Wednesday , May 15 2024
Breaking News
Home / Exclusive / যেসব ‘অপকর্ম’ করে ফেঁসেছেন কথিত মানবতার ফেরিওয়ালা মিল্টন সমাদ্দার

যেসব ‘অপকর্ম’ করে ফেঁসেছেন কথিত মানবতার ফেরিওয়ালা মিল্টন সমাদ্দার

রাস্তার পাশে প্রতিবন্ধি, ভবঘুরে ও অসুস্থ বৃদ্ধদের খোঁজ পেলেই রবিন হুডের মতো ছুটে যান মিল্টন সমাদ্দার ও তার দল। ফেসবুকে এমন একটি ভিডিও দিয়ে তিনি মানুষের কাছে আর্থিক সাহায্য চান। মিলটনের মতে, প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৫০ লাখ টাকা সহায়তা হিসেবে জমা হয়।

এসব টাকায় রাজধানীর দক্ষিণ পাইকপাড়ায় গড়ে তোলা হয়েছে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার। মিল্টন সমাদ্দার জানান, বর্তমানে সেখানে ২০ জন বয়স্ক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। আর সাভারে কেনা জমিতে নির্মাণ করেছেন ছয়তলা ভবন। যেখানে নারী, শিশু ও বৃদ্ধ পুরুষদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে থাকছেন দুইশত পয়তাচল্লিশ জনের মতো।

মিল্টন সামাদারের দেওয়া তথ্য যাচাই করে দেখা যায়, সেখানে সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৬০ জন আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া দুটি শাখায় মোট ৬০ থেকে ৭০ জন কর্মচারী রয়েছে। তবে মিল্টন ফেসবুক লাইভে বেশ কয়েকবার দাবি করেছেন যে তিনি আশ্রমের দুটি শাখায় আট থেকে নয় শতাধিক মানুষের থাকার ব্যবস্থা করেছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব কর্মকাণ্ডের আড়ালে মিল্টন সমাদ্দার অন্যের জমি দখল করছেন। এমনই একজন শামসুদ্দিন চৌধুরী। মিল্টনের সাভারের আশ্রমের পাশের জমির মালিক তিনি। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া মানুষটির অভিযোগ, বহুদিন ধরে এই জমির দিকে মিল্টনের নজর রয়েছে। ঈদুল ফিতরের আগের দিন পরিবারসহ জমি দেখতে গেলে মিল্টনের সাথে কথা কাটাকাটি হয় তার। একপর্যায়ে মিল্টন আশ্রমের মধ্যে পরিবারের সবাইকে আটকে নির্যাতন করে।
ভুক্তভোগী শামসুদ্দিন চৌধুরী জানান, জমির দিকে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করার কথা বললে মিল্টন ও তার বাহিনী পুরো পরিবারকে আটক করে নির্যাতন করে। মিল্টন ভয় দেখিয়ে জমি দখলের জন্য এই কাজ করেছিলেন।

আশ্রমের আশপাশের বাসিন্দারাও আতঙ্কে রয়েছেন মিল্টন সমাদারের। স্থানীয়দের অভিযোগ, আশ্রমের কর্মীরা মিল্টনের লাঠিয়াল বাহিনীর মতো কাজ করে। স্থানীয় কয়েকজন জানান, মিল্টন জমি দখলের জন্য অনেকেই ভয়ভীতি ও নির্যাতন করেছে।

মিল্টনের এমন আচরণ অনেক পুরোনো। নিজের বাবাকে মারধরের অভিযোগে বরিশালের উজিরপুর থেকে তাকে এলাকাছাড়া করা হয়।

উজিরপুর এলাকার এক বাসিন্দা জানান, ২০০৫ সালে মিল্টন তার বাবাকে মারধর করে। পরে এলাকা থেকে পালিয়ে সে ঢাকায় বসবাস শুরু করে। এখন দেখা যায় সে মানবতার ফেরিওয়ালা। বিষয়টি আশ্চর্যজনক।

অপরদিকে, মিল্টন সমাদ্দার ও তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রাজধানীর দক্ষিণ পাইকপাড়ার বাসিন্দাদের স্পর্শকাতর একটি অভিযোগ রয়েছে। তারা অভিযোগ করেন, আশ্রমে দুই থেকে তিনদিন পরপরই মানুষ মারা যেতো। পরে গোসলের জন্য তাদের পার্শ্ববর্তী বায়তুস সালাহ মসজিদে নিয়ে যাওয়া হতো। মসজিতে গোসলের কাজে নিয়োজিতরা মরদেহের শরীরের সন্দেহজনক কাটাছেঁড়া দেখতে পান। এতে মসজিদ কর্তৃপক্ষ শরীর থেকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ চুরির সন্দেহ করে।

একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রতিটি লাশ বিকৃত। এ কারণে গোসল করতে নিয়োজিত এক ব্যক্তি গোসল করাতে অস্বীকার করেন। একপর্যায়ে ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে সেখানে লাশ পাঠানো বন্ধ করে দেওয়া হয়।

আরেক স্থানীয় জানান, মিল্টন কিছু ছেলেপেলেকে পুষতো। কিছুদিক আগে তার আশ্রমে কবুতর যাওয়াকে কেন্দ্র করে স্থানীয় দুইজনকে আটকে নির্যাতন করে সে।

মিল্টন সামাদারের আত্মসাৎ এবং জালিয়াতির আরও পুরনো ইতিহাস রয়েছে। বরিশালের উজিরপুরে ‘চন্দ্রকোনা খ্রিস্টান মিশনারি চার্চ’ নামে একটি গির্জা রয়েছে। তিনি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সিল ও স্বাক্ষর জাল করে গির্জার নতুন কমিটি গঠন করেন। পরে তিনি বরিশাল জেলা প্রশাসককে চিঠিও দেন। ওই কমিটির সভাপতি করা হয় মিল্টন সমাদেরকে। কমিটির বাকিরা তার স্ত্রী ও ভাই।

পরে বিষয়টি চার্চের যাজকদের নজরে এলে তারা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেন। তাদের জানানো হয়, মন্ত্রণালয় থেকে এ ধরনের কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি।

পুরোহিতরা বলেছিলেন যে তারা গির্জাটি দখল করার জন্য প্রচুর প্রচেষ্টা করেছিল। তাদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে বলেও জানান তারা।

এসব স্পর্শকাতর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মিল্টন সমাদ্দার ও তার স্ত্রী প্রতিটি অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। মিল্টন সমাদের বলেন, অঙ্গ বিক্রির অভিযোগ আনা হয়েছে এই অঙ্গ কোন হাসপাতালে বিক্রি হয়েছে তা দেখাতে হবে।

তার স্ত্রী কিশোর বালা জানান, তিনি জাতীয় হৃদরোগ ইনিস্টিটিউট হাসপাতালে সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে কর্মরত। এমন পেশায় থেকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে পারেন না তিনি।

মিল্টন সামাদারের প্রতিষ্ঠানটি সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক অনুমোদিত। কিন্তু সেখানে সরকারি কোনো নিয়মই মানা হয়নি। প্রতিষ্ঠানটিতে কোনো ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়নি। কোটি কোটি টাকা অনুদান পেলেও আয়-ব্যয়ের কোনো হিসাব নিরীক্ষা করা হয়নি। এসব অনিয়ম খতিয়ে দেখতে ২৫ মার্চ তদন্ত কমিটি গঠন করে সমাজসেবা অধিদপ্তর।

About Nasimul Islam

Check Also

টাকার বিনিময়ে মাকে ম্যানেজ করে মেয়ের সাথে খারাপ কাজ

রংপুরের গঙ্গাচড়ায় গ্রামের কবিরাজ আবদুল খালেকের বিরুদ্ধে এক প্রতিবন্ধী গৃহবধূকে কৌশলে বাড়িতে নিয়ে ধ*র্ষণের অভিযোগ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *