দুবাইয়ে জুয়েলারি শপ উদ্বোধনের জন্য বাংলাদেশ থেকে তারকারা গিয়েছিলেন এবং সেখানেই যেটাই বাধে বিপত্তি তার কারন হচ্ছে দুবায়ের এই জুয়েলার্স এর মালিক এর আসল পরিচয় প্রকাশ্যে চলে আসে। পুলিশ পরিদর্শক মামুন হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি তিনি, তার নাম হচ্ছে আরভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম। বিলাসবহুল শহর দুবাইতে বিপুল সম্পদের মালিক তিনি । বুর্জ খলিফা টাওয়ারের ৬৫ তলায় একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন তিনি। তারও ৪-৫টি ফ্ল্যাট আছে। এছাড়াও একটি সুইমিং পুল, বাগান সহ একটি বড় ডুপ্লেক্স বাড়ি তৈরি করেছেন।
এ ছাড়া ‘আরাভ জুয়েলার্স’ নামের সোনার দোকানের লোগো তৈরিতে খরচ হয়েছে ৪০ কোটি টাকা। দোকানে রেকর্ড পরিমাণ সোনা মজুদ করেছে আরভ। পুরনো সব ব্যবসায়ীর চেয়ে কম দামে সোনা বিক্রির ঘোষণা দেন তিনি।
দুবাইয়ের একটি স্বর্ণ সমিতির সভাপতি হন। যুক্তরাষ্ট্রে ‘আরভ জুয়েলার্স’-এর আরেকটি শাখা খোলার ঘোষণা দিয়েছেন।
দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা টাওয়ারের ৬৫ তলায় একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন তিনি। বিলাসবহুল শহর দুবাইয়ে তার আরও ৪-৫টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এছাড়াও একটি সুইমিং পুল, বাগান সহ একটি বড় ডুপ্লেক্স বাড়ি তৈরি করেছেন।
কিন্তু ফেরিওয়ালা বাবার ছেলে আরভ খালি হাতে ঢাকায় এসেছে। হত্যা করে দেশ ত্যাগ করার পর তিনি ভারতের বস্তিতে ছিলেন। আর এখন তিনি হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তবে এই সম্পদের উৎস সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু জানাতে পারেননি তিনি। তবে ফেসবুক লাইভে তিনি বলেন, তার কর্মকাণ্ডে পুলিশের একজন শীর্ষ কর্মকর্তার সহযোগিতার অভিযোগ সত্য নয়।
বুধবার ‘আরভ জুয়েলার্স’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্বের সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ দেশের অনেক তারকা উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিবি) জানিয়েছে, তদন্তের স্বার্থে সাকিবসহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।
দেশজুড়ে যখন বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক চলছে, তখন ফেসবুকে লাইভে আরাভ খান এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন। এ অবস্থায় ইন্টারপোলের মাধ্যমে আরভকে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ডিবি। এদিকে, সমালোচনার মধ্যে স্বর্ণের দোকানের উদ্বোধনে উপস্থিত হয়ে অতিথি হয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য শাকিবকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন আরভ।
তবে ইভেন্টে অংশগ্রহণ শেষে বৃহস্পতিবার সকালে দেশে ফিরেছেন সাকিব। এর মধ্যে আরভ ৬৪ জেলায় একটি করে মসজিদ নির্মাণের ঘোষণা দেন। এ নিয়ে তার গ্রাম গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। স্থানীয়ভাবে সোহাগ মোল্লা নামে পরিচিত আরভ দিনমজুরের ছেলে হয়েও কীভাবে এত টাকার মালিক হলেন, তা এখন সবার মুখে মুখে।
কোটালীপাড়া থানা পুলিশ জানায়, এ পর্যন্ত আরভের বিরুদ্ধে ৯টি ওয়ারেন্ট পাওয়া গেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এলাকায় তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ জানান, পুলিশ পরিদর্শক হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি আরভ। বিষয়টি জানা সত্ত্বেও মিডিয়ার মাধ্যমে শাকিবসহ অন্য তারকারা সেখানে হাজির হওয়া দুঃখজনক। আমরা তাদের জানানোর পরও তারা দুবাই গিয়ে আরভ খানের স্বর্ণের দোকানের উদ্বোধনে অংশ নেয়। এটা খুবই দুঃখজনক. কেন তারা এটা করেছে, আমরা জানি না। তবে আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব এবং ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আইনি ব্যবস্থা নেব।
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, কোটালীপাড়ায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোহাগ মোল্লা ওরফে আরভ আশুতিয়া ওই গ্রামের দিনমজুর মতিয়ার রহমান মোল্লার ছেলে। মতিয়ার বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলায় ফেরি করে রুপার হাঁড়ি বিক্রি করতেন। সোহাগ ১৯৮৮ সালে এখানে জন্মগ্রহণ করেন।
সোহাগ ২০০৫ সালে চিতলমারী সদরের একটি স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। দারিদ্র্যের কারণে তার আর কোনো লেখাপড়া হয়নি। চিতলমারী থেকে ভাগ্যের সন্ধানে ২০০৮ সালে ঢাকায় চলে আসেন। তিনি ঢাকায় গিয়ে নাম পরিবর্তন করে মোল্লা আপন রাখেন। প্রবেশ করেছে অপরাধ জগতে।
ঢাকায় পুলিশ হত্যাসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এরপর পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে সোহাগ মোল্লা ওরফে মোল্লা আপন, ওরফে রবিউল ইসলাম রবি, ওরফে শেখ হৃদি, ওরফে আরভ খান ভারতের কলকাতায় পালিয়ে যায়। সেখান থেকে দুবাই যান আরাভ খান।
দুবাইতে আরাভ খানের এই সোনার দোকান খোলার খবর জানাজানি হলে এলাকায় আলোচনার ঝড় ওঠে। সবার মুখে একই প্রশ্ন- সোহাগ মোল্লা রাতারাতি এত টাকার মালিক হলেন কীভাবে? কথা হয় সোহাগের মামাতো ভাই ফেরদৌস মোল্লার সঙ্গে। সোহাগ ওরফে আরাভ খান অল্প সময়ে এত টাকার মালিক হওয়ায় তিনি বিস্ময়ও প্রকাশ করেন। চাচাতো ভাই ফেরদৌস জানান, কয়েকদিন আগে সোহাগ তার দুই বোন ও বাবা-মাকে নিয়ে দুবাই যায়।
হিরণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাজাহারুল আলম পান্না জানান, সোহাগ মোল্লা ওরফে আরভ খান একই ব্যক্তি। ওর বাড়ি আমার গ্রামে। সে দরিদ্র পরিবারের সন্তান। গত পাঁচ-সাত বছর ধরে তিনি এলাকায় আসেন না। হঠাৎ করে তিনি কিভাবে এত টাকার মালিক হয়ে গেলেন তা আমাদের বোঝার বাইরে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র ও আরভের ঘনিষ্ঠজনরা জানান, রবিউল ইসলাম ওরফে আরভ পরিদর্শক হত্যা মামলার অভিযোগপত্রের ৮ নম্বর আসামি। তিনি মার্কিন গ্রিন কার্ডধারী। একটি কানাডিয়ান পাসপোর্ট আছে. রবিউল ২০২০ সালে ভারতীয় পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন। তার ভারতীয় পাসপোর্ট নং ইউ ৪৯৮৫৩৮৯ ।
ওই বছরের ২৮ জুলাই কলকাতা থেকে ইস্যু করা পাসপোর্টে রবিউলের নাম উল্লেখ ছিল আরভ খান। তার বাবার নাম জাকির খান এবং মা রেহানা বিবি খান। পাসপোর্টের মেয়াদ ২৭ জুলাই, ২০৩০ -এ শেষ হবে। সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার তাকে ৩১ অক্টোবর, ২০২১-এ একটি আবাসিক অনুমতি দিয়েছে। এই পারমিটের মেয়াদ আগামী বছরের ৩০ অক্টোবর শেষ হবে।
জানা যায়, ভারতে যাওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগোনা জেলার উদয় সংঘ ক্লাবের কাছে দীর্ঘদিন লুকিয়ে ছিলেন আরভ। একটি হত্যা মামলার আসামি হওয়ার পর সে পালিয়ে তার স্ত্রীকে কর্তাবাদ এলাকার নরেন্দ্রপুর বস্তিতে নিয়ে যায়। কিন্তু এখন তিনি দুবাইয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন। তিনি বস্তিতে জাকির হোসেনের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। অভিযোগ, আরভ জাকির এবং তার স্ত্রী রেহানা বিবির সাথে বন্ধুত্ব করেছিল এবং তাদের পিতামাতার পরিচয় দিয়ে তার এবং তার স্ত্রীর ভারতীয় পাসপোর্ট জাল করেছিল। তবে রেহানা বিবির দাবি, আধার কার্ড দিলেও তিনি পাসপোর্ট তৈরির বিষয়ে কিছুই জানেন না।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, ইন্সপেক্টর মামুন আমাদের পুলিশের একজন মেধাবী কর্মকর্তা ছিলেন। তাকে শুধু হত্যাই করা হয়নি, তার লাশ কালীগঞ্জের জঙ্গলে ফেলে দেওয়া হয়েছে যাতে তার সন্ধান না পাওয়া যায়। এ ঘটনার পর একটি মামলা দায়ের করা হয়, যা ডিবি তদন্ত করে। হত্যা মামলার আসামি আরভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম পালিয়ে গেলেও তিনি একজন ভুয়া আসামিকে কারাগারে রাখেন।
পরে ডিবির তদন্তে ভুয়া আসামির মামলাটি সামনে আসে। এদের মধ্যে প্রধান আসামি দুবাইয়ের স্বর্ণের দোকানের মালিক রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান ভারতে পালিয়ে গেছে। সেখান থেকে ভারতীয় পাসপোর্টে দুবাই যান। তার বিরুদ্ধে ১২টি ওয়ারেন্ট রয়েছে। আরভ খান ডিবির রবিউল বলে নিশ্চিত হওয়া গেলে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যখন কোনো মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়, তখন সব আসামির হদিস খোঁজা হয়।
আরাভ খানের বিভিন্ন ছবি মুক্তি এবং সাকিব আল হাসান স্বর্ণের দোকান খোলার বিজ্ঞাপন দিচ্ছিলেন টেলিভিশন ও ফেসবুকে। সব মিলিয়ে আমরা তথ্য পাই আরাভ খান পুলিশ হত্যা মামলার আসামি রবিউল ইসলাম। রবিউল ইসলাম হত্যার পর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নাম ধরেন।
ক্রিকেটার সাকিব বা অন্য যারা দুবাই গেছেন, ডিবির কারও সঙ্গে কথা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশিদ বলেন, সাকিবসহ অন্যদেরও জানানো হয়েছে। পুলিশ হত্যা মামলার আসামিকে জানানোর পরও ফোন করে কেন তারা দুবাই গেল জানি না।
প্রসঙ্গত, দুবাইতে জুয়েলার্স উদ্ভোদনে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটার শাকিব আল হাসান এবং বিনোদন জগতের বেশ কয়েকজন তবে সেই জুয়েলার্সের মালিকের পরিচয় প্রকাশ হওয়ার পর থেকে তা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচন সমালোচনা।