মহামারীতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিল তবে বাংলাদেশ সেই সময়টাতে বেশ ভাল ভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছিল কিন্তু আস্তে আস্তে তা কমতে শুরু করেছে এই ব্যাপারে বিশ্ব ব্যাঙ্ক বাংলাদেশের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে। তার জানিয়েছে বিশ্বের শীর্ষ প্রবৃদ্ধির দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও প্রবৃদ্ধির কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে।
বর্তমান প্রবৃদ্ধির কাঠামো টেকসই নয়। আরও সংস্কার ছাড়া, ২০৩৫ থেকে ২০৩৯ সালের মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশের নিচে নেমে যেতে পারে। বিশ্বব্যাংক বিশ্বাস করে যে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে এবং একই সাথে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ও উন্নয়নের প্রবৃদ্ধির হারকে ত্বরান্বিত করার জন্য একটি শক্তিশালী সংস্কার এজেন্ডা প্রয়োজন। গত পাঁচ দশকে অগ্রগতি।
এছাড়া বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিতে তিনটি প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করেছে বিশ্বব্যাংক। সেগুলো হলো- বাণিজ্য প্রতিযোগিতার ক্ষতি, দুর্বল ও দুর্বল আর্থিক খাত এবং ভারসাম্যহীন ও অপর্যাপ্ত নগরায়ন। এই তিনটি বাধা দূর করতে পারলে উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং ভবিষ্যতে প্রবৃদ্ধি আরও টেকসই হবে বলে মন্তব্য করেছে বিশ্বব্যাংক।
বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে প্রকাশিত ‘চেঞ্জ অব ফেব্রিক’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংকের এ পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দ্রুত বর্ধনশীল দেশের একটি। তবে আত্মতুষ্টির কোনো কারণ নেই। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কখনই স্থায়ী প্রবণতা নয়। দ্রুত উন্নয়নশীল দেশগুলির বৃদ্ধি সবসময়ই উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে থাকে। যাইহোক, কয়েকটি দেশ দীর্ঘ সময়ের জন্য উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। শীর্ষ দশে থাকা দেশগুলির মাত্র এক-তৃতীয়াংশ পরবর্তী দশকে উচ্চ প্রবৃদ্ধির অভিজ্ঞতা অব্যাহত রেখেছে। যে দেশগুলো গত দশকে (২০১০ -১৯ ) শীর্ষ দশে ছিল তারা আগের দশকে শীর্ষ দশে ছিল না।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে বিশ্বব্যাংক কিছু সুপারিশ করেছে। যেমন, রপ্তানির প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে পণ্যের বৈচিত্র্য প্রয়োজন। এ ছাড়া বাংলাদেশের শুল্কহার অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি, যার কারণে বাণিজ্য সক্ষমতা কমছে।
ব্যাংকিং সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক বলছে, ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাংকিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কিন্তু দেশের আর্থিক খাত এতটা গভীর নয়। গত চার দশকে আর্থিক খাতে উন্নতি হলেও তা এখনও পর্যাপ্ত নয়। অন্যদিকে, বাংলাদেশের উন্নয়নের পরবর্তী পর্যায়ের জন্য আধুনিক নগরায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সুষম আধুনিক নগরায়ণের দিকে নজর দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এছাড়া বিশ্বব্যাংকের রিড ইকোনমিস্ট কনসালটেন্ট জাহিদ হোসেন, সিনিয়র ইকোনমিস্ট নোরা ডিহেল, সেনেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান, এসবিকে ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সোনিয়া বশির কবির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেশের সামগ্রিক উন্নতির বড় একটি অভিপ্রায়,তবে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যেভাবে তাদের প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ধরে রাখে এবং তাদের কাঠামোগত পরিবর্তন প্রয়োজনে আনা হয় সেভাবে বাংলাদেশেও প্রবৃদ্ধির কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে অন্যথায় কাঙ্খিত লক্ষে পৌঁছানো কঠিন