Monday , May 6 2024
Breaking News
Home / Countrywide / কত সাহায্য চাওয়া যায়? আমাকে এখন দেহ ব্যবসা করার কথাও বলে

কত সাহায্য চাওয়া যায়? আমাকে এখন দেহ ব্যবসা করার কথাও বলে

রানা প্লাজা ধসে শীলা বেগম গুরুতর আহত হন এবং তার পরিপাকতন্ত্র বিকল হয়ে যায়। এখনও পেটে-পিঠে বেল্ট পরে চলতে হয়ে তাকে। সময়ের সাথে সাথে আরো রোগ বাসা বাঁধে শরীরে। অর্থাভাবে চিকিৎসাও করাতে পারছেন না। পাচ্ছেন না বিচারও। নিজের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে তিনি বলেন, আমরা জানি একটা মানুষের অঙ্গহানী হলে কেমন লাগে। আমি এখনও কোনও কাজ করতে পারি না। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারি না। পেটে টিউমার হয়েছে, অপারেশন না করালে এটা ক্যান্সার হয়ে যাবে বলেছে ডাক্তার। কিন্তু টাকার অভাবে অপারেশন করতে পারছি না। মানুষের কাছে কত সাহায্য চাওয়া যায়? অনেকে আমাকে এমনও বলে যেন আমি দেহ ব্যবসা শুরু করি। এই লজ্জা কই রাখবো?

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাব তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) আয়োজিত ‘রানা প্লাজা ভবন ধসে: বিচারের জন্য ১১ বছর অপেক্ষা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় রানা প্লাজায় আহত শিলা বেগম তার অবস্থা তুলে ধরেন।

শিলার মতো আরও কয়েকজন ভুক্তভোগী সেখানে তাদের কষ্টের কথা বলেছেন। এমনই একজন নিলুফা বেগম। তিনি বলেন, ২৪ এপ্রিল আসলে আমাদের খবর নেওয়া হয়। এছাড়া খবর থাকে না। আমি আমার পা হারিয়েছি। আমি জানি আমার মতো যারা আছে তাদের কী অবস্থা। আমি আমার ছেলেকে পড়াশোনা করাতে পারি নাই। এখন আমার পায়ের যে অবস্থা দেশে এটার আর কোনও চিকিৎসা নাই।

বিচার দাবি করে নিলুফা বলেন, আজ ১১ বছর পার হয়ে গেলেও আমরা কোনো বিচার পাইনি। আমরা এর বিচার চাই, আমরা মালিকদের বিচার চাই। আর আমরা চাই রানা প্লাজা যেখানে ছিল সেখানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হোক। যাতে আমরা সেখানে যারা মারা গিয়েছিলো তাদের স্মরণ করতে পারি।

অপর ভুক্তভোগী মিনু বেগম বলেন, রানা প্লাজার ঘটনায় আমার মাথায় আঘাত লাগে। এখন আমি কিছু মনে রাখতে পারি না। আমি এখন কী বললাম সেটা একটু পরে মনে করতে পারি না। আমার মাথায় রক্ত জমাট বেঁধে আছে। মানসিক হাসপাতালে আমার চিকিৎসা চলছে। শুধু এটুকু বলতে চাই, আমরা কারও দয়া বা ভিক্ষা নিয়ে বাঁচতে চাই না।

মতবিনিময় সভায় রানা প্লাজার বিচার নিয়ে বক্তব্য রাখেন অতিথিরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার অনিক আর হক বলেন, হাইকোর্ট বিভাগে চারটি রিট মামলা রয়েছে, যার কোনোটিরই গত বছরের আগে শুনানি হয়নি। এদিকে খুব শিগগিরই এসব রিটের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট থেকে নির্দেশনা পাব বলে আশা করছি। আমরা আশা করছি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এসব মামলার নিষ্পত্তি হবে। তবে নজির হিসেবে এটি একটি শক্তিশালী রায় হবে কিনা তা বলতে পারছি না।

রানা প্লাজা মামলায় এত বিলম্বের কারণ ব্যাখ্যা করে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর বিমল সমাদ্দার বলেন, ২০১৩ সালের ২৫ এপ্রিল মামলা দায়েরের সময় ২০৩ শ্রমিক নিহত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। ২০১৬ সালে মামলার চার্জশিট হওয়ার পর ২০১৭ সালে মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু মামলার চার্জ গঠনের পর হাইকোর্ট আসামির আবেদন আমলে নিয়ে স্থগিতাদেশ দেন। তাই হাইকোর্ট যেখানে স্থগিতাদেশ দেয় সেখানে আমাদের ট্রায়াল কোর্টের কিছু করার নেই।

বিমল সমাদ্দার জানান, ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ফৌজদারি মামলার সাক্ষী ৫৯৪ জন, যারা দেশের বিভিন্ন স্থানে বসবাস করছেন। তাদের আদালতে হাজির করা বড় বাধা। তাদের আসা-যাওয়ার ভাড়াও নেই। রাষ্ট্রীয় আইনজীবীদের জন্য তাদের আদালতের জন্য ভ্রমণ ভাতার ব্যবস্থা করা কঠিন।

এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল বলেন, ঢাকা জজ কোর্টের মামলার ৫৯৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণের প্রতিবন্ধকতা নিরসন করার জন্য শুধু গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেও মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব।

আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্য রাখেন ব্লাস্টের আইন উপদেষ্টা এস এম রেজাউল করিম। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সকল শ্রমিক সংগঠন ও সুশীল সমাজের সংগঠনের সহযোগিতায় এক শতাব্দী পূর্ণ হওয়ার আগেই রানা প্লাজার মামলা নিষ্পত্তি হবে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ সভা সঞ্চালনা করেন।

About Nasimul Islam

Check Also

বুশরা আর নেই

বগুড়ায় একটি আবাসিক বাড়িতে বিস্ফোরণে আহত তাসনিম বুশরা (১৪) নামে এক স্কুলছাত্রী ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *