২২ বছর আগে আমি আমার স্বামীকে হারিয়েছি এবং অনেক কষ্ট করে ছেলে মেয়েদের লালন পালন করেছি। এতোদিন কষ্ট করার পর কেবল সুখের মুখ দেহা ধরছেলাম। সুখ আর আমার কপালে সহ্য হইলো না। আল্লায় এইডা কি করলে, আমারে নেলে না ক্যান? আমি এই জীবনডা কেমনে কাডামু! আমার পুতেগো লগে আমার রাইত ১১টার কালেও কতা হইছে।’
হবিগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই ছেলে, নাতি ও পুত্রবধূকে হারিয়ে একদম ভেঙ্গে পড়েছে মা হালিমা বেগম। দুর্ঘটনার আগের কথাগুলো বারবার মনে পড়ছে তার। মানত পূরণে গিয়েছিলেন হযরত শাহজালাল( র.) এর মাজার জিয়ারত করতে, ফিরলেন লাশ হয়ে।
শুক্রবার (৩ মে) পটুয়াখালীর গলাচিপার সদর ইউনিয়নের বয়লিয়া গ্রামে ভুক্তভোগীদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সন্তান হারানো মায়েদের কান্না।
এর আগে গত বুধবার (১ মে) ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের হরিতলা নামক এলাকায় ট্রাক ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের চারজন নিহত হন। নিহতরা হলেন গলাচিপা সদর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের মৌজালী মৃধার মেজো ছেলে মো. জামাল হোসাইন (৪২), ছোট ছেলে এনামুল হক খোকন (৩৫), জামাল মৃধার স্ত্রী কামরুন নাহার (৩০) ও ছেলে কাওসার হোসাইন অনন্ত (১২)।
নিহত জামাল হোসেন ঢাকার সাভারে অবস্থিত পাইওনিয়ার গ্রুপের মেক্স কম ইন্টারন্যাশনাল বিডি লিমিটেডে ইলেকট্রিশিয়ান ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার ছোট ভাই এনামুল হক খোকন একই এলাকার ব্যাবিলন গ্রুপের অবনী ফ্যাশনে সিনিয়র সুইং অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় নিহত তিনজন ও কামরুন নাহারের জানাজা সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠিত হয় এবং জানাজা পরিচালনা করেন মসজিদের ইমাম হাফেজ মো. রবিউল হুসাইন। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।
জামালের চাচাতো ভাই ফেরদৌস জানান, জামাল ভাই গত ৩০ এপ্রিল রাতে ছেলে কাওসারের মাজার জিয়ারত করতে সিলেটে যান। ভাবী আর খোকন ভাইও ছিলেন। তারা ১ মে সারাদিন সিলেটে অবস্থান করে রাতে ঢাকার উদ্দেশ্যে সিলেট ত্যাগ করেন। রাত ১০টার পর তাদের সঙ্গে শেষ কথা হয়। দুপুর ২টার দিকে আমরা দুর্ঘটনার খবর পাই।
জামাল ও খোকনের চাচা মো: সোনা মিয়া জানান, আমার ভাগ্নি জামাল ও খোকন ঢাকার সাভারে চাকরি করতেন। তারা খুব বিনয়ী এবং শান্ত ছিল। আমার বোন স্বাভাবিকভাবেই তাদের মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না। বর্তমানে এ পরিবারে কোনো উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায় সে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। তাই আমরা সরকারের কাছে সর্বোচ্চ সহযোগিতা কামনা করছি
গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল জানান, আজ সকালে নিহতদের মরদেহ গলাচিপা উপজেলায় আসে। এরই মধ্যে শেষকৃত্য ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। নিহতদের পরিবারকে সহায়তা দিতে কাজ করছে উপজেলা প্রশাসন।