এটা আমার লাস্ট বিসিএস ছিল; রাস্তায় মাথা ঠুকতে ঠুকতে ফাহাদ

সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরু হয়। প্রার্থীদের আধা ঘণ্টা আগে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। ৯টা ৪০ মিনিটে কেন্দ্রের সামনে আসেন ফাহাদ ফয়সাল। তাই তাকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

ফাহাদের বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন চুরমার হয়ে যায়। এই কষ্টে তিনি কেন্দ্রের সামনেই চিৎকার করে কেঁদেছেন। রাস্তায় মাথা ঠুকরে গড়াগড়ি খেয়েছেন।

শুক্রবার সকালে ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সময় রাজশাহীর মসজিদ মিশন একাডেমি কেন্দ্রে এমন ঘটনা ঘটে।

ফাহাদ ফয়সালের বাড়ি নওগাঁ। তিনি যখন কেন্দ্রের সামনে আসেন তখন ৯টা ৪০ মিনিট। ইতোমধ্যে পরীক্ষা কেন্দ্রের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফাহাদ এসে পুলিশকে অনুরোধ করেন তাকে ভেতরে ঢোকানোর জন্য। কিন্তু পুলিশ রাজি হয়নি।

পরে ফাহাদ প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করেন। পরে পুলিশ তাকে ভেতর থেকে বের করে আনে।পরীক্ষায় বসতে না পেরে ফাহাদ রাস্তায় মাথা ঠুকতে থাকেন। আহাজারি শুরু করেন। রাস্তায় গড়াগড়ি খান। এ সময় রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পরে ফাহাদ সেখান থেকে চলে যান। পরে আর তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সকালে, মসজিদ মিশন একাডেমির সামনে, ফাহাদকে সকাল ৯টা ৪২ মিনিটে প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করতে দেখা যায়। ভেতরে যাওয়ার পর দুই পুলিশ সদস্য তাকে ধরে ফেলে। এ সময় গেটের বাইরে থেকে একজন মহিলা চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘প্লিজ আমাকে ঢুকতে দাও’। পুলিশ ফাহাদকে বের করে দেওয়ার পর সে চিৎকার শুরু করে। তিনি আরও বলেন, এটা ছিল আমার শেষ বিসিএস। আমাকে মেরে ফেলেন ভাই।’

একপর্যায়ে তিনি রাস্তায় হাত আর মাথা ঠুকতে থাকেন। ফাহাদ বলতে থাকেন, ‘আমি মরে যাব। আমি মরে যাব। আমার লাস্ট বিসিএস ছিল এটা।’ পরে এক ব্যক্তি ফাহাদকে ভেতরে ঢোকানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু পুলিশের বাধায় ব্যর্থ হন। কেন্দ্রের সামনে থাকা অনেক অভিভাবক বলতে থাকেন, পরীক্ষা তো এখনও শুরু হয়নি। ছেলেটাকে ঢুকতে দেওয়া উচিত ছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নুর আহমেদ মাছুম বলেন, কয়েকদিন আগে আমাদের চেয়ারম্যান সব কেন্দ্রীয় সচিবের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। তিনি নির্দেশ দেন পরীক্ষা শুরুর আধঘণ্টা আগে কেউ কেন্দ্রে প্রবেশ না করলে তাকে যেন আর ঢুকতে দেওয়া না হয়। এই নির্দেশনায় বাস্তবায়ন করা হয়েছে। পরীক্ষার্থীরই আরও আগে আসা উচিত ছিল।’

রাজশাহী মহানগরীর ২৯টি কেন্দ্রে বিভাগের আট জেলার ৩১ হাজার ৯৪৭ জন পরীক্ষার্থী ছিলেন। এর মধ্যে পরীক্ষা দিয়েছেন ২৪ হাজার ১১৮ জন। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। শাহমখদুম কলেজ কেন্দ্র থেকে মাত্র একজন পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অন্য কোনো কেন্দ্রে অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।