Thursday , May 16 2024
Breaking News
Home / Countrywide / আন্দোলনে উত্তপ্ত বুয়েট: হঠাৎ চমক হাসানের ফেসবুক পোস্ট ভাইরাল

আন্দোলনে উত্তপ্ত বুয়েট: হঠাৎ চমক হাসানের ফেসবুক পোস্ট ভাইরাল

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে হবে বলে মনে করেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক শিক্ষার্থী, আমেরিকা প্রবাসী গবেষক, লেখক ও শিক্ষক চমক হাসান।

রোববার (৩১ মার্চ) বাংলাদেশ সময় রাত ৮টার কিছু আগে তার ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি এ অভিমত দেন। পোস্টটি সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে প্রতিবেদনটি লেখার সময় ৩৮ হাজার প্রতিক্রিয়া, প্রায় ১ হাজার মন্তব্য এবং ২ হাজার ৩০০টির বেশি শেয়ার হয়েছে। বুয়েটের বর্তমান এবং প্রাক্তন অনেক শিক্ষার্থী মন্তব্য বিভাগে এই পোস্টের জন্য চমক হাসানকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন।

সেই ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ইস্যুতে পাল্টাপাল্টি আন্দোলন চলছে, বুয়েটের একজন প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে আমি আমার অবস্থান স্পষ্ট করতে চাই। আমি দৃঢ়ভাবে মনে করি বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা উচিত। ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্রশিবির—কিছুই দরকার নেই।

কারণ দেখানো সহজ। দুটি কলাম সহ একটি টেবিল তৈরি করুন। বাম পাশে ছাত্র রাজনীতির উপস্থিতি বুয়েটে যে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে তার একটি তালিকা এবং ডান পাশে থাকুক ছাত্র রাজনীতির উপস্থিতির কারণে ছাত্র-শিক্ষক প্রশাসন কী কী যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে গেছে তার একটি তালিকা। ডানদিকে আবরার, সনি, এই নামের যে একটির ভার বামদিকের সম্মিলিত ওজনের চেয়ে বহুগুণ বেশি। তারপরও র‌্যাগিং, অত্যাচার, চাঁদাবাজি, ক্ষমতা প্রদর্শন, অন্যায় সুবিধার উপাখ্যানের পাতার পর পাতা ডানদিকের তালিকায় লেখা যাবে। তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কেন ছাত্র রাজনীতি চাইবে?’

২০১৯ সালে আবরার ফাহাদ নামে এক ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করে বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ওই ঘটনার পর ছাত্র আন্দোলনের মুখে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। আবরার হত্যার কথা স্মরণ করে চমক লিখেছেন, “ডিপার্টমেন্টের প্রিয়তম জুনিয়র আবরারকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা মন থেকে মুছে যায়নি। পরিচিত জুনিয়রদের সাথে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তা থেকে বলতে পারি, আবরার-এর পর। হত্যার ঘটনা, যখন ছাত্র-রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল, তখনও সাধারণ ছাত্ররা খুবই শান্তিতে ছিল, এখনও আছে, সেই নরকে আবার ফিরিয়ে আনার কোনো কারণ নেই।

তিনি লিখেছেন, ‘ছাত্রলীগ না থাকলে শিবির মাথা তুলে দাঁড়াবে- এটাও কোনো গ্রহণযোগ্য যুক্তি নয়। সোজা কথায়- ছাত্র রাজনীতি নয় মানে সংগঠনের কোনো কার্যক্রম নয়। না ছাত্রলীগ, না শিবির। সাধারণ ছাত্ররা সবাই প্রতিরোধ করবে। গত কয়েকদিনে সবার সাহস ও ঐক্য দেখে তাদের প্রতি আমার এই আস্থা আছে।

চমক হাসান শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিয়ে পরীক্ষা বর্জন করে শিক্ষার্থীরা যে ঐক্য দেখিয়েছেন তার প্রশংসা করে শিক্ষার্থীদের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন।

সম্প্রতি ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের ইস্যুতে আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বুয়েট। শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ছয় দফা দাবিতে আন্দোলন করছে। অন্যদিকে ছাত্র রাজনীতিতে ফেরার দাবিতে কর্মসূচি পালন করছে ছাত্রলীগ।

গত ২৮ মার্চ মধ্যরাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রবেশের ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে সংশ্লিষ্ট ছাত্র ইমতিয়াজ হোসেন রহিমের হলের আসন বাতিল করে প্রশাসন। তবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি। এর পাশাপাশি আরও পাঁচটি দাবি তুলে ধরেন তারা। অন্যদিকে, বুয়েট ক্যাম্পাসে চার বছর ধরে নিষিদ্ধ ছাত্র রাজনীতি ফিরিয়ে আনার দাবিতে সামিল হয়েছে ছাত্রলীগ।

বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক, মৌলিক অধিকার ও শিক্ষার পরিপন্থী বলে অভিহিত করেছেন ছাত্রলীগ নেতারা।

এ নিয়ে রোববার (৩১ মার্চ) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে নেতাকর্মীদের নিয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।

তবে এ সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ রাব্বি ছাড়া বুয়েটের কোনো শিক্ষার্থী সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।

পরে দুপুর আড়াইটার দিকে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরা বুয়েট শহীদ মিনার সংলগ্ন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

এর আগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি ফিরিয়ে আনার আল্টিমেটাম দেন। তিনি বলেন, আমরা অবিলম্বে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি শুরু করার জন্য বুয়েট প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাব। আপনি যে নিয়মটি শুরু করেছেন তা হল কালাকানুন, এটাই কালো আইন।

এ সময় তারা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ রাব্বীর বৈধ আসন ফিরিয়ে দেওয়ারও আহ্বান জানান।

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শের-ই-বাংলা হলে ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। প্রাণ বাঁচাতে বারবার অনুরোধ করেও প্রাণ বাঁচাতে পারেননি তিনি। ৬ ঘণ্টা নির্যাতনের পর আবরারের লাশ হলের দ্বিতীয় তলা ও নিচতলার মাঝখানের সিঁড়িতে ফেলে রাখা হয়। সিসিটিভি ফুটেজে দৃশ্যটি ধরা পড়ে। অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের অধিকাংশই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এই ঘটনার পর 2019 সালের 16 নভেম্বর বুয়েট প্রশাসন শিক্ষার্থীদের রাজনীতিতে অংশ না নেওয়ার জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করে।

 

 

About Babu

Check Also

নতুন করে রিজার্ভ চুরির সংবাদ, যা জানাল বাংলাদেশ ব্যাংক

ভারতীয় একটি পত্রিকায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ফের রিজার্ভ চুরির প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *