এবার আরও ৩ ব্যাংক একীভূত হচ্ছে

তুলনামূলক শক্তিশালী ব্যাংকগুলোর সঙ্গে একীভূত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ উন্নয়ন ব্যাংকসহ আরও তিনটি দুর্বল ব্যাংক। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে বাংলাদেশ উন্নয়ন ব্যাংক (বিডিবিএল)। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে যাচ্ছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। চলতি সপ্তাহে একীভূতকরণের বিষয়ে এই চার ব্যাংকের মধ্যে একটি চুক্তি হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

এর বাইরে বেসিক ব্যাংক রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে। এ নিয়ে উভয় ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে। দুই ব্যাংকের মধ্যে একীভূতকরণ চুক্তি ঈদের পর হতে পারে।

অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুরশিদুল কবির বলেন, বেসিক ব্যাংক একীভূত হওয়ার বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো আনুষ্ঠানিক বার্তা নেই। এ বিষয়ে কোনো চুক্তি হলে আমাদের জানানো হবে।

এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েকটি ব্যাংকের সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতি পুরো ব্যাংকিং খাতকে কলুষিত করেছে। উচ্চ অনাদায়ী ঋণ, প্রভিশন এবং মূলধন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। অবিশ্বাস, তারল্য সংকট বাড়ছে। এমন প্রেক্ষাপটে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু তাদের আশঙ্কাকে সুসংহত করে দুর্নীতিবাজদের দায়মুক্তি দেওয়া যেতে পারে। এমনটা হলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে।

বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) উচ্চ খেলাপি ঋণ নিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাথে একীভূত হচ্ছে। এ লক্ষ্যে বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে এসব ব্যাংকের এমডিকে নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

সূত্র জানায়, বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, উপদেষ্টা আবু ফারাহ মো: নাছের, নির্বাহী পরিচালক সাইফুল ইসলামসহ চারটি সরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন। আগামী সপ্তাহের বৈঠক থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আশা করা হচ্ছে। এর আগে আনুষ্ঠানিকতার জন্য এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক ডেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

চার ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বুধবার হঠাৎ করে চার ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিকে ডেকে পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য আগাম কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি, এমনকি আলোচনার বিষয়বস্তুও উল্লেখ করা হয়নি। এক বৈঠকে সোনালী ব্যাংক ও বিডিবিএলের চেয়ারম্যান-এমডিকে জানানো হয়, সরকার সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে বিডিবিএলকে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অপর এক বৈঠকে বিকেবি ও রাকাবকে একই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। সরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ঈদের আগে সম্ভব নয়, ঈদের পর এমওইউ সই হতে পারে। এর আগে লুণ্ঠিত (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) পদ্মা ব্যাংককে একীভূত করার বিষয়ে বেসরকারি খাতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এ দুই ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আলোচিত ব্যাংকগুলোই সমঝোতা স্মারকে সই করবে। তবে আপাতত সবাইকে মুখ খুলতে নিষেধ করা হয়েছে। পুরো প্রক্রিয়াটি গোপনে করা হয়।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংকও একীভূতকরণের আলোচনায় রয়েছে বলে সূত্রের দাবি। বেসিক আরেকটি বড় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক অগ্রণীর সাথে একীভূত হতে পারে।

তবে এসব খারাপ ব্যাংক ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এসব বিষয়ে আলোচনায় গত মঙ্গলবার বিশ্বব্যাংক সংবাদ সম্মেলনে সব নিয়ম মেনে একীভূতকরণের পরামর্শ দেয়। সংস্থাটি বলেছে যে এটি একীভূতকরণে বাধ্য করবে না।

এই তিনটি ব্যাংক একীভূত হওয়ার পর বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল, এবি, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী, বাংলাদেশ কমার্স, আইসিবি ইসলামিক ও বিদেশি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান নিয়ে আলোচনা চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একীভূতকরণের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে ব্যাংকের সংখ্যা ৪৪টিতে উন্নীত করা যেতে পারে।

এর আগে পদ্মা ব্যাংক এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে সম্মত হয়েছে।