বর্তমান সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষনা করেছে তবে তা সত্বেও বিভিন্ন অবৈধ পথে আসছে মাদক এবং এই মাদকের কবলে পড়ে বর্তমান যুব সমাজ নেতিবাচক প্রভাবের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত দেখা যাচ্ছে এই সব মাদকের নতুন নতুন পদ আসছে এবং সেই সাথে দেখা যাচ্ছে ক্রমশ তা ছড়িয়ে পড়ছে দেশ.
‘ডেভিলস ব্রেথ’ বা ‘শয়তানের শ্বাস’ নামে পরিচিত স্কোপোলামিন নামক ড্রাগের প্রভাবে ফরিদপুরে একাধিক ব্যক্তি তাদের মূল্যবান জিনিসপত্র স্বেচ্ছায় তুলে দিয়েছেন অপরাধীদের হাতে। এমন দুটি ঘটনার শিকার ভুক্তভোগীরা জিডি করেছেন থানায়।
সর্বশেষ ফরিদপুরে এই চক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন গোয়ালচামট গৌর গোপাল আঙিনা এলাকার বাসিন্দা মো. ইদ্রিস তালুকদারের স্ত্রী আলেয়া বেগম।
তার নাতি কাজী জেবা তাহসিন জানান, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তার নানা ও নানু ব্যাংক থেকে পেনশনের টাকা তুলে বাড়ি ফেরার জন্য শহরের ইমাম স্কয়ার থেকে একটি অটোরিকশায় উঠেন। ঐ রিকশায় চালক ও দুজন যাত্রী ছিলেন। তারা নানার সামনে চালকের পাশে আর নানুর পেছনের সিটে বসেন। এ সময় অটোতে বসা দুজন তার নানুকে নিচে পড়ে থাকা একটি কাগজ দেখিয়ে বলেন, দেখেনতো এটি আপনার জরুরি কোনো কাগজ কিনা।
তখন নানু (আলেয়া বেগম) বলেন, আমিতো চশমা আনিনি। একথা বলার পরে তারা কাগজটি আলেয়া বেগমের নাকের কাছে নিয়ে দেখায়। এরপরই আলেয়া বেগম তাদের কথামতো তার গলার চেইন, কানের দুল ও হাতের আংটি তাদের হাতে খুলে দেন।
জেবা জানান, সামনে বসে থাকা তার নানু এ সময় আলেয়া বেগমকে বলতে থাকেন- ‘কি করছো?’ তাতেও হুশ হয়নি তার। এরপর তারা এসব মালামাল নিয়ে ঐ দম্পতিকে কিছু দূর পর্যন্ত নিয়ে মিয়া পাড়া সড়কের কাছে নামিয়ে দেয়। যাওয়ার সময় তারা ভাঁজ করা ঐ কাগজটি তার হাতে ধরিয়ে দেয়। যার মধ্যে সোনালি রঙের প্লাস্টিক জাতীয় কিছু ছিলো।
এদিকে, বাড়ি ফেরার পরও অনেকটা সময় মোহগ্রস্ত ছিলেন আলেয়া বেগম। অনেক সময় পর তার ছেলের জিজ্ঞাসাবাদে সব খুলে বললে তারা বুঝতে পারেন প্রতারক চক্রের খপ্পড়ে তারা সবকিছু হারিয়েছেন৷
জেবা তাহসিন বলেন, সম্ভবত পেনশনের টাকা তোলার বিষয়টি তারা জানতো না। যেকারণে তারা টাকার কথা জিজ্ঞেস করেনি।
এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মঙ্গলবার একটি জিডি করা হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনেও এমন আরো একটি ঘটনার অভিযোগ পেয়েছেন তারা। ঐ ঘটনায় ভুক্তভোগী তার টাকা ও মোবাইল ফোন তুলে দিয়েছেন অপরাধীদের হাতে। আঁখি ইসলাম শওরিন নামে একজন জানান, তার মায়ের সঙ্গেও এমনটি ঘটেছে কয়েকদিন আগে।
জানা গেছে, অপরাধীদের টার্গেট হওয়ার পর তারা এই ভয়ংকর মাদকের শিকার হয়ে নিজের কাছে থাকা সবকিছু সামান্য অনুরোধেই তুলে দেয় অপরাধীদের হাতে। টাকা-পয়সা স্বর্ণালংকার, মোবাইল, এমনকি নিজের ইজ্জত পর্যন্ত স্বেচ্ছায় হারাতে হয় তাদের খপ্পরে পড়লে।
এ ব্যাপারে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, অভিযোগগুলো গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হয়েছে। সিসি ক্যামেরা দেখে জড়িত অপরাধীদের শনাক্ত করে গ্রেফতারে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, এ ব্যাপারে জনসাধারণকেই সচেতন হতে হবে। কারণ এসব অপরাধে জড়িতরা একটি অপরাধ করে স্থান ছেড়ে করে অন্যত্র চলে যায়। কারো কাছে তাদের তথ্য থাকলে জানানোর অনুরোধ জানান তিনি।
উল্লেখ্য, নানা ধরনের বিদেশি মাদক কোন না কোনভাবে দেশে ঢুকছে এবং তা পৌছে যাচ্ছে মাদকসেবিদের কাছে। বর্তমানে দেখা গেছে ‘ডেভিলস ব্রেথ’ বা ‘শয়তানের শ্বাস’ নামে পরিচিত স্কোপোলামিন নামক ড্রাগের প্রভাব দেখা দিয়েছে ফরিদপুরে