Sunday , May 19 2024
Breaking News
Home / Exclusive / প্রতি বছর নষ্ট হয় ৬ লক্ষ টন চাল নষ্ট হওয়ার কারন বিলাসিতা

প্রতি বছর নষ্ট হয় ৬ লক্ষ টন চাল নষ্ট হওয়ার কারন বিলাসিতা

বাংলাদেশে প্রতি বছর ৬ লক্ষ ৩০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বিশেষ করে চাল ‘বিলাসিতা’র কারনে নষ্ট হয়। এটি সামাজিক অনুষ্ঠানে, গৃহস্থালীতে পরিবেশন এবং সেই সাথে বিভিন্ন উপায়ে নষ্ট হয় বা অপচয় ঘটে। এই নষ্ট করা বা অপচয় করা চাল দ্বারা সারা বছর ৪ হাজারেরও বেশি মানুষের ভাতের যে চাহিদা সেটা পূরণ করা সম্ভব। একটু সচেতনতার অভাবে এই বিপুল পরিমান চাল প্রতি বছর বিনষ্ট হয়, যেটা সবচেতনতার মাধ্যমে নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করা যায়। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিআরআই) পরিচালিত একটি গবেষণার মাধ্যমে এই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে, ব্রি একটি সংসদীয় কমিটিতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে দেশে ধান উৎপাদন ও ব্যবহার সম্পর্কিত গবেষণার তথ্য উপস্থাপন করেছে। তবে আরো কিছু তথ্য উঠে এসেছে এই গবেষনায়, যেখানে চাল ছাড়াও অনেক তরকারি বিনষ্ট হয়, যার পরিমানও অনেক।

জানা যায়, চালের চাহিদা নিরূপণে দুটি ভিত্তিকে বিবেচনায় নেওয়া হয়। এ দুটি হচ্ছে হিউম্যান কনজাম্পশন ও নন-হিউম্যান কনজাম্পশন। জনপ্রতি প্রতিদিনের খাবারসহ (ভাত) হিউম্যান কনজাম্পশন হচ্ছে মোট চাহিদার ৭৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এর মধ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশসহ খাবার চাল ৬৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ, মুড়ি ৫ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, চিড়া শূন্য দশমিক ৯১ শতাংশ, খই শূন্য দশমিক ৩৬ শতাংশ, পিঠা ও বেকারি পণ্য শূন্য দশমিক ৮৬ শতাংশ। অপরদিকে নন-হিউম্যান কনজাম্পশন (বীজ ও পশুখাদ্যসহ বিবিধ ব্যবহার) খাতে চালের প্রয়োজন পড়ে ২৬ দশমিক ২২ শতাংশ। এর মধ্যে বীজ ১ দশমিক ৫২ শতাংশ, ফিড ও অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল খাতে ৫ দশমিক ১৫ শতাংশ, কর্তনকালীন ক্ষতি ৫ দশমিক ২০ শতাংশ, ফলোনোত্তর ক্ষতি ৭ দশমিক ১০ শতাংশ এবং প্রক্রিয়াজাতে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ।

গবেষণায় ব্রি বলেছে, দেশের মানুষ যে চাল খায় (হিউম্যান কনজাম্পশন) তার মধ্যে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ গৃহস্থালি পর্যায়ে অপচয় হয়। অপচয়ের মধ্যে খাদ্য সংগ্রহ ও প্রস্তুতি পর্যায়ে ৩ শতাংশ, পরিবেশন পর্যায়ে ১ দশমিক ৪ শতাংশ এবং প্লেটে অপচয় ১ দশমিক ১ শতাংশ। গৃহস্থালি পর্যায়ে অপচয়ের প্রধান কারণ অজ্ঞতা ও বিলাসী মানসিকতা বলে ‘ব্রি’ তার গবেষণায় উল্লেখ করেছে।

জানা গেছে, ১৭ কোটি মানুষ হিসাবে গেল বছর দেশে ভোগ্য-চালের চাহিদা ছিলো দুই কোটি ৫২ লাখ মেট্রিক টন। ব্রি’র গবেষণার তথ্য অনুযায়ী এই ভোগ্য-চালের মধ্যে গৃহস্থালি পর্যায়ে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ অপচয় হলে মোট অপচয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৩ লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে খাদ্য সংগ্রহ ও প্রস্তুতি পর্যায়ে ৩ শতাংশ অপচয়ের হিসাবে চালের পরিমাণ দাঁড়ায় সাত লাখ ৫৬ হাজার মেট্রিক টন। আর পরিবেশন ও প্লেট পর্যায়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ হিসাবে অপচয় হয় ছয় লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। সংগ্রহ ও প্রস্তুতি পর্যায়ের অপচয় অজ্ঞতা এবং পরিবেশন প্লেট পর্যায়ের অপচয় বিলাসিতার কারণে হয় বলে ব্রি গবেষণায় উল্লেখ করেছে।

ব্রি’র তথ্য মতে, গৃহস্থালি পর্যায়ে চালের যে অপচয় হয় তা দিয়ে ৯ হাজার ৩৭৬ জন মানুষের সারা বছরের খাবারের জোগাড় হয়ে যায়। অপরদিকে বিলাসিতার কারণে যে পরিমাণ অপচয় হয় তাতে চার হাজার ২৬২ জন মানুষের বছরের খাবার চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।

সরকারি হিসাব মতে, জনপ্রতি দৈনিক চালের চাহিদা ৪০৫ গ্রাম। সেই হিসেবে বছরে জনপ্রতি চালের দরকার পড়ে ১৪৭ কেজি ৮২৫ গ্রাম।

কারও খাবারের অভাব নেই বলেই তিনি নষ্ট করবেন এই ধরনের মানসিকতা থাকা উচিত নয় ‑ মন্তব্য করে ব্রি’র মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. শাহজাহান কবীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সকল প্রক্রিয়া শেষ করে একটি শস্যদানা খাবার টেবিল পর্যন্ত পৌঁছাতে যে দীর্ঘ পরিভ্রমণ তার উপলব্ধি থাকলে কেউ বিলাসিতা করে খাবার নষ্ট করতো বলে মনে হয় না। একটা ভাত তৈরি করতে কত কষ্ট করতে হয়। এটা যে অনুধাবন করবে সে নষ্ট করবে না।

তিনি বলেন, “আমাদের রান্না করা চালের গড় ৫.৫ শতাংশ নষ্ট হয়।” আমরা বিয়ে সহ বড় অনুষ্ঠানে খাবার নষ্ট করি। এতে আমাদের কোন উপলব্ধি নেই। কিন্তু আমাদের ভাবতে হবে যে এই খাবারের সাথে কত মানুষের জীবনে আহারের বিষয়টি জড়িত। পরিবেশন পর্যায়ে আমরা যে পরিমাণ খাবার নষ্ট করছি তা না পেয়ে অনেক মানুষ অনাহারে আছে।

গৃহস্থালি পর্যায়ে বিপুল পরিমান চাল নষ্ট হয় যেটা একটু ইচ্ছা করলে বন্ধ করা সম্ভব বলে উল্লেখ করে শাহজাহান কবির। তিনি আরো বলেন, মানুষের সচেতনতার বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ন যার কোনো বিকল্প নেই। আমার টাকা আছে, যখন ইচ্ছা এটা কিনতে পারি এই ধরনের বিষয়টি মন থকে দূরে রাখা উচিৎ, এটা নষ্ট করা উচিত নয়। এটি কোনোভাবে আইন কিংবা নৈতিকতা কখনও কোনোভাবে অনুমোদন করে না। এজন্য আমাদের যেটা সকলের প্রতি আহ্বান সেটা হলো- আমাদের খাদ্য যোগানোর জন্য কৃষকের অশেষ মেহনত রয়েছে, রয়েছে অনেক মানুষের কষ্টের কাহিনি। তাদের কঠোর পরিশ্রমের কথা আমাদের মনে রাখতে হবে।

About

Check Also

ভয়ভীতি দেখিয়ে মাহিকে বলাৎকার করেন মুক্তারুল, পিবিআই তদন্তে বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর সব তথ্য

ইফতেখার রশীদ মাহিকে দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে পড়াতেন প্রাইভেট টিউটর মুক্তারুল হক। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *