হুন্ডি মূলত ব্যাংকিং নিয়ম অনুসরণ করে না বলে সরকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়। তবে এই হুন্ডির মাধ্যমে টাকা আদানপ্রদান এর ক্ষেত্রে অর্থ পাচারকারীরা বিশেষভাবে লাভবান হয়ে থাকে। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী এটি অপরাধ। এর জন্য শুধু বাংলাদেশেই নয়, অনেক দেশেই এর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই বিষয় নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন লেখক আব্দুল হাই সঞ্জু। নিচে সেটি তুলে ধরা হল –
হুন্ডিতে লাভবান হয়েছে বাংলাদেশের অর্থ পাচারকারীরা এবং রাজনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছে আওয়ামীলীগ। অর্থ পাচারকারীরা কীভাবে লাভবান হয়েছে, তা ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই। চলুন বোঝার চেষ্টা করি, আওয়ামীলীগ কীভাবে লাভবান হয়েছেঃ
১)অর্থ পাচারকারীরা আওয়ামীলীগেরই লোক অথবা স্বার্থান্বেষী লোক, যারা স্বার্থের কারণে আওয়ামীলীগকে সমর্থন এবং সহায়তা করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতেও হয়তো তাঁরা এই সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
২)হুন্ডির কারণে দেশের চুরি করা অর্থ বিদেশে পাঠাতে হয়নি, দেশেই থেকে গেছে। এর উপকার দেশেই থেকে গেলো। অর্থাৎ, চুরির টাকা হলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে বণ্টন হয়ে যাওয়ার কারণে এই টাকার সুষম বণ্টন হয়েছে। অর্থনীতিতে এই সুষম বণ্টনের একটা ইতিবাচক দিক আছে। এতে করে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বজায় ছিল এবং গণঅসন্তোষ সৃষ্টি হয়নি। ফলে রাজনৈতিকভাবে আওয়ামীলীগ গণবিক্ষোভের সম্মুখীন হয়নি।
কিন্তু এভাবে পাচার হতে থাকলে দেশের আর্থিক খাতে একটা গহ্বর সৃষ্টি হয়। এই গহ্বরটিই এখন স্পষ্ট হচ্ছে। টাকার হিসাব আছে, কিন্তু টাকা নাই। এই টাকা কোথায় গেলো? এই টাকা জনগণের পেটেই গেছে, কিন্তু কাগজে-পত্রে এই তথ্য প্রমাণ করা সম্ভব নয়। এখানেই ধরা খাচ্ছে আওয়ামীলীগ। ধরা খেতে না চাইলে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত টাকা পাচারের এবং টাকা চুরি করার এই সুবিধা অব্যাহত রাখতে হবে আওয়ামীলীগকে। সুবিধা বন্ধ করে দিলে কিছুদিনের মধ্যেই আওয়ামীলীগ সরকারের পতন অনিবার্য।
অর্থনীতির আরেকটা ধর্ম হচ্ছে চলমান থাকা। অর্থাৎ, অর্থের আসা-যাওয়া অব্যাহত থাকা। আসা-যাওয়া অব্যাহত থাকলে ভেতরের গেঞ্জাম প্রকাশিত হয়না, কিংবা লুকিয়ে রাখা যায়। কিন্তু এই মুহূর্তে বাংলাদেশ থেকে রেমিটেন্স যাচ্ছে খুব বেশী, ঢুকছে কম। ফলে গহ্বরটি স্পষ্ট হচ্ছে।
বাংলাদেশের টাকা বিদেশে অচল। সুতরাং বাংলাদেশের ব্যাঙ্কে টাকার সংকট হবেনা- এ কথাও ঠিক না। কারণ দেশে দারিদ্র দেখা দিলে টাকার সুসম বণ্টন (ক্রয়ক্ষমতা) থাকেনা। মুষ্টিমেয় লোকের হাতে টাকা আটকে যায়। ফলে অর্থনৈতিক কার্যক্রম ধীর হয়ে যায়। তখন এসব মুষ্টিমেয় লোক তাদের টাকা কীভাবে গচ্ছিত রাখেন, তাঁর ওপর ব্যাঙ্কের তারল্য অনেকাংশে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।