Wednesday , May 15 2024
Breaking News
Home / Countrywide / এবার নতুন আতঙ্কে একীভূত তালিকায় থাকা ব্যাংকগুলো

এবার নতুন আতঙ্কে একীভূত তালিকায় থাকা ব্যাংকগুলো

দুর্বলের সঙ্গে সবল এবং সরকারি ব্যাংককের সঙ্গে বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে পুরো ব্যাংকিং খাতে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

বিশেষ করে ব্যাংকে টাকা রাখবেন কি রাখবেন না তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন অধিকাংশ আমানতকারী। কেউ কেউ ভয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন।

এই তালিকায় কিছু প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীও রয়েছে। একটি শরিয়াহ-ভিত্তিক প্রাইভেট ব্যাংক কয়েক দিনে আমানত ফেরতের আবেদন পড়েছে ১২ টি। প্রতিটি মোটা অংকের এফডিআর। ইতিমধ্যেই বেসিক ব্যাংকর আমানত হারিয়েছে ২ হাজার কোটি টাকা।

বিডিবিএল থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা তোলা হয়েছে। একীভূতকরণের তালিকায় থাকা অন্যান্য ব্যাংকগুলোর অবস্থাও প্রায় একই। তারা তাদের আমানত হারানোর ভয় পাচ্ছে।

জানতে চাইলে বেসিক ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবু মোঃ মোফাজ্জল যুগান্তরকে বলেন, “২০১৫ সাল থেকে সোনালী, জনতার মতো বেসিকও একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক। এ কারণে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা আমানত করেছে। বেসিক ব্যাঙ্কের সঙ্গে একীভূত হওয়ার খবরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই 2000 কোটি টাকার বেশি টাকা তুলে নিয়েছে।

তিনি বলেন, এ কারণে একটি সরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করতে সরকারের কাছে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় পরিচালনা পর্ষদ।

ন্যাশনাল ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমানত ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। মাত্র কয়েকদিন আগে পুরনো বোর্ড বিলুপ্ত করে নতুন বোর্ড গঠন করা হয়েছে। নতুন বোর্ডকে কমপক্ষে ছয় মাস থেকে এক বছর সময় দিতে হবে। এখন একীভূত করার সিদ্ধান্ত ব্যাংকের জন্য ভালো হবে না। ইউসিবিও একই কথা বলছে।

ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, অন্যান্য ব্যাংকের মতো ইউসিবিতেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। কারণ আমানতকারীরা টাকা ফেরত চাইছেন।

এদিকে বেসিক ব্যাংক বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চায় না। তারা একটি সরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চায়। ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ এ কথা জানিয়ে সরকারকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে।

এর আগে গত ৯ এপ্রিল ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও অর্থমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপিতে বলেছিলেন, তারা বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চান না। বেসিক ব্যাংক একটি ১০০% রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক।

বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্তে আতঙ্কিত বেসিক ব্যাংকের আমানতকারীরা। কেউ কেউ বেসিক ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে শুরু করেছেন। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি আমানত তুলে নিচ্ছে।

প্রাপ্ত নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষে বিভাগীয় প্রধান (হিসাব ও অর্থ) এসএম আবদুল বারিক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ জিয়াবুল হোসেন এফডিআর সুদের সাথে ১০ কোটি টাকা নগদকরণের জন্য আবেদন করেছেন একটি যৌথ স্বাক্ষরিত চিঠিতে । আবেদনপত্রটি ১৫ এপ্রিল বেসিক ব্যাংকের মিরপুর শাখার ব্যবস্থাপকের কাছে দেওয়া হয়। চিঠিতে এফডিআরের নগদীকরণের কারণ হিসেবে বেসিক ব্যাংককে বেসরকারি সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত উল্লেখ করা হয়েছে।

শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের বোর্ড সভায় বেসরকারি ব্যাংকে এফডিআর না রাখার সিদ্ধান্তের আলোকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক অর্থায়ন করছেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

বেসিক ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ কার্যদিবসে ব্যাংক থেকে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি আমানত তোলা হয়েছে। আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আমানত তুলে নিতে ব্যাংকে চিঠি দিয়েছে। ব্যাংকটি তারল্য সংকটে পড়েছে। ফলস্বরূপ, বেসিক ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রয়োজনীয় নগদ আমানত (সিআরআর) এবং সংবিধিবদ্ধ আমানত (এসএলআর) বজায় রাখতে সক্ষম হয় না।

বেসিক ব্যাংক সূত্র আরো জানায়, ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা, যা কমে ১২ হাজার কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসিক ব্যাংকের দেওয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৮ হাজার ২০৪ কোটি বা ৬৪ শতাংশ।

বুধবার সরকারকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। এরপর চিঠি দেওয়া হয়। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মাজবাউল হক গণমাধ্যমকে বলেন, বেসিক ব্যাংক কোনো সরকারি ব্যাংক নয়।

তবে এটা উল্লেখ করা যেতে পারে যে বেসিক ব্যাংক ১০০% সরকারি মালিকানাধীন। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্রের এমন বক্তব্যের পর জনমনে এক ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।

বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারি ব্যাংক ভেবে ব্যাংকে টাকা রেখেছিল। ব্যাংকের আমানতের বড় অংশ আসে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা থেকে। কিন্তু যখন বলা হলো, এটি সরকারি ব্যাংক নয়, বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হবে, তখন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো টাকা তুলতে শুরু করে।

এমন পরিস্থিতিতে বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে দুটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। তার মধ্যে একটিতে বলা হয়েছে বেসিক ব্যাংক ১০০% সরকারি ব্যাংক। তাই বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা ঠিক হবে না। একীভূত করতে চাইলে সরকারি ব্যাঙ্কের সঙ্গে একীভূত হতে হবে।

 

About Babu

Check Also

অবশেষে যত বছর সাজা হলো মহানবীকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করা সেই জবি শিক্ষার্থী তিথি সরকারের

ইসলাম অবমাননার দায়ে পল্টন থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত ছাত্রী তিথি সরকারকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *