Saturday , May 18 2024
Breaking News
Home / economy / বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে চাপের মধ্যেই ৫ বৃহৎ সেতু নির্মাণে এনডিবি থেকে অর্থ পাওয়ার চেষ্টা

বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে চাপের মধ্যেই ৫ বৃহৎ সেতু নির্মাণে এনডিবি থেকে অর্থ পাওয়ার চেষ্টা

এমন এক সময়ে যখন বাংলাদেশ তার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপে রয়েছে, তখন সরকার পাঁচটি সেতু নির্মাণের জন্য চীন ও রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এনডিবি) কাছে ঋণ চেয়েছে, যা ব্রিকস ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক নামেও পরিচিত। সেতু বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

যে ৫টি সেতুর জন্য ঋণের প্রস্তাব এনডিবিতে পাঠানো হয়েছে সেগুলো হল- ১) ভোলার সঙ্গে বরিশালের সংযোগকারী একটি সেতু (কলাবাদর ও তেঁতুলিয়া নদীর ওপর প্রস্তাবিত)। এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বা ১ হাজার ৬১৫ কোটি ডলার। 2) পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ ২য় পদ্মা সেতু। এই প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৩১ হাজার ২০০ কোটি টাকা (২.৮ বিলিয়ন ডলার)। 3) বাকেরগঞ্জ-বাউফল সড়কে কারখানা নদীর উপর একটি সেতু। 4) ভোলা-লক্ষ্মীপুর সড়কে মেঘনা নদীর উপর একটি সেতু। 5) কক্সবাজারের মহেশখালী চ্যানেলের উপর একটি টানেল বা সেতু। সেতু বিভাগের সূত্র অনুসারে, মোট পাঁচটি প্রকল্পে আনুমানিক 8.87 বিলিয়ন ডলার ব্যয় হতে পারে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা জানান, সেতু বিভাগ ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও মন্ত্রণালয় এনডিবি ঋণ পেতে বেশ কয়েকটি প্রকল্প প্রস্তাব জমা দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে, তারা অনুমান করে যে এই প্রকল্পগুলির সম্ভাব্য মোট ব্যয় সর্বোচ্চ 23 বিলিয়ন ডলার হতে পারে।

NDB-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং চিফ অপারেটিং অফিসার ভ্লাদিমির কাজবেকভের নেতৃত্বে NDB-এর একটি প্রতিনিধি দল 21 থেকে 23 জানুয়ারী পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করেছে।

এ সময় সেতু বিভাগের সঙ্গে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়ন নিয়ে আলোচনা হয়।
সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, সরকারের বেশ কয়েকটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এই প্রকল্পগুলির মধ্যে কয়েকটি চূড়ান্ত সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন পেয়েছে এবং পর্যালোচনাধীন রয়েছে। এনডিবির সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি উঠে এসেছে। তিনি বলেন, এনডিবির সঙ্গে বৈঠকে সেতু বিভাগ অর্থায়নের জন্য কোনো প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দেয়নি। এনডিবি তার পর্যালোচনার ভিত্তিতে যে কোনো সেতুতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী বলে আশা করা হচ্ছে।

সেতু বিভাগ ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানান, বরিশাল-ভোলা সড়ক যোগাযোগের জন্য কলাবাদর ও তেঁতুলিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষ হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ভারতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান-STUP কনসালট্যান্টস। সেতু বিভাগ এখন প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করছে। একই সঙ্গে প্রজেক্ট প্রিলিমিনারি প্রপোজাল (পিডিপিপি) তৈরির কাজ চলছে।

সেতু বিভাগের তথ্যমতে, ৩ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ভোলা জেলাকে মূল-ভূখণ্ড থেকে আলাদা করেছে তেঁতুলিয়া নদী। ২০ লাখের বেশি মানুষ এই দ্বীপে বাস করে। বর্তমানে নদীপথেই ভোলা যেতে হয়। ৪.৮ কিলোমিটারের সংযোগ সড়ক ও ৪.৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের প্রস্তাবিত সেতুটি নির্মাণের উদ্দেশ্য ভোলার সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগের সুযোগ তৈরি করা। সেতু হলে ভোলায় উত্তোলন করা গ্যাস মূল ভূখণ্ডে আনতে পাইপলাইন নির্মাণ করা সম্ভব হবে। ভোলার শাহবাজপুর গ্যাসফিল্ডে ৭২১ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ) গ্যাস মজুত রয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, বাকেরগঞ্জ-বাউফল সড়কে কারখানা নদীর উপর সেতু নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৩ হাজার ৪৮ কোটি টাকা (৩৬৩ মিলিয়ন ডলার)। ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন হয়েছে। বাকেরগঞ্জ ও বাউফল উপজেলা দিয়ে প্রস্তাবিত সেতুটি বরিশাল ও পটুয়াখালীর মধ্যে সরাসরি সড়ক সংযোগ স্থাপন করবে।

এদিকে ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটে মেঘনা নদীতে ৯.২০ কিলোমিটারের সেতু নির্মাণেও এনডিবি’র ঋণ চাওয়া হয়েছে। এই সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে প্রাক-সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ চলমান আছে। সেতু বিভাগের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, এই প্রকল্পে ৩৭ হাজার কোটি টাকা (৩.৩৬ বিলিয়ন ডলার) ব্যয় হতে পারে।

সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ সড়কে পদ্মা নদীতে ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণের একটি পরিকল্পনা রয়েছে। প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, এ সেতু নির্মাণে ব্যয় হবে ৩১ হাজার ২০০ কোটি টাকা (২.৮ বিলিয়ন ডলার)। এ ছাড়া এনডিবি’র কাছে মহেশখালী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত টানেল বা সেতু নির্মাণের অর্থায়ন চায় সরকার। দুই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ টানেল বা সেতু নির্মাণে আনুমানিক ৮ হাজার ১০০ কোটি টাকা বা ৭৩৬ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হতে পারে বলে ধারণা করছে সেতু বিভাগ।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা জানান, এনডিবি’র সঙ্গে সেতু বিভাগ ছাড়াও বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো এনডিবি’র অর্থায়নের জন্য প্রকল্প তালিকা দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যায়, সব মিলিয়ে ২৩ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প তালিকায় পাওয়া গেছে। তবে এনডিবি’র চূড়ান্ত সম্মতি পাওয়া যাবে প্রাথমিক প্রকল্প প্রস্তাব (পিডিপিপি) পাঠানোর পর। এর আগে সরকার কোন কোন প্রকল্পে এনডিবি’র ঋণ নেবে, তা নির্ধারণ করবে। এবং ইআরডির মাধ্যমে এনডিবি’র কাছে পিডিপিপি পাঠানো হবে।

এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে ১৭ প্রকল্পে অর্থায়নে জন্য এনডিবি’র কাছে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলে ইআরডি সূত্রে জানা গেছে। এরমধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাঁচটি প্রকল্প এবং বিতরণ ব্যবস্থা ও সঞ্চালন-এর পাঁচটি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা (৩.৭২৭ বিলিয়ন ডলার)। এরমধ্যে ৩২ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা (২.৯১১ বিলিয়ন ডলার) বৈদেশিক ঋণ থেকে জোগান দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এদিকে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে ১০টি প্রকল্পে ঋণ চাওয়া হয়েছে। তবে এনডিবি’র কাছে দেয়া তালিকায় প্রকল্পের ব্যয় উল্লেখ করা হয়নি।
এ ছাড়া বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় দুটি প্রকল্পে, রেলপথ মন্ত্রণালয় ৮টি প্রকল্পে, ঢাকা ওয়াসা ৫টি প্রকল্পে এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ তিনটি প্রকল্পে ঋণ চেয়েছে।

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে এনডিবি’র সদস্যপদ লাভ করে বাংলাদেশ, তবে ঋণ প্রস্তাব পাঠাতে দীর্ঘসূত্রতার কারণে এই সংস্থার কাছ থেকে এখনো ঋণ পায়নি বাংলাদেশ। তবে দুই প্রকল্পে ঋণ প্রক্রিয়াকরণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

সদস্য পদ পাওয়ার পর থেকে ঋণ প্রস্তাব চেয়ে ইআরডি মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে চিঠি দেয় এনডিবি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বিশ্ব পরিস্থিতিতে দ্য সেকিউরড ওভারনাইট ফিন্যান্সিং (সোফর) রেট বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ বাজার-ভিত্তিক ঋণ কম নিচ্ছে। এ কারণে সরকার এনডিবি থেকে ঋণ নেয়ার প্রক্রিয়ায় ধীরে এগোচ্ছে বলে জানান ইআরডি’র কর্মকর্তারা।
অবকাঠামো উন্নয়নে আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশকে ৪.৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ সুবিধা দিতে চায় এনডিবি। তবে বাংলাদেশের প্রস্তুতির ওপর ভিত্তি করে, ঋণের পরিমাণ আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।

এনডিবি ছয়টি খাতে সদস্য দেশগুলোকে ঋণ দেয়। এগুলো হলো- পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ও জ্বালানি ব্যবহারের দক্ষতা বৃদ্ধি, পরিবহন, অবকাঠামো, পানি ও স্যানিটেশন, পরিবেশ সুরক্ষা, সামাজিক অবকাঠামো এবং ডিজিটাল অবকাঠামো খাত।
সম্প্রতি সাবেক অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল জানান, ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ৬২ হাজার ৩১২.৭১ মিলিয়ন ডলার।

About Zahid Hasan

Check Also

আজ (১৬ মে) সর্বোচ্চ যত টাকায় বিক্রি হচ্ছে মার্কিন ডলার সহ অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রা

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে। তাই ব্যবসায়িক লেনদেন সচল রাখতে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *