এবার রাজশাহীতে ঘটেছে একটি দুঃখজনক ঘটনা, সেখানে কামরুন নাহার কনা নামে এক গৃহবধূ পরপর তিন মেয়ের কারণে স্বামীর সংসারে ঠাঁই হলো না। এছাড়াও পরিবারের সদস্যরা তাকে বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে বলে জানান তিনি। জানা গিয়েছে কামরুন নাহার কনা রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানার বহরমপুর এলাকার কামাল হোসেনের বড় মেয়ে। বাবা পেশায় ট্রাক চালক।
জানা যায়, প্রায় সাত বছর আগে রাজপাড়া থানার কেশবপুর থানা গেট ২ নম্বর এলাকার মুদি ব্যবসায়ী চঞ্চলের সঙ্গে কনার বিয়ে হয়। বিয়ের সময় কিছু টাকা যৌতুক হিসেবে দেওয়া হয়। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই স্বামী চঞ্চল ও তার পরিবার কনেকে নানাভাবে জ্বালাতন করতে থাকে। বাবা না থাকা সত্ত্বেও সময়ে সময়ে স্বামীকে টাকা দিতে হয়েছে।
কনের পরিবারের অভিযোগ- বিয়ের পর থেকেই কনেকে জ্বালাতন করে আসছিল চঞ্চল। এই ধারাবাহিকতায় জ্বালাতনের একটি বড় কারণ পরপর তিনটি কন্যা সন্তান হওয়া।
কনা বলেন, পরপর তিনটি মেয়ে থাকায় শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে ভুল বোঝে। কেউ কেউ গালি দিয়ে কথা বলে। আমি আমার স্বামীকে বোঝানোর চেষ্টা করলেও তিনি আমাকে বিরক্ত করেন। আমার ছেলের কেন সন্তান হচ্ছে না- এটাই ছিল স্বামীর প্রধান অভিযোগ।
তিনি বলেন, মেয়ের ইস্যুকে বড় ইস্যু হিসেবে দেখলেও তারা সবসময় আমার থেকে মুক্তির পথ খুঁজে পান। নানা কৌশলে আমাকে আমার স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যদের রোষানলে পড়তে হয়েছে। পরিস্থিতি এমনই – আমি যা করি তার প্রতি তাদের ঘৃণা এবং ঘৃণা নিয়ে আমাকে বিরক্ত করে। সেটা ভালো কাজ হোক বা অনিচ্ছাকৃত ভুল হোক।
সাত বছর ধরে এভাবেই স্বামীর সংসার আঁকড়ে ধরে আছি। কিন্তু অবশেষে তারা সংগঠিত অর্থ চুরির অভিযোগে আমাকে বের করে দেয়। কিন্তু তারপরও আমি আমার স্বামীর সংসার ছাড়তে চাইনি।
কনা বলেন, আমার বড় মেয়ে সুমাইয়ার বয়স ৫ বছর। মেঝের বয়স ৩ এবং সমস্ত ছোটদের ১০ মাস। ছোট মেয়ের জন্মের সময় শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। এ কারণে অপারেশনের মাধ্যমে আমাকে বন্ধ্যাকরণ করা হয়তখন স্বামীরও কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু মন থেকে মেনে নিতে পারেননি। এরপর থেকে বিরক্ত সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। মারধর ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।
তিনি বলেন, প্রায় পাঁচ মাস আগে আমার শাশুড়ি মারা যান। এদিকে স্বামী চঞ্চলের এক ভাই মারা গেছেন। এরপর থেকেই পরকীয়ার জড়িয়ে পড়েন চঞ্চল। এসব জেনেও স্বামীর কাছে থেকেছি শুধু সংসারের টানে, তিন অবুঝ শিশুর মুখের দিকে তাকিয়ে। এরই মধ্যে শাশুড়ির কুলখানির দিন স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন টাকা চুরির ঘটনা ঘটায়। এর জন্য আমাকে একতরফাভাবে দায়ী করা হচ্ছে।
আমি যতবারই বলার চেষ্টা করতাম যে আমি টাকার ব্যাপারে কিছুই জানি না, আমার স্বামী আমাকে প্রহার করে। শেষ পর্যন্ত তিন সন্তানসহ আমাকে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়। ফলে তিনি দরিদ্র বাবা-মায়ের বাড়িতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বামীর বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য রাসিকের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুহুল আমিন টুটুর কাছে অভিযোগ করেছেন কনে। গত ৯ নভেম্বর কাউন্সিলর উভয় পক্ষকে সমঝোতার জন্য নিজ কার্যালয়ে ডেকে নেন। কিন্তু চঞ্চল স্বামী স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে রাজি হননি। চুক্তি ভেঙ্গে গেলে চঞ্চলের ভাইরা ঘটনাস্থলে কনার চাচাতো ভাই নাহিদকে আ_হত করে।
রাসিক কাউন্সিলর টুনু বলেন, আসলে ঘটনার কারণ অন্যত্র। টাকা চুরি একটি অজুহাত. মেয়েটির তিনটি ছোট বাচ্চা রয়েছে। এভাবে তাড়িয়ে দেওয়া অমানবিক। সংসারটা ঠিক করার সব চেষ্টা করেছি। এখন আমি উভয় পক্ষকে আইনি পথ বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।
এলাকায় তদন্তে আরও জানা যায়, কনাকে বিয়ে করার আগে চঞ্চলের আগের বিয়ে ছিল। সেই তথ্য গোপন করে কনাকে বিয়ে করেন তিনি। স্বামী চঞ্চলের আগের স্ত্রী সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তিনি হঠাৎ মারা যান।
চঞ্চল তার আগের স্ত্রীকেও বিরক্ত করতো বলে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানা গেছে। ঠিক কী কারণে আগের স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছিল তা অনেকেরই অজানা।
এদিকে সর্বশেষ কনা স্বামী চঞ্চলসহ তার পরিবারের সদস্যদের দায়ী করে আরএমপির রাজপাড়া থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন।
এদিকে কামরুন নাহার কনা এর এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন রাজপাড়া থানার ওসি সিদ্দিকুর রহমান, ঘটনার বিষয় নিয়ে তিনি বলেছেন পুলিশ অভিযোগটি তদন্ত করছে। তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।