ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ দীর্ঘ দিন ধরে ক্ষমতায় জোর করে বসে একনায়কতন্ত্রের রাজত্ব কায়েম করেছে।যার ফলে যখন যা ইচ্ছে তা করছে তার সহযোগী সংগঠনগুলো।সম্প্রতি বয়েটে আবারও ছাত্র রাজনীতি চালু করা নিয়ে নতুন ভাবে আন্দোলনের নামে নাটক শুরু করেছে।যদিও এটি চালু করতে কোনো ধরনের বাধা নেই বলে ইতিমধ্যে রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আসিফ নজরুল হুবহু পাঠকদের জন্য নিচে দেওয়া হলো।
রাজনৈতিক বিষয়ে আদালতের সংশ্লিষ্ট না হওয়া সংক্রান্ত একটি মতবাদ রয়েছে। সাংবিধানিক আইনে এই মতবাদের নাম ডকট্রিন অব পলিটিক্যাল নেসেসিটি। এই মতবাদ বেশ আগে হরতাল সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের একটি রায়ে স্বীকৃত হয়েছিল।
আজ হাইকোর্ট-এর রুলে এই মতবাদ প্রতিফলিত হয়নি বলে আমার মনে হয়েছে। অতিদ্রুত এই রুল প্রদান না করে সম্ভবত আরো অনেক স্টেকহোল্ডারদের বক্তব্য শোনা যেতো। আবেদন করার মাত্র কয়েকঘন্টার মধ্যে এমন একটি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রুল দেয়ার নজীর খুব একটা আছে কিনা এমন প্রশ্ন মনে এসেছে। এই রুলের ফলে যেখানে সেখানে রাজনীতি করার অধিকার (যেমন: বাংলাদেশ ইউনির্ভাসিটি অব প্রফেশনালস বা সরকারী কোন দপ্তরে) অবারিত হলো কিনা এই প্রশ্নও তোলা যেতে পারে।
তবু এতে খুব হতাশ হওয়ার কিছু নেই। মনে রাখতে হবে হাইকোর্টের এই রুলে রাজনীতি করার অধিকার স্বীকৃত হয়েছে। এতে রাজনীতির নামে সাধারণ ছাত্রদের উপর নির্যাতন, তাদের উপর বলপ্রয়োগ বা হুমকি প্রদান. গণরুম কেন্দ্রিক অরাজকতা বা ছাত্রনেতাদের প্রতি দাসসুলভ আনুগত্য প্রকাশে বাধ্যকরনের স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। আদালত তা কখনো দিতে পারবে না, কারণ এগুলো করা ফৌজদারী অপরাধ।
বুয়েটের উপাচার্য বা প্রশাসনের তাই এখন উচিত কঠোরভাবে ছাত্ররাজনীতির আচরনবিধি ঠিক করা, হলে, ক্লাশরুমে বা ক্যাম্পাসে কোনরকম জোরজবরদস্তি কেউ করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া, ছাত্রাবাসের উপর নিরপেক্ষ হল প্রশাসনের পূর্ণাঙ্গ কর্তৃত্ব কায়েম করা।
এসব করার প্রয়োজন থেকে সবার বক্তব্য ও কার্যক্রমের দিকে লক্ষ রাখতে হবে। ছাত্রলীগের কেউ কেউ ইতোমধ্যে বলছে তারা প্রগতিশীল সব সংগঠনকে বুয়েটে স্বাগত জানাবে, অন্ধকার সংগঠন এবং স্বাধীনতাবিরোধী চেতনা বুয়েটে ঠাঁই পাবে না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কোনটা প্রগতি আর স্বাধীনতাপক্ষের চেতনা তা কে ঠিক করবে? কাউকে পিটিয়ে মেরে ফেলা বা কারো উপর জোর খাটানো বা অন্যায়ভাবে হল প্রশাসনের কর্তৃত্ব গ্রহন করা কি প্রগতিশীলতা বা স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা? নিজের হাতে পুলিশী দায়িত্ব তুলে নিয়ে একে তাকে ট্যাগ লাগিয়ে নির্যাতন করা বা হল থেকে বের করে দেয়ার অধিকার কি কোন আইনে ছাত্রলীগকে প্রদান করা হয়েছে? এগুলো কি প্রগতিশীলতা? নাকি বর্বরতা?
বুয়েট প্রশাসনের উচিত এসব বিষয়ে প্রকৃত অভিভাবকের ভূমিকা গ্রহন করে তার দায়িত্ব পালন করা। হাইকোর্টের আদেশ শিরোধার্য ধরে নিলে ক্যম্পাসে সকল ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান (সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন বাদে) নিশ্চিত করা, এতে কেউ বাধা দিলে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা করা এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা।
বুয়েট প্রশাসনকে মনে রাখতে হবে হাইকোর্টের রায়ে কাউকে অরাজকতা করার বা ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার অধিকার দেয়া হয়নি। এখানে রাজনীতি করার অধিকার দেয়া হয়েছে এবং তা সবাইকে।
আরেকটা কথা বুয়েট প্রশাসনকে বুঝতে হবে। আদালতের রায়ের দোহাই দিয়ে বুয়েটের সাধারণ ছাত্রদের আন্দোলনে বাধা দেয়া যাবে না। কারণ বুয়েটে রাজনীতি করার বিরোধিতা করাও তাদের রাজনৈতিক অধিকার।