Friday , May 17 2024
Breaking News
Home / Countrywide / রিজার্ভ নিয়ে এবার কঠোর বার্তা দিল আইএমএফ

রিজার্ভ নিয়ে এবার কঠোর বার্তা দিল আইএমএফ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) রিজার্ভ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থতায় উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো পদক্ষেপ করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ক্ষতি ঠেকাতে পারছে না। এক্ষেত্রে আইএমএফ রিজার্ভ ধরে রাখতে ব্যর্থতার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন ভুল নীতিকে দায়ী করেছে। একইসঙ্গে মিশন শেষ হওয়ার আগেই রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা করতে বলেছে সংস্থাটি। এছাড়া খেলাপি ঋণের পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশ, খেলাপিদের কোনো সুবিধা না দেওয়া এবং মানি লন্ডারিং রোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কী পদক্ষেপ রয়েছে তা জানতে চেয়েছে আইএমএফ।

সোমবার বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকে এসব তথ্য জানতে চেয়েছে ঢাকা সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি দল। এ সময় বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান মাসুদ বিশ্বাস, চার ডেপুটি গভর্নর, মুখপাত্র ও বিভিন্ন দপ্তরের নির্বাহী পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বৈঠক সূত্র জানায়, রিজার্ভ ধরে রাখতে ব্যর্থতার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন ভুল নীতিকে দায়ী করেছে আইএমএফ। একই সঙ্গে কেন রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না এবং লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বাড়তি কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে সে বিষয়ে লিখিত বক্তব্য চেয়েছে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা। এ ক্ষেত্রে পরবর্তী সভার (৮ মে) আগে কর্মপরিকল্পনা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা অনুযায়ী, সোমবার গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফ-এর পরামর্শে বিপিএম-৬ অনুযায়ী এটি ১৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার।তবে এটি বাস্তব রিজার্ভ নয়। প্রকৃত ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ খুঁজে বের করতে, বর্তমান দায় হিসাবে ৫ দশমিক ৯০ বিলিয়ন, বিদেশী ঋণ, প্রকল্প বকেয়া এবং বিশেষ সম্পূরক মুদ্রা (এসডিআর) বকেয়া বিপিএম ম্যানুয়াল থেকে বাদ দিতে হবে। এই হিসাবে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে গড় আমদানি ব্যয় ছিল যথাক্রমে ৫ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার, ৫ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার এবং ৫ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার।

চলতি ক্যালেন্ডার বছরের মার্চ মাসেও বাংলাদেশ প্রকৃত রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। মার্চের শেষে প্রকৃত রিজার্ভ ১৯ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু আসলে তা প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের জুনে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার, তবে নিট রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।

এছাড়াও, আইএমএফ জিজ্ঞাসা করেছে খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে কোন ফাঁক আছে কি না। একই সময়ে, কোম্পানিটি এটিও জানতে চেয়েছিল যে মামলায় ধরে রাখা, পুনঃনির্ধারণ এবং ফোরক্লোজারকে গ্রাহকদের কাছে ব্যাংকের খারাপ সম্পদ হিসাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে কিনা। এছাড়া খেলাপি ঋণ আদায়ে বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপিদের কোনো সুবিধা দিচ্ছে কিনা তাও জানাতে বলা হয়েছে সংগঠনটিকে। খেলাপিদের প্রতি কোনো নম্রতা দেখালে সেখান থেকে ফিরে আসার কথাও বলা হয়। তবে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুনর্নির্ধারণ ও পুনঃনির্ধারণের বিষয়ে যে নীতিমালা করেছে, সে বিষয়ে আইএমএফ কোনো মন্তব্য করেনি। এছাড়া দেশ থেকে কী পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য চেয়েছে সংস্থাটি। এছাড়াও, সংস্থাটি অর্থ পাচার প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপের অগ্রগতি এবং অর্থ পাচার রোধে কঠোর পদক্ষেপের তথ্য আহ্বান করেছে।

ঢাকায় আইএমএফের সফরকারী দল তাদের মধ্য মেয়াদী সফর নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ৩ দফা বৈঠক করেছে। এছাড়া ব্যাংক একীভূতকরণ নীতি বিষয়ে নীতি উপদেষ্টা আবু ফারাহ মো. নাসেরের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। বিভিন্ন বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ইস্যু ছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার রাজস্ব ঘাটতি বেশি হওয়ায় ঘাটতি কমানোর চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, মুদ্রাবাজার ব্যবস্থাপনা, রিজার্ভ, খেলাপি ঋণসহ অনেক বিষয়ে আইএমএফ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তথ্য চেয়েছে। তবে রিজার্ভ ক্রমাগত কমে যাওয়া নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। সেক্ষেত্রে ভাঙন রোধে নতুন কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে তাও জানতে চেয়েছেন তারা। তবে ঋণের কিস্তি মওকুফের ক্ষেত্রে এটা কোনো বাধা হবে না বলে মনে করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি আইএমএফ রিজার্ভ টার্গেট আবার পর্যালোচনা করবে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মাজবাউল হক বলেন, আইএমএফ দল রিজার্ভের বর্তমান অবস্থা, বিনিময় হার ও স্মার্ট রেট নিয়ে আলোচনা করেছে। আইএমএফ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, বিশেষ করে আর্থিক খাতে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করার পরামর্শ দিয়েছে। একই সঙ্গে তারা জলবায়ু খাতে বিনিয়োগের জন্য একটি মডিউল তৈরি করার কথা বলেন।

About Babu

Check Also

নতুন করে রিজার্ভ চুরির সংবাদ, যা জানাল বাংলাদেশ ব্যাংক

ভারতীয় একটি পত্রিকায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ফের রিজার্ভ চুরির প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *