ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ জানান, বাবাকে মারধরের পর মিল্টন সমাদ্দারকে এলাকা থেকে বিতাড়িত করা হয়। এরপর সে ঢাকায় চলে আসে। ঢাকায় এসে একটি ফার্মেসিতে কাজ শুরু করেন। তবে ওষুধ চুরির দায়ে তাকে ফার্মেসি থেকে বহিষ্কার করা হয়।
বুধবার (১ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টার দিকে ডিবির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, আজ মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। তার বাড়ি বরিশালের উজিরপুরে। বাবাকে মারধর করায় গ্রামবাসীরা তাকে বের করে দেয়। পরে ঢাকায় এসে একটি ফার্মেসিতে কাজ শুরু করেন। ওষুধ চুরির দায়ে সেখান থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। তারপর কিছুদিন পড়াশুনা করেন। পরে মিঠু হালদার নামে এক নার্সকে বিয়ে করেন।
তিনি জানান, হঠাৎ তিনি ভেবলেন একটা বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠা করে মানুষের সেবা শুরু করবেন। পরে স্ত্রীকে নিয়ে মিরপুরে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার নামে একটি প্রতিষ্ঠান শুরু করেন। সেখানে শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে আসা হয়।আপনারা দেখেছেন ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যে, সেখানে অপারেশন থিয়েটার আছে। মানুষ সেখানে বিভিন্ন সেবা নেয়। কিন্তু অপারেশন থিয়েটার থাকতে হলে লাইসেন্স প্রয়োজন যা তার নেই। এ ছাড়া সে মরদেহ রাতে দাফন করে এবং চিকিৎসকের স্বাক্ষর জাল করে নিজেই ডেড সার্টিফিকেট দেয় যা সে স্বীকার করেছে।
তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে বলেও জানান তিনি। আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করব। তিনি রাতে কেন লাশ দাফন করেন, কেন নিজেরাই জাল ডেথ সার্টিফিকেট তৈরি করলেন। এ ছাড়া তার প্রতিষ্ঠানে থাকা ব্যক্তির স্বজনদের সে টর্চারসেলে নিয়ে পিটিয়েছে। এগুলো জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
হারুন অর রশিদ বলেন, মিল্টনের বিরুদ্ধে আমরা অনেক অভিযোগ পেয়েছি। তিনি জানান, তার দুটি আশ্রম রয়েছে। তার মতে সাভারের আশ্রমে ৫ থেকে ৭শ লোক রয়েছে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখা গেল ২০ থেকে ৩০ জনের বেশি নেই। কিছু অভিযোগকারী আছে, তারা মামলা করবে।
তিনি বলেন,মিল্টনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবো তিনি কত সংখ্যক মানুষের কাছে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন। তার আশ্রমে থাকা কত মানুষ মারা গেলো। আশ্রমে যে অপারেশন থিয়েটার রয়েছে, এর মাধ্যমে কিডনি বিক্রি করেছেন কি না সেটিও তদন্ত করা হবে।
ডিবি প্রধান আরও বলেন, মিল্টন সমাদ্দার নিজেই কেন ডেথ সার্টিফিকেট নিজের স্বাক্ষরে তৈরি করেছেন এবং সেখানে চিকিৎসকের কোনো সই নেই, সেগুলো খুঁজে বের করা হবে। আমরা সবকিছু তদন্ত করে পরবর্তী সময়ে আপনাদের জানাবো। আমরা তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ পেয়েছি, সেগুলো তদন্ত করে তাকে রিমান্ডে নিয়ে পরবর্তী বিষয়গুলো জানাবো।
যারা এখন আশ্রমে আছেন তাদের কার্যক্রম চলবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মিল্টনের লোকজন আছে, আশ্রমের কার্যক্রম যথারীতি চলবে।
এর আগে রাত ৮টার দিকে পাইকপাড়ায় স্থাপনায় অভিযান চালায় ডিবি। আজ সন্ধ্যায়, পুলিশ সোশ্যাল মিডিয়ার সুপরিচিত মুখ মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করেছে, যিনি মানবতার ফেরিওয়ালার মুখোশের আড়ালে ভয়ংকর সব প্রতারণার অভিযোগ ওঠা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পরিচিত।
এর আগে ২৫ এপ্রিল একটি সংবাদপত্রের প্রিন্ট সংস্করণে ‘মানবিক মুখোশের আড়ালে ভয়ংকর মিল্টন সমাদ্দার’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।