে কাজ করে ৪/৫ জন। এদের মধ্যে আকাশ ও সোহেল রানা নামে ২ জন ডাকাতির মাস্টারমাইন্ড। সোহেল রানা আগে ম্যানিপ্ল্যান্ট লিংক লিমিটেডের চালক ছিলেন। চালক হওয়ার কারণে তিনি মানিপ্লান্ট লিঙ্ক লিমিটেডের দুর্নীতির বিষয়ে অবগত ছিলেন। তারা কোনো বাধা ছাড়াই মাইক্রোবাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
এছাড়া ছিনতাইয়ের মূল পরিকল্পনাকারী আকাশ টাকা লুট করে মাইক্রোবাসে উঠতে না পারলেও সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। আকাশ তার প্রাক্তন পরিচিত ইমন মিলনের সাথে ডাকাতির টাকা ভাগ করে নেয় এবং তাকে অপারেশনে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। তারা তাকে জনবল নিয়োগের দায়িত্ব দেন। ইমন মিলন তার পূর্ব পরিচিত সানোয়ার হোসেনকে বিষয়টি অবহিত করে জনবল সরবরাহ, সিম সংগ্রহ ও মোবাইল ফোন কেনার দায়িত্ব দেন। সানোয়ার তার নিজ জেলা সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা থেকে ৮টি নতুন সিম ও মোবাইল সেট সংগ্রহ করেন এবং মোট ৯ জন সদস্য সংগ্রহ করেন। পরে ঘটনার ২ দিন আগে তারা সবাই ঢাকায় একত্রিত হয়।
ডিবি সূত্রে জানা গেছে, আকাশ ও সোহেল ডাচ বাংলা ব্যাংকের লুটপাটের বিষয়টি রানা, ইমন মিলন ও সানোয়ারের কাছ থেকে গোপন রাখেন। তারা তাদের বলেছিল যে তারা কিছু অবৈধ হুন্ডি টাকা লুট করবে এবং প্রশাসন সেখানে থাকবে। পরে ঘটনার দিন সবাই কুর্মিটোলায় একত্রিত হয়ে মাইক্রোবাসে ওঠার পর বুঝতে পারে বড় কিছু ঘটতে যাচ্ছে। ডাকাতির পর মূল হোস্ট আকাশ মাইক্রোবাসে উঠতে না পারায় তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা মনে করে আকাশ তাদের হাতে ধরা পড়েছে। শনাক্ত হওয়ার ভয়ে তারা তাদের মোবাইল ফোনগুলো ৩০০ ফুট দূরে ফেলে দেয়। তাই তারা ছুটে যায় ট্রাঙ্ক ভেঙ্গে টাকা লুট করতে। পরে তারা ৩০০ ফুট উঁচু একটি নির্জন স্থানে গিয়ে ব্যাগ ও বস্তায় টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।
এছাড়া গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ডাকাতির ঘটনায় জড়িতরা সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোনা, গোপালগঞ্জ ও বরিশালের বিভিন্ন জেলা থেকে সংগ্রহ করেছে। ডাকাতির পর তারা টাকা ভাগাভাগি করে বিভিন্ন এলাকায় পালিয়ে যায় এবং বিভিন্ন খাতে অনেক টাকা খরচ করে। ফলে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্তকরণ, গ্রেপ্তার ও লুণ্ঠিত অর্থ উদ্ধারে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। ছিনতাইয়ের মূল হোতা আকাশ ও সোহেল রানা লুট হওয়া টাকার বড় অংশ নিয়ে পালিয়ে যায়। তবে আকাশকে আটক করা হলেও সোহেল রানাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ।
ডিবি প্রধান আরো বলেন, এসব ডাকাত বিভিন্ন জেলায় আত্মগোপন করে আছে। টাকা বহনকারী প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে আর কেউ জড়িত আছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একটি মানি ট্রান্সফার কোম্পানি একটি গাড়িতে করে সোয়া ১১ কোটি টাকা পাঠিয়ে বিনা বাধায় টাকা নিয়ে গেল, তা নিয়েও রয়েছে রহস্য। বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ডাচবাংলা ব্যাংকের টাকা লুটের ঘটনাটি নিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে এবং সেই সাথে দেখা যাচ্ছে এই কর্মকান্ডের সাথে কে বা কারা রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে ইতিমধ্যে সোয়া ১১ কোটি টাকার প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ।