এবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ঘটেছে একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা। সেখানে অক্সিজেন প্লান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণে না ফেরার দেশে চলে গিয়েছে ৬ জন এবং অন্তত ২০ জনকে নেওয়া হয়েছে হাসপাতালে।জানা গেছে বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই তীব্র ছিল যে দুর্ঘটনাস্থল থেকে প্লান্টের লোহার টুকরো উড়ে গেলে আধা কিলোমিটার দূরে একজনের মৃত্যু হয়। তার নাম মোঃ শামসুল আলম। এ সময় তিনি একটি দোকানে বসে ছিলেন।
শামসুল আলম নামে ৬৫ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল, লোকজন তাকে ধরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বৃদ্ধের মৃত্যু ঘটানো ছাড়াও গাছের বিস্ফোরণে শরীরের অনেক অংশ উড়ে যেতে দেখে স্থানীয়রা। ঘটনাস্থল থেকে দূরের বাড়িগুলোও কেঁপে ওঠে; জানালার কাঁচ ভেঙে গেছে বলে জানান তারা।
শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার কদমরসুল ইউনিয়নের ছোট কুমিরা এলাকায় সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। প্রচণ্ড বিস্ফোরণের পর একটি সিলিন্ডারে আগুন ধরে যায়। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
আহতদের মধ্যে ৯ জনের পরিচয় জানা গেছে। আহতরা হলেন- নূর হোসেন (৩০), মো. আরাফাত (২২), মোতালেব (৫২), ফ্যান্সি (৩০), জসিম উদ্দিন (৪৫), নারায়ণ (৬০), ফোরকান (৩৫), শাহরিয়ার (২৬) ও জাহিদ হাসান (২৬) । আহত ১৮ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের অনেকের শরীর থেকে হাত-পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আহতদের চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আহত ও নিহতদের নিয়ে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স আসতে শুরু করেছে। খবর পেয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে উৎসুক মানুষের ভিড় বাড়লে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরাও হাজির হন। এ সময় আহত ও নিহত স্বজনদের কান্নায় আশপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। বিকৃত লাশ এনে প্যাকেটে ভর্তি করা হয়। এছাড়া গুরুতর আহতদের ট্রলিতে করে হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের কারও চোখে, কারও মাথায়, কারও হাতে-পায়ে গুরুতর জখম হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। কমিটিকে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে পাঁচ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক এবিএম ফখরুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এ কমিটি গঠন করেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকায় সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট রয়েছে। এই প্ল্যান্টে সিলিন্ডারে গ্যাস বিক্রি হয়। সেখানে কাজ করেন অর্ধশতাধিক শ্রমিক। শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এই প্ল্যান্টে গ্যাস ভরার সময় হঠাৎ একটি সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণের পরপরই আগুন লেগে যায়। বিস্ফোরণের সময় কর্মরত শ্রমিকরা কারখানার ভেতরেই ছিলেন। বিস্ফোরণে শরীরের কিছু অংশ উড়ে গেছে।
এ সময় শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের হাত থেকে বাঁচতে তারা ছুটতে শুরু করে। খবর পেয়ে আগ্রাবাদ, বায়েজিদ ও সীতাকুণ্ড থেকে ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ধার কাজ শুরু করে। উদ্ধারকর্মীরা আহতদের উদ্ধার করে চমেক হাসপাতাল ও পার্শ্ববর্তী হাসপাতালে পাঠায়।
উল্লেখ্য, এর আগে সীতাকুণ্ডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে এবং সেখানে দফায় দফায় বিস্ফোরণের ফলে না ফেরার দেশে চলে গিয়েছিল অনেকে। ওই অগ্নিকান্ডে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছিল ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েকটি ইউনিট এবং আগুন নেভাতে গিয়ে অনেক কর্মীও দগ্ধ হয়েছে।