Wednesday , May 15 2024
Breaking News
Home / economy / বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে যুক্তরাষ্ট্রে সামনে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো যেসব বিষয়

বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে যুক্তরাষ্ট্রে সামনে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো যেসব বিষয়

বৈদেশিক বাণিজ্যে বাধা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যেখানে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বিশেষ করে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের প্রতিবন্ধকতাসমূহ তলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে ঘুষ, দুর্নীতি ও অসচ্ছতাকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

গত শুক্রবার (২৯ মার্চ) এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি অফিস-ইউএসটিআর।

বিদেশী বিনিয়োগ বাধা সংক্রান্ত ২০২৪ জাতীয় বাণিজ্য প্রাক্কল শীর্ষক ওই প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র ও বাছাই প্রক্রিয়ার কথা বলে থাকে। তবে নিজের শুল্ক মূল্যায়ন নীতি সম্পর্কে এখনো বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে (ডাব্লিউটিও) অবহিত করেনি দেশটি।

ইতিমধ্যে, বাংলাদেশ একটি জাতীয় ইলেকট্রনিক প্রকিউরমেন্ট পোর্টাল চালু করেছে, কিন্তু মার্কিন অংশীদাররা বিভিন্ন দরপত্রে প্রত্যাশিত পণ্যের প্রাচীন প্রযুক্তিগত মান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। উপরন্তু, মার্কিন অংশীদারদের সন্দেহ রয়েছে যে পছন্দের দরদাতাদের কাজ প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রযুক্তিগত মান নির্ধারণ করা হয়েছে কিনা। একই সঙ্গে প্রতিবেদনে স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

এতে আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি কোম্পানির দাবি, ক্রয় প্রক্রিয়ায় প্রভাব খাটাতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানির দরপত্র ঠেকাতে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া বিদেশি প্রতিদ্বন্দ্বীরা স্থানীয় অংশীদারদের ব্যবহার করে। এমনকি দরপত্র বাছাইয়ে কারচুপির অভিযোগও ওঠে এসেছে। ডব্লিউটিওর সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত চুক্তির অংশীদার নয় বাংলাদেশ। ডব্লিউটিওর এ সংক্রান্ত কমিটির পর্যবেক্ষক হয়নি দেশটি।

মেধাস্বত্ব সুরক্ষায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশকিছু আইনগত উদ্যোগ নিলেও বাংলাদেশে এর কার্যকর প্রয়োগ অনিশ্চিত। মার্কিন প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, সারা বাংলাদেশেই নকল ও পাইরেটেড পণ্য সহজলভ্য। ভোগ্যপণ্য, পোশাক, ওষুধ ও সফটওয়্যার খাতের পণ্যগুলো বাংলাদেশে নকল হচ্ছে বলে মার্কিন অংশীদাররা অভিযোগ করেছেন।

বাংলাদেশে ডিজিটাল বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন বাধার কথা উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের (২০১৩ সালে সংশোধিত) কথা বলা হয়েছে। যেখানে উল্লেখ করা হয় এই আইনের মাধ্যমে কীভাবে বাংলাদেশ সরকার তথ্য বা উপাত্ত প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে যে কোনো কম্পিউটার সিস্টেম প্রবেশ এবং তথ্য আটকানোর কাজ করতে পারে।

ডিজিটাল বাণিজ্যে বাধা হিসেবে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) মোবাইল অপারেটরদের রাজনৈতিক কারণে ২০১৯, ২০২০ এবং ২০২৩ সালে স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনসহ রাজনৈতিক কর্মসূচির আগে বিভিন্ন সময়ে ডেটা ট্রান্সমিশন সীমিত করার নির্দেশ দিয়েছে। বলা হয়, বিটিআরসি মোবাইল অপারেটরদের কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে ভয়েস কল ব্যতীত সেপ্টেম্বর ২০১৯ থেকে আগস্ট ২০২০ পর্যন্ত সমস্ত পরিষেবা ব্লক করার নির্দেশ দিয়েছে।

২০২৩ সালের নভেম্বরে মন্ত্রিসভা থেকে নীতিগতভাবে অনুমোদন পাওয়া ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (আইসিটি বিভাগ) ডেটা সুরক্ষা আইনের বিষয়ে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। যেখানে শিল্প এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের উদ্বেগের বিষয়টি প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ থেকে লভ্যাংশ ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব তুলে ধরেছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে বিদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর আইনি জটিলতার কথাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

শ্রম সমস্যা নিয়ে উদ্বেগের কারণে ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা (জিএসপি) পাওয়ার অযোগ্য ঘোষণা করে। এটি এখনও বহাল রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্নীতি বাংলাদেশে একটি ব্যাপক এবং দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা এবং দুর্নীতিবিরোধী আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হয় না। সুবিধা প্রদান এবং উপহারের অবৈধতা সত্ত্বেও বাণিজ্যিক লেনদেনে ঘুষ এবং চাঁদাবাজি ব্যবসার সাধারণ বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ চাওয়ার কারণে মার্কিন কোম্পানিগুলো লাইসেন্স ও বিডের অনুমোদন পেতে দীর্ঘ বিলম্বের অভিযোগ করেছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে ২০১৮ সালের অক্টোবরে প্রণীত পাবলিক সার্ভিস অ্যাক্ট বিলের দ্বারা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে, যার জন্য কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করার আগে দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। একই সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে দুদকের ক্ষমতা সীমিত করা হয়েছে। তবে সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করছে দুদক। তবে অনেক মামলাই অমীমাংসিত রয়ে গেছে।

About Nasimul Islam

Check Also

হঠাৎ সমঝোতা চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক

দেশের ব্যাংকিং খাতের দীর্ঘদিনের জটিল সমস্যা খেলাপি ঋণ আদায়ে নতুন করে মধ্যস্থতার উপর জোর দিচ্ছে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *