দুবাইয়ের জুয়েলার্স এর উদ্ভোদন নিয়েই শুরু হয়েছে নানা আলোচনা সমালোচনা এবং সেই জুয়েলার্স এর মালিকের আসল পরিচয় ফাঁস হয়ে গিয়েছে এই ঘটনায়। স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) পুলিশ সদস্য মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার পলাতক আসামি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার আশুতিয়া গ্রামের রবিউল ইসলাম ওরফে আপন।
তদন্তে জানা যায়, আশুতিয়া গ্রামের রবিউল ইসলাম বর্তমানে দুবাইয়ের ‘আরাভ খান’। তার বাবা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তাকে সাহায্য করতেন রবিউল। সেই জেলের ছেলে এখন দুবাইতে কোটিপতি সোনা ব্যবসায়ী। গ্রামে থাকা অবস্থায় স্কুল পাশ না করা ছেলে কীভাবে দুবাইয়ে কোটিপতি হল তা নিয়ে অনেক কৌতূহল রয়েছে।
সম্প্রতি, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, ইউটিউবার হিরো আলম সহ দেশের বিনোদন জগতের বেশ কয়েকজন তারকা ‘আরভ জুয়েলার্স’ নামে একটি জুয়েলারি দোকানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দুবাই গিয়েছিলেন বলে বিষয়টি সবার নজর কেড়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ওই দোকানের মালিক আরভ খান পুলিশ পরিদর্শক মামুন হত্যা মামলার ৬ নম্বর আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আপন।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া আশুতিয়া থেকে জানা যায়, আপনার আদি বাড়ি বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায়। সেই সুযোগে তিনি সেখানকার এসএম মডেল স্কুলে প্রথম শ্রেণী থেকে সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। যদিও ওই এলাকার মানুষ তাকে রবিউল নামেই চেনেন। সপ্তম শ্রেণীতে ফেল করার পর তার পরিবার তাকে কোটালীপাড়ায় নিয়ে আসে। কোটালীপাড়ায় এসে বাবাকে মাছ ধরতে সাহায্য করেন। এরপর সে এলাকায় বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।
তার গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রবিউল ইসলাম ওরফে আপনের এক প্রতিবেশী জানান, তার বাবার নাম মতিউর মোল্লা। তিনি একসময় খুলনায় থাকতেন। জীবিকার সন্ধানে অল্প বয়সে কোটালীপাড়ায় আসেন। তোমার বাবা মাছ মেরে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তিন ভাইবোনের মধ্যে আপন ছিলেন সবার বড়। আপনও প্রায়ই বাবার সঙ্গে বিলে মাছ ধরতে যেত। ক্লাস সেভেনে ফেল করার পর বিভিন্ন সময়ে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। আদিকালে গ্রাম থেকে মুরগি চুরি করে বাজারে বিক্রি করে জুয়া খেলা হতো। গ্রামে একাধিকবার বিচার হলে তার পরিবার তাকে বাড়ি থেকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়। 10 বছর আগে তিনি একবার তার গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন। এরপর তাকে গ্রামে আসতে কেউ দেখেনি। আপনার দুই বোনই বাগেরহাট জেলায় বিবাহিত।
তিনি আরও জানান, এ বাড়িতে তার স্ত্রী-সন্তানরা শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে থাকতেন। তবে কয়েক মাস ধরে তাদের বাড়িতে দেখা যাচ্ছে না। তারা হয়তো বিদেশে চলে গেছে।
এ ব্যাপারে তার বাল্যবন্ধু রহমান মোল্লা জানান, তার শৈশব কেটেছে বাবার সাথে মাছ ধরে। পড়ালেখায় খুব অমনোযোগী ছিলেন। ১৪ থেকে ১৫ বছর আগে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন। দশ বছর আগে একবার এসেছিল। তারপরও তাকে দেখে এত টাকার মালিক বলে মনে হয়নি। দুই তিন দিন গ্রামে কাটিয়েছেন। আমরা তাকে তখনও নামে চিনতাম। কয়েকদিন আগে ফেসবুকে দুবাইয়ে সোনার দোকান খোলা দেখে আমরা সবাই অবাক। আমরা আপনাকে টিভিতে দেখেছি। আমাদের মনে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, আপনি কীভাবে আরাভ খান হলেন?
গ্রামবাসীর দাবি তিনি যদি অবৈধ উপায়ে সম্পদের মালিক হন এবং প্রকৃত হত্যা মামলার আসামি হন তাহলে তাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
কোটালীপাড়ার আশুতিয়া গ্রামের রবিউল ইসলাম, দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরভ খান বিষয়টি নিশ্চিত করে হিরণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাজহারুল আলম পান্না বলেন, প্রায় এক শতাব্দী আগে আপন একবার বাড়িতে আসেন। তাকে গ্রামে দেখা যায়নি। এরপর।তাই আমরা তার সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না।কিন্তু কয়েকদিন আগে আমরা স্থানীয়রা ফেসবুকে দেখে অবাক হয়েছিলাম।কিভাবে এত টাকার মালিক হলেন,বিদেশে গিয়ে নাম পরিবর্তন করে আরভ খান রাখলেন না। আমাদের মাথায় আসছে।আমরা তাকে টিভিতে চিনতে পেরেছি,তিনি মতিউর জেলের ছেলে আপন মোল্লা।এত অল্প সময়ে এত টাকার মালিক হওয়া সম্ভব নয়।আমরা মনে করি সে এই টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেছে।এর সঠিক তদন্ত হওয়া উচিত। দোষী হলে তার বিচার হওয়া উচিত।
প্রসঙ্গত,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ইতিমধ্যেই সেই দুবায়ের আরাভ জুয়েলার্স এর মালিকের পরিচয় নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। ২০১৮ সালে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) স্কুল অব ইন্টেলিজেন্সের পরিদর্শক মামুন ইমরান খান (৩৪) মারা যান। ওই মামলার ৬ নম্বর আসামি রবিউল ইসলাম আপন ওরফে আরভ খান।