মিল্টন সমাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়েছে মানবাধিকার কমিশন। রোববার (২৮ এপ্রিল) জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইউশা রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি এ তথ্য জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৫ এপ্রিল ২০২৪ তারিখ পত্রিকায় ‘মানবিক মুখোশের আড়ালে ভয়ংকর মিল্টন সমাদ্দার’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে এসেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মিল্টন সমাদ্দার নামক এক ব্যক্তি ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ নামের বৃদ্ধাশ্রম গড়ে রাস্তা থেকে অসুস্থ কিংবা ভবঘুরেদের কুড়িয়ে সেখানে আশ্রয় দেন। সেসব নারী-পুরুষ ও শিশুকে নিয়ে ভিডিও তৈরি করে প্রায়ই তাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করতে দেখা যায়। মানুষের অসহায়ত্ব তুলে ধরে তাদের জন্য বিত্তবানদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। তার আবেদনে সাড়াও মেলে প্রচুর। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ১৬টির বেশি নম্বর এবং ৩টি ব্যাংক হিসাবে প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকা জমা হয়। এর বাইরে অনেকেই তার প্রতিষ্ঠানে সরাসরি অনুদান দিয়ে আসেন। মানবিক কাজের জন্য এখন পর্যন্ত ৩টি রাষ্ট্রীয় পুরস্কারও পেয়েছেন মিল্টন সমাদ্দার।
এটি মিল্টনের আসল চেহারা নয়। প্রতিবেদনে ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। মানবতার আড়ালে তিনি যা করেন তা মর্মান্তিক। যেই প্রতিষ্ঠানের জন্য এত পরিচিতি, সেই আশ্রম ঘিরেই ভয়াবহ প্রতারণার জাল বিস্তার করেছেন মিল্টন। আসলে যত মানুষ লালন-পালন করে, প্রচার করে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। লাশ দাফনের খাতায়ও রয়েছে বড় অসঙ্গতি। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হল মিল্টনের বিরুদ্ধে আশ্রয়ের নামে অসহায় মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রির অভিযোগ। মিল্টন সামাদারের ব্যক্তিগত জীবনেও নৈতিকতা বা মানবিকতার অভাব রয়েছে। কৈশোর থেকেই তার টাকার লোভ ছিল। প্রতিবেশী, চিকিৎসক বা সাংবাদিকরা বিভিন্ন সময় তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন। এমনকি নিজের জন্মদাতা পিতাকেও মারধরের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ফেসবুক পেজ থেকে দেখা যায়, প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তার আশ্রমে সবসময়ই ২৫০ থেকে ৩০০ অসুস্থ রোগী থাকে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় সড়কে যারা মারা গেছেন তাদের কবর দেন মিল্টন। তাঁর আশ্রমে থাকতেই অনেকেই মারা যান। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০০টি লাশ দাফন করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন মিল্টন। মিল্টন বলেছিলেন যে সমাধিস্থদের মধ্যে ৬০০ জন তাঁর আশ্রমে মারা গেছেন। বাকি ৩০০ লাশ রাস্তা থেকে এনে দাফন করেন। রাজধানীর মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থান, রায়ের বাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থান ও আজিমপুর কবরস্থানে এসব লাশ দাফন করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। তবে অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য ভিন্ন গল্প বলে। সরেজমিনে জানা যায়, মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে মিল্টন সমাদ্দার সংগঠনের তত্ত্বাবধানে ৫০টি লাশ দাফন করা হয়েছে।
প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয়, এসব মরদেহের ডেথ সার্টিফিকেট হাতে রয়েছে। কালবেলার অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিল্টন সমাদ্দারের দক্ষিণ পাইকপাড়া আশ্রমের কাছেই বায়তুর সালাম জামে মসজিদ। এই মসজিদে এক সময় তার প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসা মরদেহ বিনামূল্যে গোসল করানো হতো। তার মানবিক কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে মসজিদ কর্তৃপক্ষ তাকে এই সুবিধা দিয়েছিল। তবে গোসল করানোর সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা প্রায় প্রতিটি মরদেহের বিভিন্ন স্থানে কাটাছেঁড়ার দাগ শনাক্ত করেন। এ বিষয়ে মিল্টন সমাদ্দারকে মসজিদ কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন করলে তিনি ওই মসজিদে মরদেহ পাঠানো বন্ধ করে দেন।
কালবেলায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে যে নৃশংস ও বর্বর চিত্র ফুটে উঠেছে তা খুবই ভীতিকর। মানব সেবাই পরম ধর্ম কিন্তু মানব সেবার নামে অসুস্থ, অসহায় ও নিরীহ মানুষকে মুখোশের আড়ালে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে চিকিৎসার নামে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রির অভিযোগ মিল্টন সমাদারের বিরুদ্ধে অত্যন্ত ভীতিকর, ঘৃণ্য ও চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। । কমিশন মনে করে, গুরুতর অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে না নিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠানে রাখা, ভুয়া চিকিৎসক দিয়ে ডেথ সার্টিফিকেট তৈরি করা বা লাশ বিকৃত করার প্রতিবেদনের যথাযথ তদন্ত হওয়া উচিত। এমতাবস্থায় পুলিশ কমিশনার, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে অভিযোগটি নিবিড়ভাবে তদন্ত করে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে কমিশনে প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে মহাপরিচালক, সমাজসেবা অধিদপ্তরকে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে কমিশনে প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়েছে। আগামী ৩০/০৫/২০২৪ তারিখ প্রতিবেদনের জন্য ধার্য করা হয়েছে।