মা পপি খাতুন তার শিশুকন্যাকে গলা টিপে হত্যার পৈশাচিক কাহিনী বর্ণনা করেছেন। মেয়ে মাইশাকে হত্যার পর নিজেকে বাঁচাতে তিনি বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে মাইশা মারা যাওয়ার নাটক করেন এবং মোবাইলের চার্জার গলায় পেঁচিয়ে দেন। এ ঘটনায় মা পপি খাতুনকে আটক করেছে পুলিশ। এরপর তিনি আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।
সোমবার (৬ মে) বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার আরএম ফয়জুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। মা পপি খাতুন আলমডাঙ্গা বোগাইল বোগাদী গ্রামের শহিদুল ইসলামের মেয়ে। মাইশা ভোগাইল বগাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। মা-বাবার বিয়ে বিচ্ছেদ হলে মায়ের সঙ্গে মাইশা নানা বাড়িতেই থাকতো।
পুলিশ সুপার জানান, শিশু মাইশা আলমডাঙ্গার ভোগাইলবাগদী গ্রামে মায়ের সঙ্গে থাকত। ২৯ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টার দিকে মাইশার মা পপি খাতুনের চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। সেসময় মাইশার গলায় মোবাইল ফোনের চার্জারের তার জড়ানো ছিল।
পপি প্রতিবেশীদের জানান, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তার মেয়ে মাইশা মারা গেছে। প্রতিবেশীরা দ্রুত মাইশাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক মাইশাকে মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া নিহত মাইশার গলায় চিহ্নের কথা পুলিশকে জানান চিকিৎসকরা।
পুলিশ লাশের অবস্থার প্রতিবেদন তৈরি করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত করেছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহত মাইশা খাতুনের মৃত্যু বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হয়নি। তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।
বিষয়টি পুলিশ নিহতের পরিবারকে জানালে মাইশার নানা ভোগাইলবগাদী গ্রামের মৃত নূর হোসেনের ছেলে শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি উল্লেখ করে গত ৩ মে আলমডাঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার পর পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়।
পুলিশ সুপার জানান, মাইশাকে তার মা পপি খাতুন হত্যা করেছে। গত ৫ মে আলমডাঙ্গা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জহুরা বেগমের আদালতে পপি খাতুন হাজির হয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
তিনি আরো জানান, পপি খাতুনের বিয়ে হয়েছিল কুষ্টিয়া জেলার মীরপুর থানার ঝুটিয়াডাঙ্গা গ্রামের সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। দাম্পত্য কলহের কারণে আগেই তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছিল এবং পপি খাতুন তার মেয়ে মাইশাকে নিয়ে বাবার বাড়ি আলমডাঙ্গার ভোগাইলবগাদী গ্রামে বসবাস করছিলেন।
পপি খাতুন পুলিশের কাছে মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করে বলেন, তার মেয়ে মাইশা নাবালিকা। তার বাবা আবার বিয়ে করতে পারেন। পপিও অন্যত্র বিয়ে করতে পারেন। তখন মাইশা দেখার কেউ থাকবে না। মাইশার জীবন কঠিন হয়ে যাবে। প্রতিবেশীর মেয়েকে এভাবে বড় হতে দেখেছে পপি। এসব ভাবতে ভাবতে মেয়েটিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে পপি।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান লালন, ডিআই-১ এর পরিদর্শক জিহাদ খান, উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিকাশ দাসসহ সিনিয়ররা উপস্থিত ছিলেন।