দুর্বল ব্যাংকগুলোকে শক্তিশালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা থেকে পিছু হটছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আপাতত, শক্তিশালী ব্যাংককে দুর্বল ব্যাংকের সাথে একীভূত করতে বাধ্য করা হবে না। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোর পর্ষদ যৌথভাবে সিদ্ধান্ত না নিলে যেসব ব্যাংকের আলোচনা চলছে সেগুলোকে একীভূত করতে তারা বাধ্য করবে না। তবে সরকারি ব্যাংকগুলোর বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে কিছু করবে না।
সূত্র জানায়, এবার বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক আরেকটি বেসরকারি ব্যাংক ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) সঙ্গে একীভূত না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শনিবার ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সরকারি বেসিক ব্যাংক সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছেন ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এদিকে, সরকারি ব্যাংক বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে একীভূতকরণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছেন আরেক সরকারি ব্যাংক রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের কর্মচারীরা। তবে পদ্মা ব্যাংক বেসরকারি খাতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে। এ ছাড়া অন্য কোনো ব্যাংকের পর্ষদ এখনো একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়নি।
এদিকে, ১৫ এপ্রিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাংবাদিকদের ডেকে জানায়, আপাতত পাঁচটি ব্যাংকের বাইরে কোনো ব্যাংক একীভূতকরণের আবেদন নেওয়া হবে না। ব্যাংকগুলির মধ্যে রয়েছে – এক্সিম পদ্মা ব্যাংকের একীভূতকরণের বিষয়ে একটি এমওইউতে প্রবেশ করেছে। এই দুই ব্যাংক একীভূত হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ন্যাশনাল ব্যাংক বোর্ডের ন্যাশনালকে ইউসিবির সাথে একীভূত না করার সিদ্ধান্তের ফলে এখন দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে না। সিটির সাথে বেসিকের একীভূত হওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
বিডিবিএলকে সোনালী ব্যাংকের সাথে এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাথে একীভূত করার জন্য আনুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে।
যদিও এর আগে গভর্নর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলেছিলেন আট থেকে ১০টি ব্যাংক একীভূত হবে।
একীভূতকরণ নিয়ে ব্যাংকিং খাতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় অনেকেই আমানত তুলে নিচ্ছেন। ব্যাংকের আমানত কমছে। বিশেষ করে দুর্বল ব্যাংকগুলোর আমানত বেশি তোলা হচ্ছে। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আপাতত কোনো ব্যাংককে অন্য কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করবে না।
সূত্র জানায়, কোনো পূর্ব আলোচনা ছাড়াই গত ৯ এপ্রিল হঠাৎ করেই ইউসিবির সঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংক একীভূত হওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে আমানতকারী ও কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে শুরু করেছেন। এর বিরুদ্ধে ন্যাশনাল ব্যাংকের কর্মীরা আন্দোলনও শুরু করেন। ফলে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ সেই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেনি। ফলে ন্যাশনাল ব্যাংক আপাতত ইউসিবির সাথে একীভূত হচ্ছে না।
ব্যাংককে ঘুরে দাঁড়াতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোর্ড। এতে ঋণ আদায় জোরদার হবে। বিশেষ করে শীর্ষ খেলাপিদের কাছ থেকে ঋণ পুনরুদ্ধারের উপর জোর দেওয়া হবে। এ জন্য কর্মকর্তাদের বিভিন্ন পর্যায়ে ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হবে।
ডিসেম্বরে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকিং খাতের জন্য একটি প্রম্পট কারেকটিভ অ্যাকশন (পিসিএ) নীতি জারি করে। এর আলোকে কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণ, মূলধন পরিস্থিতি, ব্যবস্থাপনা ও তারল্য পরিস্থিতি এই ৪টি সূচকের ভিত্তিতে দুর্বল ব্যাংক একত্রীকরণের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার চূড়ান্ত পর্যায়ে কাজ করা হবে। যদি ডিসেম্বরের মধ্যে স্বেচ্ছায় একত্রীকরণ না করা হয়, নীতিমালায় মার্চ থেকে বাধ্যতামূলক একীভূতকরণের কথা বলা হয়েছে। এরপর গত ৪ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংক কীভাবে ব্যাংকগুলোকে একীভূত করতে হবে সে বিষয়ে নীতিমালা জারি করে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নীতিমালা না মেনেই কয়েকটি ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই চাপিয়ে দেওয়ায় ব্যাংকিং খাতে সমস্যা তৈরি হয়।