‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা বিচারাধীন। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ড চাইবে পুলিশ।
বুধবার রাত ৯টার দিকে ডিবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ।
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে মানবপাচার ও নির্যাতনসহ প্রতারণার মামলা করা হবে বলে জানান তিনি। গণমাধ্যমে আসা সব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। এছাড়া রাতে লাশ কেন দাফন করতেন সে বিষয়ে মিল্টন বলেন, মানুষ তাকে প্রশ্ন করে তাই রাতে তিনি লাশ দাফন করতেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী ৯০০ দাফন করলেও ৮৩৫টি লাশের দাফনের কাগজপত্র দেখাতে পারেননি তিনি।
ডিবি প্রধান বলেন, মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। বিশেষ করে তার বিরুদ্ধে লাশের অসঙ্গতি ও ভুয়া ডেথ সার্টিফিকেটের অভিযোগ গুরুতর মনে হয়েছে। তাকে সব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশের একটি দল। এছাড়া, ২৫ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে মানবতা ব্যবসায়ীদের মুখোশের আড়ালে ভয়ানক সব প্রতারণার খবর প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মিল্টন সমাদ্দার নামে এক ব্যক্তি ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ নামে একটি বৃদ্ধাশ্রম নির্মাণ করেন এবং অসুস্থ বা ভবঘুরেদের রাস্তা থেকে তুলে এনে আশ্রয় দেন। তাকে প্রায়ই নারী, পুরুষ ও শিশুদের ভিডিও তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতে দেখা যায়।
মানুষের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে তিনি তাদের জন্য বিত্তবানদের কাছে সাহায্য চান। তার আবেদনে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যায়। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ১৬টির বেশি নম্বর এবং তিনটি ব্যাংক হিসাবে প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকা জমা হয়। এর বাইরে অনেকেই তার প্রতিষ্ঠানে সরাসরি অনুদান দিয়ে আসেন। মানবিক কাজের জন্য এখন পর্যন্ত তিনটি রাষ্ট্রীয় পুরস্কারও পেয়েছেন মিল্টন সমাদ্দার।
এটি মিল্টনের আসল চেহারা নয়। প্রতিবেদনে ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। মানবতার আড়ালে তিনি যা করেন তা মর্মান্তিক। মিল্টন আশ্রমের চারপাশে ভয়ানক প্রতারণার জাল ছড়িয়ে দিয়েছেন যার জন্য তিনি এত বিখ্যাত। প্রকৃতপক্ষে যে কয়জনকে লালন-পালন করছেন, তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি প্রচার করছেন। লাশ দাফন করার যে হিসাব দিচ্ছেন, তাতেও আছে অনেক গরমিল।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল, মিল্টনের বিরুদ্ধে আশ্রয় দেওয়ার নামে অসহায় মানুষের অঙ্গ বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। মিল্টন সামাদারের ব্যক্তিগত জীবনেও নৈতিকতা বা মানবিকতার অভাব রয়েছে। কৈশোর থেকেই তার টাকার লোভ ছিল। প্রতিবেশী, প্রতিবেশী, চিকিৎসক কিংবা সাংবাদিকরা বিভিন্ন সময় তার কাছে শারীরিক লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। এমনকি নিজের জন্মদাতা পিতাকেও বেধড়ক মারধরের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ফেসবুক পেজ অনুযায়ী, মিলটনের আশ্রমে সবসময় ২৫০ থেকে ৩০০ অসুস্থ রোগী থাকে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে সড়কে যারা মারা গেছে তাদের কবর দেন মিল্টন। তাঁর আশ্রমে থাকতেই অনেকেই মারা যান। তিনি এ পর্যন্ত প্রায় ৯০০ লাশ দাফন করেছেন বলে দাবি করেছেন।
মিল্টন বলেন, যাদের দাফন করা হয়েছিল তাদের মধ্যে ৬০০ তার আশ্রমে মারা গেছে। বাকি ৩০০ লাশ রাস্তা থেকে এনে দাফন করেন। রাজধানীর মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থান, রায়ের বাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থান ও আজিমপুর কবরস্থানে এসব লাশ দাফন করা হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন। সরেজমিনে জানা যায়, মিলটন সমাদ্দারের প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে সেখানে ৫০টি লাশ দাফন করা হয়েছে।