Thursday , May 16 2024
Breaking News
Home / economy / মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা, দুদকের জালে ধরা দেশের চারটি ব্যাংকের ১৯ জন কর্মকর্তা

মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা, দুদকের জালে ধরা দেশের চারটি ব্যাংকের ১৯ জন কর্মকর্তা

সোনালী ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংকের কর্মকর্তারা ভুয়া ভাউচার, ব্যাংকের মূল রেজিস্টারে এন্ট্রি না করাসহ নানাভাবে মার্কিন ডলারসহ বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করত। তাদের সহযোগীও ছিল মানি এক্সচেঞ্জের মালিক-কর্মচারী। যার কারণে দেশের মজুদও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব মুদ্রা পাচারকারীদের ধরতে প্রথমে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গোয়েন্দা জাল ফেলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আর এই জালে আটকা পড়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত তিনটি ব্যাংকসহ চারটি ব্যাংকের ১৯ জন কর্মকর্তা। এছাড়া শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের অন্যান্য বিমানবন্দরে দুদকের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

দুদক কর্মকর্তারা জানান, প্রবাসী ওয়েজ আর্নার্স ও বিমানের যাত্রীরা ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মূল্যবান যে রেমিট্যান্স নগদ ও বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসেন, তা ব্যাংকিং চ্যানেলে রাষ্ট্রীয় রিজার্ভে জমা হওয়ার কথা। কিন্তু দুর্নীতিবাজ ব্যাংক কর্মকর্তারা ব্যাংকের টাকা ব্যবহার করে নিজেরাই কিনে খোলা বাজারে বিক্রি করে দেন। যা পরে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে আবার বিদেশে পাচার হয়ে যায়। এভাবে দেশের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে আসছিলেন তারা। গত ফেব্রুয়ারিতে এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি লিখিত অভিযোগ আসে। একইসঙ্গে দুদকের গোয়েন্দারাও সরেজমিন বিষয়টির সত্যতা পান। এরপরই গত ৫ ফেব্রুয়ারি দিনব্যাপী কমিশনের উপপরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান চালায়। অভিযান শেষে বৈদেশিক মুদ্রার কালোবাজারিদের সঙ্গে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তা ও মানি এক্সচেঞ্জারদের একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়। এরপরই কমিশনের অনুমোদন নিয়ে প্রকাশ্যে অনুসন্ধানে নামেন দুদক কর্মকর্তা।

বিমানবন্দরে মুদ্রা পাচারের তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম তার তদন্ত প্রতিবেদনে বলেন, ব্যাংক কর্মকর্তারা তাদের অর্পিত দায়িত্ব পালন না করে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মুদ্রা পাচার এবং জালিয়াতি চক্রের সাথে জড়িয়ে পড়েছেন। অন্য দুটি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করে। এই কর্মকর্তারা বিদেশ থেকে আসা ও ছেড়ে যাওয়া ফ্লাইটের যাত্রীদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ ও বিতরণ করতেন। বিমানবন্দরের সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের বুথে দায়িত্ব পালনকারী ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে এভিয়া মানি চেঞ্জারের মো. আসাদুল হোসেন এবং ইম্পেরিয়াল মানি এক্সচেঞ্জ কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এম কবির আহমেদের সরাসরি লেনদেন হতো। তারা পরস্পর যোগসাজশে বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচা সংক্রান্ত বিষয়গুলো ব্যাংকের মূল রেজিস্টারে সংরক্ষণ করতেন না। ভাউচার ও এনক্যাশমেন্ট স্লিপ সই ছাড়াই কাস্টমারকে দিতেন। অবৈধভাবে ফরেন কারেন্সি লেনদেনের বিষয়ে তাদের পরস্পর অডিও-বার্তাও সংগ্রহ করেন দুদক কর্মকর্তারা। ফরেন কারেন্সি কেনাবেচার ক্ষেত্রে এনক্যাশমেন্ট স্লিপ দেওয়া বাধ্যতামূলক হলেও বেশিরভাগ লেনদেনেই বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা ও ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট ভঙ্গ করেছেন মুদ্রা পাচারের সঙ্গে জড়িতরা।

দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের কর্মকর্তারা জানান, সাধারণত প্রতিদিন হাজার হাজার প্রবাসী কর্মী ও বিদেশগামী যাত্রীরা বিমানবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে আসেন। তারা বিদেশী মুদ্রা বিমানবন্দরের ব্যাংক বুথ এবং মানি এক্সচেঞ্জারগুলিতে স্থানীয় মুদ্রায় বা বাংলাদেশি টাকায় নগদকরণ করে। আইন, বিধি ও প্রবিধান অনুযায়ী – বিদেশী মুদ্রা নগদকরণ ভাউচার এনক্যাশারকে প্রদান করতে হয়। কিন্তু ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জাররা ভাউচার বা জাল ভাউচার না দিয়ে সরাসরি বৈদেশিক মুদ্রা গ্রহণ করে এবং বিনিময়ে টাকা দেয়। তারা স্বাক্ষরবিহীন, জাল ভাউচার বা এনক্যাশমেন্ট স্লিপও ইস্যু করত। এই বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়কারী ব্যাংক এবং মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলি প্রধান হিসাবে প্রতিষ্ঠানের অনুমোদিত অ্যাকাউন্টে অন্তর্ভুক্ত করে না। ফলস্বরূপ, এই বৈদেশিক মুদ্রা কেন্দ্রীয় রিজার্ভ যোগ করা হয় না এতে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি বা সংকট দেখা দেয়। সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ছাড়াও পূবালী, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, যমুনা ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসায় জড়িত থাকার তথ্য রয়েছে। তারা সেগুলো খতিয়ে দেখছে। দুদকের গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, এসব দুর্নীতিবাজ ব্যাংক কর্মকর্তাদের কারণে প্রতিদিন প্রায় একশ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ব্যাংকিং খাত।

এ প্রসঙ্গে বুধবার (২৭ মার্চ) দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন গনমাধ্যমকে বলেন, তদন্ত শেষে মুদ্রা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। সন্দেহভাজন ব্যক্তি এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তারাও দুদকের গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন। এ বিষয়ে কমিশন আইন ও বিধি মোতাবেক পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

About Nasimul Islam

Check Also

আজ (১৬ মে) সর্বোচ্চ যত টাকায় বিক্রি হচ্ছে মার্কিন ডলার সহ অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রা

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে। তাই ব্যবসায়িক লেনদেন সচল রাখতে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *