ব্যাংক একীভূত হওয়ার খবরে আমানত উত্তোলন বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি চাপে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক। গ্রাহকরা বলছেন, সঞ্চয় হারানোর ভয়ে তারা আমানতের টাকা তুলে নিচ্ছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি ছাড়াই একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শুরু করায় এমন অবস্থা।
২০০৭ সাল থেকে ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জানে আলম বেসিক ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখায় একটি অ্যাকাউন্ট খোলেন। আমানতের পাশাপাশি ব্যাংকে ঋণও রয়েছে। বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংকের সাথে বেসিকের সম্প্রতি একীভূত হওয়া নিয়ে তিনি শঙ্কিত। জমার টাকা তুলতে এসেছেন।
মোহাম্মদ জানে আলম বলেন, সরকারি ব্যাংকে যখন জনগণের আমানত থাকে তখন গ্রাহকদের একটি আশ্বাস থাকে যে এই ব্যাংকের কিছু হলে সরকার বিষয়টি দেখবে। আর প্রাইভেট ব্যাংকের প্রতি মানুষের তেমন আস্থা নাও থাকতে পারে। এ কারণে আমরা একটু ভয় পাই।
ব্যাংকটির এক সময়ের গ্রাহক প্রকৌশলী ইলিয়াস আলীরও আমানত হারানোর আশঙ্কা একই রকম। অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানও আমানত তুলতে চায়।
প্রকৌশলী ইলিয়াস আলী বলেন, যত দ্রুত সম্ভব একীভূতকরণ করা হলে এবং এর ব্যবস্থাপনা পরিষ্কার করা হলে আমার মতো অন্যান্য গ্রাহকরা উপকৃত হবেন। এবং বিভ্রান্তি দূর হবে।
একীভূত হওয়ার খবরে বেসিক ব্যাংকের গ্রাহকরা সম্প্রতি ২০০০ কোটি টাকার বেশি তুলে নিয়েছেন। একীভূত হওয়া ব্যাংকসহ পুরো ব্যাংকিং খাত আমানত তুলে নেওয়ার চাপে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র এক শতাংশ। একীভূতকরণে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পূর্ণ প্রস্তুতি না থাকায় এ অবস্থা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালহেউদ্দিন আহমেদ বলেন, কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষকে যথেষ্ট প্রস্তুতি নিতে হবে। গাইড লাইন ঠিক করতে হবে।
বাংলাদেশে এখন যা হচ্ছে তা হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে নির্দেশনা দিয়েছে তা স্বয়ংসম্পূর্ণ না।
পিআরআই নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, নিরাপত্তা দিতে হবে। তা না হলে বেসিক ব্যাংক বা পদ্মা ব্যাংকে টাকা রাখব কেন? সরকার যদি প্রজ্ঞাপনে বলত বা এখনও যদি বলে যে আমানত নিয়ে কোনো ভয় নেই, তাহলে গ্রাহকের আমানতের ক্ষতি হবে না কিন্তু কোনো ভয় থাকত না।
এদিকে, আমানত উত্তোলনের চাপ ব্যাংকের নগদ অর্থের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি ব্যাংকিং খাতেও ঋণের হার বেড়েছে।