বাংলাদশের পুলিশের আইজিপি বেনজির আহমেদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট সফরে গিয়েছেন এবং দেখা গেছে তার সফরকে কেন্দ্র করে প্রবাসীরা বেশ উদ্বিগ্ন ছিল, তবে তার এই সফর নিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনাও বিদ্যমান ছিল এ ব্যপারে পুলিশ প্রধান ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, তার নিউইয়র্ক সফরকে কেন্দ্র করে অনেক ধরণের ‘উদ্ভট’ ও ‘মিথ্যা’ কথা ছড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, একটি পক্ষ অনেক অসত্য ও মিথ্যা কথা বলেছেন।
অনুমান নির্ভর কথা বলেছেন। এখন সবগুলো যখন মিথ্যা প্রমাণিত হলো, তখন তারা দেশবাসীর সামনে কিভাবে মুখ দেখাবেন, এটাই হলো আমার বিরাট কৌতুহলের জায়গা। একাত্তর টেলিভিশনকে দেয়া একটি বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতিসংঘ পুলিশ প্রধানদের তৃতীয় সম্মেলনে যোগ দেয়ার জন্য এই মুহূর্তে তিনি নিউইয়র্ক সফর করছেন। এই সফরে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ। জাতিসংঘ পুলিশ প্রধানদের সম্মেলন ছাড়াও, এবার তিনি যোগ দিয়েছেন একটি নাগরিক সংবর্ধনায়।
সবশেষ স্থানীয় সময় শুক্রবার জাতিসংঘের পুলিশ প্রধান লুইস লিবেরিও কারিলহোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক একটি বৈঠক করেন তিনি। জাতিসংঘ সদরদপ্তরে হওয়া এই বৈঠক শেষে তিনি একাত্তর টেলিভিশনকে বলেন, নানা কারণে এবার তার আমেরিকা সফর অনেকটাই ভিন্ন।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সফর যেহেতু আমার জীবনে অসংখ্যবার করেছি, সুতরাং এখানে আমার মধ্যে কোন আলাদা অনুভূতি নেই। কারণ এই নিউইয়র্কের শহরের সমস্ত রাস্তাঘাট আমি চিনি। এখানকার সংস্কৃতি সম্পর্কে জানি, এখানে বসবাস করেছি, চাকরি করেছি। কিন্তু দেশবাসীর কাছে আলাদা আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল এটা। আমরা দেখেছি যে এই সফরকে কেন্দ্র করে বড় ধরণের অপপ্রচার চালানো হয়েছে।
বাংলাদেশের পুলিশ প্রধানের একটি বিদেশ সফরকে কেন্দ্র করে এর আগে এত আলোচনা কখনোই হয়নি। আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ কি জাতিসংঘের পুলিশ প্রধানদের তৃতীয় সম্মেলনে যোগ দিতে পারবেন?
এমন প্রশ্ন ওঠার কারণ ছিলো তার উপর দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি নিউইয়র্ক সফর করছেন। এরপর তাকে শর্তসাপেক্ষে ভিসা দেয়া হয়েছে, এমন কথা প্রচারিত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান।
ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, এই কথা যে উনারা বললেন, উনারা কি আমাকে ভিসা দিয়েছেন। যারা ভিসাটা দিয়েছেন, তারা কি উনাদের সঙ্গে এই বিষয়টি শেয়ার করেছেন? আমি কি উনাদেরকে আমার ভিসা দেখিয়েছি? তাহলে তো এ সব কথার কোন উত্তর দেয়ার আমি যুক্তি খুঁজে পাই না।
তিনি আরও বলেন, ভিসা কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে আলোচনা করে নাই। তারা শর্তসহ দিয়েছেন, নাকি শর্ত ছাড়া দিয়েছেন, এসব নিয়ে আলোচনা করেন নাই। আমি নিশ্চিত।
আইজিপি আরও বলেন, যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে তারা আমার ভিসার কপি দেখেন নাই। আমিও উনাদেরকে দেখাই না। তাহলে এই দায়িত্বহীন, কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণ কেউ করবেন, আবার নিজেদেরকে গুরুত্বপূর্ণ পদে দেখতে এবং ভাবতে তারা পছন্দ করবেন, এগুলো সব একসঙ্গে যায় না। এগুলোকে বরং আমি একদমই পাত্তা দেই না।
এর আগে নিউইয়র্ক সফরে তাকে বিমানবন্দরে গিয়ে এত মানুষ স্বাগত জানায়নি কিংবা এমনভাবে সংবর্ধনাও দেয়া হয়নি। উডসাইডের একটি মিলনায়তনে যুক্তরাষ্ট্র নাগরিক কমিটি আয়োজিত সংবর্ধনায় যোগ দিয়ে দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বক্তব্য রেখেছেন পুলিশ প্রধান।
এ সম্পর্কে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের মনে অনেক প্রশ্ন ছিল। তারা অনেক কিছু জানতে চায়। তাই সেখানে যোগ দিয়ে বিষয়গুলো পরিষ্কার করেছি। আর সেই আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
আইজিপি বেনজীর আহমেদ বলেন, দেশের বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করছে, তাদেরকে প্রতিরোধ করার জন্য সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। তিনি মনে করেন, তার এবং র্যাবের উপর দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি রাষ্ট্রীয়ভাবেই সমাধান হয়ে যাবে।
আইজিপি বলেন, আমি মনে করি যা হয়েছে, সেটা হওয়া উচিত হয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের গভীর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রয়েছে।
আমাদের সরকারের সঙ্গে সরকারের গভীর যোগাযোগ রয়েছে। মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগ রয়েছে। এখানে প্রায় এক মিলিয়ন বাংলাদেশি মানুষ বসবাস করেন।
এখানে প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী পড়তে আসে। আমাদের দেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ ভ্রমণ করতে আসে এখানে।
বিভিন্ন কারণে আমাদের মধ্যে একটা আন্তঃযোগাযোগ রয়েছে। এখান থেকে বিভিন্ন কারণে আমেরিকানরা বাংলাদেশে যায়। আমাদের সঙ্গে বহুমুখী দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগ রয়েছে।
ড. বেনজীর আরও বলেন, যে ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে আমি করি পর্যাপ্ত তথ্যের ঘাটতি ছিল। সামনের দিনগুলোতে কূটনৈতিক পর্যায়ে এবং রাজনৈতিক পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে সেই তথ্যের যে ঘাটতিগুলো করানো হয়েছিলো, সেগুলো নিরসন করা সম্ভব হবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন। বিরোধী পক্ষের উপর পুলিশি নিপীড়ন চালানোর অভিযোগকে ভিত্তিহীন বললেন পুলিশ প্রধান।
তিনি বলেন, আমি মনে করি যারা এমনটি বলছেন, তারা রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন। আমরা দমন নিপীড়ন করবো কেন? বাংলাদেশের পুলিশ দেশের জনগণের পুলিশ, রাষ্ট্রের পুলিশ, এটা দমন নিপীড়নের কোন সংগঠন না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশ ঔপনেবিশক কোন দেশ না, আমরা একটি স্বাধীন দেশ, এখানে গণতন্ত্র রয়েছে। দেশের জনগণ ঠিক করেন, কারা দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন।
বেনজীর আহমেদ বলেন, আমাদের পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশ্য হচ্ছে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, দেশের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; যাতে করে নিরাপদ পরিবেশে দেশের উন্নয়ন হতে পারে।
আমার দেশে যদি শান্তিশৃঙ্খলা না থাকে, নিরাপত্তা না থাকে, স্থিতিশীলতা না থাকে, তাহলে কিন্তু উন্নয়ন হবে না। বিদেশীরা বিনিয়োগ করতে আসবে না, শিল্পায়ন হবে না, ব্যবসায় বাণিজ্য এগুলো হবে না। এসব কিছুর জন্য মূল শর্ত একটা স্থিতিশীল সমাজ। যেখানে আইনশৃঙ্খলা রয়েছে, বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
পুলিশ প্রধান বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশ রয়েছে, যেখানে যদি আপনাকে বিনিয়োগ করতে বলা হয়, তাহলে আপনি কিন্তু সেখানে যাবেন না। কিন্তু আমাদের দেশে কিন্তু এই করোনার মধ্যেও আমরা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ পেয়েছি। যেখানে বিশ্ব অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে করোনায়, তখনো কিন্তু আমাদের দেশে বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে।
আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কিন্তু কখনো থেমে থাকেনি। কারণ তার জন্য দেশের যে উপযুক্ত শান্তিময় পরিবেশ, সেটা আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী নিশ্চিত করতে পেরেছে। আমরা এই কাজে ব্যস্ত, কাউকে দমন নিপীড়নের কাজে না বলে জানান, বাংলাদেশের আইজিপি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের এলিট বাহিনি র্যাপিড একশন ব্যটেলিয়ন র্যাব এর বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট। তার এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বেশ আলোচনা সমালোচনা উঠেছিল। তবে সম্প্রতি পুলিশ প্রধান গিয়েছেন যুক্তরাষ্ট সফরে এই সফর নিয়েও নানা আলোচনা উঠছে