বর্তমানে ব্যাংকের সুদের হার রেফারেন্স রেট অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, শিগগিরই এটিকে বাজারভিত্তিক করা হবে।
তিনি বলেন, বর্তমান সুদের হার নির্ধারণ ব্যবস্থা একটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা। এ ক্ষেত্রে বাজারের ভিত্তিতে সুদের হার নির্ধারণের স্বাধীনতা থাকবে ব্যাংকের।
রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ ও বণিক বার্তার যৌথ উদ্যোগে ‘পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে উন্নয়নের পথ অনুসন্ধান’ প্রতিপাদ্যে দুদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত প্রথম ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে ‘ফিসক্যাল অ্যান্ড মনিটরি পলিসি ইন দ্য ইভলভিং ইকোনমিক অর্ডার’ সেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে অধিবেশনে সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও ফজলে কবির, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ড. এম তারেক ও মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী আলোচনায় অংশ নেন।
আলোচনায় শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সুদহার, মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, তারল্য সংকটসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে।
বিনিময় হার প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, এ ক্ষেত্রে কিছুটা অসুবিধা রয়েছে। একটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা হিসাবে ক্রলিং পেগ সিস্টেম চালু করতে যাচ্ছি। পরে তাও বাজারভিত্তিক করা হবে।
মুদ্রানীতি প্রণয়ন কমিটিতে আগে অভ্যন্তরীণ কর্মকর্তারা থাকলেও বর্তমানে বাইরের বিশেষজ্ঞদেরও এখানে অন্তভুক্ত করেছি।
ভর্তুকির বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে বাজারে অর্থের সরবরাহ বাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বিশেষ বন্ড থেকে এক লাখ কোটি টাকা তৈরি হয়েছে বলে একজন আলোচক উল্লেখ করেছেন। কিন্তু টাকা তৈরির বিষয়টি এতটা দ্রুততার সঙ্গে হয় না। বন্ডের মাধ্যমে অর্থের সরবরাহ বাড়ার জন্য কয়েক বছর সময় লাগে।
গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, বিভিন্ন পর্যায় থেকে টাকা ছাপানোর কথা বলা হচ্ছে। এটা ভুল ধারণা। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারকে কোনো ঋণ দেওয়া হচ্ছে না। সরকারি ঋণের পুরোটাই বাণিজ্যিক ব্যাংক সরবরাহ করছে। এর ফলে এখন টাকা ছাপানোর প্রভাব শূন্য।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যথষ্টে ক্ষমতা আছে। আর স্বাধীনতা কেউ দেয় না। লোকবল, দক্ষতার মাধ্যমে অর্জন করতে হয়। আবার বাইরের চাপ থাকে সেটা মোকাবিলার দক্ষতা থাকতে হয়।
প্রাক্তন গভর্নর বলেছিলেন যে তিনি যখন রাজ্যপাল ছিলেন তখন সবাই ফেরেশতা ছিলেন না। নতুন ব্যাংক অনুমোদনের চাপ ছিল। তবে তিনি নানাভাবে সময় নষ্ট করে শেষ পর্যায়ে গিয়ে বলেন, ব্যাংক দিলে অর্থনীতির ক্ষতি হবে।
তিনি বলেন, আর্থিক খাতের বর্তমান বাস্তবতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরও কঠোর হওয়ার সময় এসেছে। কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে নয়। এখানে সবাই সহজ পথে চলতে চায়। পরোক্ষ করের চেয়ে প্রত্যক্ষ কর সংগ্রহ করা সহজ। এখানে এক পাউরুটিতে ধনী, দরিদ্র সবাইকে একই হারে কর দিতে হয়।
ড. সালেহ উদ্দিন বলেন, শুধু মুদ্রানীতি কঠোর করে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে দিলেই হবে না। যদি কর্মসংস্থান এবং বিনিয়োগ এগুলো না হয়, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিনিয়োগে প্রথম প্রভাব ফেলবে।
সাবেক অর্থ সচিব ও এক সময়ের নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বলেন, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কথা বলা হচ্ছে। আবার বিদ্যুতে ভর্তুকি বাবদ ২০ হাজার কোটি টাকার বন্ড জারি করেছে সরকার। আবার ব্যাংকগুলো এ বন্ড রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিতে পারবে, এসএলআর সংরক্ষণ করতে পারবে। ফলে মানি মাল্টিপ্লায়ার প্রভাব ৫ গুণ ধরলে ২০ হাজার কোটি টাকা অর্থনীতিতে এক লাখ কোটি টাকার প্রভাব ফেলছে। অবশ্য একটা ভালো খবর হলো, এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারকে ঋণ না দিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে দিচ্ছে।