বাংলাদেশের কালজয়ী সব গানে স্রষ্ট্রা ছিলেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার গত পরশু মারা গেছেন। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি ছিলেন বেশ অসুস্থ। আর সেই অসুস্থতায় ভুগে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।কিন্তু গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মেয়ে গায়িকা দিঠি বাবা যেদিন চলে গেলেন সেদিন দেশে ছিলেন না। বাবাকে শেষ বিদায় জানাতে গতকাল বিকেল ৫টায় বাড়ি ফেরেন তিনি।
বাবাকে হারিয়ে শোকের সাগরে ভাসমান দিথি রাতে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলেন। কাঁদতে কাঁদতে বললেন, বাবার এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না। দেশে থাকলে সবসময় তার পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। নানা গল্প-আলোচনা, গান-বাজনা করে বাবাকে আপ্যায়ন করতাম। আমাদের বন্ধন কতটা মজবুত ছিল তা বলে বোঝাতে পারব না। আমি সবসময় আমার বাবার এত কাছে ছিলাম, কিন্তু যখন আমি দূরে ছিলাম, তিনি চলে গেলেন!
এখন বাবাকে ছাড়া বাঁচবো কি করে? বাবাকে এখন কোথায় পাবো? এ কথা বলতে গিয়ে দিঠি জানান, গত শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টায় তিনি বেড়াতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুবাই যান। পরদিন সকালে তার ভাইয়ের স্ত্রী সেখানে তার ছেলের কাছে দুঃসংবাদটি ভেঙে দেন। ছেলে তাকে দুঃসংবাদ দেয়নি। দেশে ফোন করে জানতে পারেন তার বাবা আর নেই।
দিতি বলেন, আগের দিন সন্ধ্যায়ও বাবার সঙ্গে কথা হয়েছিল। সামান্য গ্যাসের সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। সে বললো তার খেতে ভালো লাগছে না। গ্যাসের ওষুধও খেয়েছেন। রাতে ভাইদের সাথে কথা বলেছেন। সকাল ৬টায় উঠে জন্ম ঘরে যান। সে বাথরুমে গেলে আম্মুও গিয়ে তার ওপর নজর রাখত। তিনি আজ সেখানে ছিলেন। বলা যায় বাবা পড়ে যাওয়ার মুহূর্তে মা তাকে ধরে ফেলে। হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বাবা সচেতন ছিলেন। কিন্তু সিসিইউ-আইসিইউতে নেওয়ার পর জানা যায়, তিনি আর নেই! এত বড় ধাক্কা আমি কিভাবে সইব?’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে এই কবি কন্যা আরও বলেন, আমার বাবাকে মানুষ এত ভালোবাসতেন। আমি আমার জীবনে কাউকে তার সমালোচনা করতে দেখিনি। তার সন্তান হতে পেরে আমরা গর্বিত। আমার বাবার জন্য সবার দোয়া চাই।
উল্লেখ্য, ১৯৪৩ সালে বাংলাদেশের কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার তালেশ্বর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সদ্য প্রয়াত এই কিংবদন্তি। আর ১৯৬৪ সাল থেকেই তিনি গান লেখা শুরু করেন পাকিস্তানের রেডিওর হয়ে। আর এর সাথেই বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকেই কাজ করে গেছেন তিনি। গানের পাশাপাশি চলচ্চিত্র নির্মাণ ও চিত্রনাট্য রচনা করেও সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি। তার মৃত্যুতে দেশের শোবিজ অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।