Sunday , June 16 2024
Home / Countrywide / যে কারণে জেনারেল আজিজের নিষেধাজ্ঞায় বিশ্বব্যাপী চাঞ্চল্য

যে কারণে জেনারেল আজিজের নিষেধাজ্ঞায় বিশ্বব্যাপী চাঞ্চল্য

সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার খবর দেশে ও দেশের বাইরে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। মঙ্গলবার (বাংলাদেশ সময়) ভোরে ওয়াশিংটন থেকে এ খবর আসে। বাংলাদেশের প্রায় সব মানুষ তখন ঘুমিয়ে। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে থাকে চাঞ্চল্যকর এই খবর। জেনারেল আজিজ বরাবরই ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতি নিয়ে কথা বলে আসছেন। দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র তার ওপর নজর রাখছিল। ডোনাল্ড লুর সাম্প্রতিক ঢাকা সফরে সবাই ভেবেছিল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যে তার নীতিতে অটল রয়েছে এটা তার প্রমাণ। বিভিন্ন মহলে বৈঠকে ডনাল্ড লু আরও কিছু বিষয় ইঙ্গিত করে গেছেন। তার সফরের পর সরকারি মহলে যথেষ্ট উচ্ছ্বাস ছিল।

এতে বলা হয়, দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিয়ত কাজ করছে। কিন্তু সাবেক সেনাপ্রধানের এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, পরবর্তী নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে বিদেশে যারা টাকা পাচার করেছেন তাদের ওপর। যদিও এর সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য এখনো নেই। তবে এখানে এটা উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে, ডনাল্ড লু তার বিবৃতিতে সুনির্দিষ্টভাবে দুর্নীতির বিষয়টি উত্থাপন করে গেছেন। তার ভাষ্যটি ছিল এমন ‘আজকে আমি মন্ত্রীদের সঙ্গে দুর্নীতি প্রতিরোধ বিষয়ে আলোচনা করেছি। সরকারি কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে আমরা (দুই দেশ) একসঙ্গে কাজ করতে পারি। এর মাধ্যমে যেসব কর্মকর্তা দুর্নীতি করেছে তাদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে পারি।’ লু’র সফরের রেশ কাটতে না কাটতেই দুর্নীতির দায়ে জেনারেল আজিজ এবং তার পরিবারকে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করার ঘোষণা এলো। দেশটির ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রিসিয়েশন অ্যাক্ট ৭০৩১ (সি) এর আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে তার প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে বাইডেন প্রশাসন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পররাষ্ট্র দফতরের ঘোষণার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন জানালা খুলে গেল। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো জেনারেলের ওপর এমন নিষেধাজ্ঞার পর জনমনে নানা প্রশ্ন ও কৌতূহল। সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো- যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আর কার কার বিরুদ্ধে কী কী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে? স্মরণ করা যায়, জেনারেল আজিজের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিল হয় ২০২১ সালে। তখন তার পরিবারের সদস্যদের ভিসা বাতিলের খবর ছিল না। ২০২১ সালের ১১ই ডিসেম্বর মানবজমিনই প্রথম রিপোর্টটি প্রকাশ করে। সেই খবরে উল্লেখ ছিল সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজকে যুক্তরাষ্ট্রে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই তার মার্কিন ভিসা বাতিল হয়েছে। এক পত্র মারফত জেনারেল আজিজকে যুক্তরাষ্ট্র সেই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছে। কাতারভিত্তিক টেলিভিশন নেটওয়ার্ক আল-জাজিরায় জেনারেল আজিজের দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের খবর প্রচারের পর যুক্তরাষ্ট্র সিদ্ধান্তটি নিয়েছে বলে ধারণা করা হয়েছিল।

ফেব্রুয়ারি(২০২১), ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ নামের প্রতিবেদনটি আল-জাজিরা সম্প্রচার করেছিল। এতে সামি (ছদ্মনাম) নামে হাঙ্গেরিতে বসবাসকারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক ব্যক্তির সহায়তায় হারিস আহমেদ নামে এক অভিযুক্তের পরিচয় প্রকাশ করা হয়। হারিস বুদাপেস্টে মোহাম্মদ হাসান নামে বসবাস করছিলেন। তিনি আজিজ আহমেদের ভাই। আহমেদ পরিবারের বাকি সদস্যদের বিরুদ্ধেও নানা অপকর্মের অভিযোগ প্রকাশ করা হয়। আজিজ আহমেদ অবশ্য তখন সেই সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। জার্মান সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলেকে পরবর্তীতে দেয়া সাক্ষাৎকারে তার ভিসা বাতিল সংক্রান্ত মানবজমিনের খবরকেও অসত্য বলে দাবি করেছিলেন৷

স্টেট ডিপার্টমেন্টের ঘোষণা আজ জেনারেল আজিজের ইউএস ভিসা বাতিল এবং অগ্রহণযোগ্যতা ঘোষণার বিষয়ে হিউম্যান ল্যান্ডের প্রতিবেদনের সত্যতাকে পুনরায় নিশ্চিত করেছে।

উল্লেখ্য, জেনারেল আজিজ আহমেদ ২৪শে জুন ২০২১ তারিখে অবসর গ্রহণ করেন। বর্তমানে স্বস্ত্রীক ঢাকায় আছেন। তার ৩ ছেলে, একজন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত। অন্য দুই ছেলের মধ্যে একজন ব্যাংকার, অন্যজন দুবাইয়ের একটি কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত।

About Nasimul Islam

Check Also

মসজিদের ইমামের কোনো দোষ নেই, জবির সেই আলোচিত ছাত্রী

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম মো. ছালাহ উদ্দিনকে এক ছাত্রীকে ঘিরে বিতর্কিত ঘটনার জের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *